নয়াদিল্লি: বহু বিতর্ক আর জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তাঁকে মনোনীত করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে একথা জানানো হয়েছে। রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য প্রবীণ আইনজীবী কেটিএস তুলসির অবসরের পরে কাউন্সিল অব স্টেটস-এর একটি পদ ফাঁকা হয়ে যায়।
ভারতীয় সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ভারতের রাষ্ট্রপতি ১২ রাজ্যসভার মোট ২৫০জন সদস্যের মধ্যে ১২ জনকে মনোনীত করতে পারেন। গগৈ ভারতের ৪৬ তম প্রধান বিচারপতি ছিলেন ৩ অক্টোবর,২০১৮ থেকে ১৭ নভেম্বর,২০১৯ পর্যন্ত প্রায় ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতির পদে থাকাকালীন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ঘোষণা করেন গগৈ। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা।
তাবে তাঁর ক্ষমতা কেবল বিচার বিভাগীয় বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে, তিনি ইংরেজি এবং হিন্দি সহ সাতটি ভাষায় শীর্ষ আদালতের রায় প্রদানের আদেশও পাস করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মাত্র এক বছর আগে ২০১৯- এর এই মার্চেই গগৈ বলেছিলেন “অবসরের পরে সরকারি পদে নিয়োগ বিচারবিভাগের স্বাধীনতার গায়ে ক্ষত”। এখন নিজের কথা থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর তাঁর এই সিদ্ধান্তকে মোটেই ভালো চোখে দেখছেনা বিরোধী শিবির। এখন তো তাঁরই ভাষায় তাঁর সমালোচনা করে বিরোধী শিবিরের আইনজীবীরা বলছেন- এর ফলে দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা খর্ব হবে।
তবে এই তো প্রথম নয়। এর আগেও সুপ্রিম কোর্টের ২১ তম প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র উড়িষ্যা থেকে কংগ্রেসের তরফে রাজ্যসভার সদস্য পদে যোগ দিয়েছিলেন। গগৈয়ের এই নবরূপে প্রত্যবর্তনের সমালোচনার জবাব দিতে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই মূলত সেই বিষয়টির ওপরেই আপাতত আলোকপাত করতে চাইছে পদ্ম শিবির। ঠিক যেভাবে নাগরিকত্ব আইন, কাশ্মীর ইস্যুতে কংগ্রেসের অতীতের সিদ্ধান্তের কথা বার বার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছে তাঁরা। অর্থাৎ তাঁদের কোনো ভুল ধরতে গেলে অজুহাত একটাই, যে তাদের আগেও এইধরণের পদক্ষেপ কেউ নিয়েছিল। ওরা ভুল করেছিল বলে, আমাদেরও সেই ভুল করার অধিকার অবশ্যই আছে- এই মতাদর্শই এখন প্রকট হয়ে উঠেছে দেশের শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে।
তবে রঞ্জন গগৈয়ের রাজ্যসভার সদস্য পদে মনোনীত হওয়ার বিষয়টিকে মোদি সরকারের হয়ে কাজ করার উপহার বলে সরাসরি উল্লেখ করছেন বিরোধী শিবিরের নেতামন্ত্রীদের একাংশ। কংগ্রেসের রনদীপ সিং সুরজেওয়ালা, কপিল সিব্বল, এআইএমআইএম এর আসাউদ্দিন ওয়াইসি, তৃনমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, সহ বহু অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও গগৈয়ের এইধরণের প্রত্যাবর্তন নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তুলেছেন। একের পর এক রাজ্যের ভরাডুবির পর রাজ্যসভায় মোদির পছন্দের এক সদস্যের মনোনয়ন আগামী দিনে দলের কর্মপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যে বিশেষ সুবিধাজনক হয়ে উঠবে এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।