নেপালের পার্বত্য এলাকার দুঃসাহসিক যোদ্ধা… যুদ্ধই তাঁদের পেশা। বছরের পর বছর ধরে নিজস্ব প্রাচীন পন্থায় যুদ্ধ করে আসছেন গোর্খারা। শুধু নেপাল নয়, অন্য দেশে যুদ্ধের জন্যও গোর্খাদের ডাক পড়ে। নির্ভীক সেই গোর্খারাই এবার নাম লেখাচ্ছেন রুশ বাহিনীতে। পুতিনের হয়ে হাতে তুলে নিচ্ছেন অস্ত্র। ওয়াগনার গোষ্ঠীর আচমকা বিদ্রোহ ঘুম ছুটিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। ইউক্রেনের যুদ্ধে এরপর আর ওয়াগনার গোষ্ঠীকে পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। বিভিন্ন রুশ মিডিয়ার সূত্র বলছে, গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা যুদ্ধে পুতিন বাহিনীর হাল অনেকটাই খারাপ। এমন পরিস্থিতিতে ‘কূল’ প্রমাণে মরিয়া পুতিনের কাছে তুরুপের তাস হয়ে উঠেছে গোর্খারা।
নেপালি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, রুশ সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে শ’য়ে শ’য়ে গোর্খা তরুণ নেপাল ছাড়ছে। যদিও বিদেশি আর্মিতে গোর্খাদের নিয়োগ নতুন ঘটনা নয়। অতীতে নির্ভীক গোর্খারা একাধিক দেশের হয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে।
১৮১৫ সাল থেকে ব্রিটিশ আর্মিতে ছিল গোর্খা জওয়ান।
ভারতীয় সেনাবাহিনিতেও রয়েছে গোর্খা রেজিমেন্ট।
ফ্রেঞ্চ আর্মিরও বেশ পছন্দের দুর্ধর্ষ গোর্খা জওয়ানরা।
সেই তালিকাতেই এবার যোগ হল রাশিয়ার নাম। কিন্তু, কীসের টানে যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাশিয়ার বাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন দলে দলে গোর্খা তরুণ? রহস্য লুকিয়ে আছে পুতিনের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তি। গত ১৬ মে জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনও বিদেশি তরুণ এক বছর ধরে যুদ্ধ করলেই পাবেন সপরিবারে রাশিয়ায় থাকার সুযোগ। তাঁকে স্থানীয় নাগরিকত্বও দেওয়া হবে। সঙ্গে থাকছে মোটা অঙ্কের বেতনের হাতছানিও।
সূত্রের খবর, বিপুল টাকা ও রাশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার লোভেই বহু নেপালি যুবক গত কয়েক মাস ধরে রুশ সেনায় যোগ দিয়েছেন। যদিও নেপাল সরকারের দাবি, রাশিয়ার সঙ্গে এবিষয়ে তাদের কোনও চুক্তি হয়নি। তরুণরা নিজেরাই যোগাযোগ করে রাশিয়ামুখী হয়েছেন। ইতিমধ্যেই সমাজ মাধ্যমে গোর্খাদের ট্রেনিংয়ের ছবি, ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও সেই ছবি বা ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি আজ বিকেল।
রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে নেপালে মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বয়স ৩০ এর নীচে। আপাতত এদের একটা বড় অংশেরই গন্তব্য রাশিয়া। এতদিন পর্যন্ত রুশ বাহিনীতে রুশ ভাষা বাধ্যতামূলক থাকলেও এখন সেই নিয়ম নেই। ফলে অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। কিন্তু, প্রতিবেশী ভারত ছেড়ে কেন রাশিয়ার দিকে ছুটছে গোর্খারা? রয়েছে কারণ…
একটা সময় পর্যন্ত বছরে ১৩০০ মতো জওয়ান নিয়োগ করা হত ভারতীয় সেনায়। নেপাল আর্মির থেকে আড়াই গুণ বেশি বেতন, পেনশনের সুবিধা ছিল। কিন্তু, ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্পে সেই সুবিধা ভেস্তে গেছে বলেই দাবি। মাত্র ৪ বছরের জন্য চাকরি নয়, আজীবন সুরক্ষিত থাকতে তাই রাশিয়ার ‘টোপ’ অনেক বেশি লোভনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গোর্খা তরুণদের কাছে। ফলে, সহজেই দলে দলে তরুণ গোর্খা রুশ ফৌজে নাম লেখাচ্ছেন বলে খবর।