গঙ্গাসাগর মেলায় রাশ টানুক হাইকোর্ট, ফের দায়ের জনস্বার্থ মামলা

গঙ্গাসাগর মেলায় রাশ টানুক হাইকোর্ট, ফের দায়ের জনস্বার্থ মামলা

কলকাতা: শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। প্রতিবছর পুণ্য স্নানের জন্য ভিড় জমান লাখ লাখ মানুষ। গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, যদিও সূচি ঘোষণা না হলেও সূত্রের খবর এবছর মুখ্যমন্ত্রী যাচ্ছেন না মেলায়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা গঙ্গাসাগর চত্বরকে কন্টেইনমেন্ট জোন ঘোষণার দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা৷ উৎসবে সংক্রমণ রুখতে হাইকোর্ট ঠিক যেভাবে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোয় গাইডলাইন জারি করেছিল, ঠিক তেমন গঙ্গাসাগর মেলার ক্ষেত্রেও জারি হোক একই বিধি, আর্জি জানিয়ে দায়ের হয়েছে মামলা৷ 

করোনার এই অতিমারীর সময়ে প্রায় সব ধর্মীয় উৎসব যেখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়, সেই সব উৎসবই জনস্বার্থে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। নতুন বছরে গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হতে চললেও এই মেলায় সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ, সাধু সন্ন্যাসীরা ভিড় জমান। কিন্তু যখন করোনার নতুন স্ট্রেন ভারতে ঢুকে পড়েছে, সেই অবস্থায় এই মেলায় জনসমাগম কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন সমাজকর্মী অজয় দে। এই মামলার ভিত্তিতেই আগামীকাল শুনানি হওয়ার কথা কলকাতা হাইকোর্টে৷

মেলার মাঠকে কন্টেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করার আর্জি জানিয়েছেন ওই সমাজকর্মী। এর আগে দুর্গাপুজো বা মহরম সব ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়েছিল কোর্ট। পুজোয় মণ্ডপ চত্ত্বরকে কন্টেইনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করা হয়। দর্শনার্থীরা সেই গাইডলাইন মেনে পুজো কাটিয়েছেন, ফলে সংক্রমনের হার কিছু হলেও কমানো গিয়েছে। এবার গঙ্গাসাগর মেলাকে নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল হাইকোর্টে। মঙ্গলবার হাইকোর্ট কী রায় দেয় এবং কোনও রকম গাইডলাইন তৈরি করে দেয় কিনা সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন ধর্মপ্রাণ বহু মানুষ৷

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, মেলায় ঢোকার দশটি পয়েন্টে দিনরাত থাকবে করোনা রাপিড টেস্টের ব্যবস্থা। প্রত্যেক পয়েন্টে থাকবে কোভিড ম্যানেজমেন্ট টাস্কফোর্স। খোলা হয়েছে ১১টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও ৮টি সেফ হোম। কোয়ারান্টাইন সেন্টারে থাকছে ৬৪৫টি এবং সেফ হোমে থাকছে ৬১৫ টি বেড। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য থাকছে ৩৮টি বুথ। সেখানে মোট বেড থাকছে ৬৫৮টি। গতবারের তুলনায় এবার চিকিৎসকের সংখ্যা দ্বিগুণ ও নার্সের সংখ্যা তিনগুণ বেশি করা হয়েছে। মেলার অস্থায়ী হাসপাতাল থেকে কোনও রোগীকে বদলি করার প্রয়োজন হলে তাদের কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি, ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এম আর বাঙ্গুর ও বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মৃতদেহ সৎকারের জন্য ৬টি করে কবরস্থান ও চুল্লির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবারের সাগর মেলার মাঠ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য সাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ থেকে ২৫০ জন পুরুষ ও মহিলা ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। মেলা শুরুর আগে থেকেই সেই কাজ শুরু করে দিয়েছেে সাফাই কর্মীরা। আবর্জনা সাফাইয়ের জন্য থাকছে ২৮টি ই-রিক্সা। আবর্জনা রাখার জন্য থাকবে ২ হাজারের বেশি ভ্যাট। মজুত আবর্জনার জন্য ২ টি অস্থায়ী কঠিন তরল বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে৷

জেলাশাসক পি উলগানাথন জানিয়েছেন, এবারের মেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দূরত্ব বিধির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী হাসপাতাল, রাপিড টেস্টের ব্যবস্থা থাকছে। এবারের মেলায় বেশি সংখ্যক চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে। শেষ মুহূর্তে সমস্ত বিষয়টি তদারকি করছেন সাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। তিনি জানান, সাগর মেলার আজ যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে তার সমস্ত কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি এই মেলাকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন৷ তবে, এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সাগর মেলায় যাওয়ার কোনও সূচি ঘোষণা হয়নি৷ এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, তাতে এবার সাগরে যাচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 1 =