দেশজুড়ে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, ‘জিনপিং ইস্তফা দিন’, স্লোগান শাংহাইয়ে! শি-র কোভিড নীতিতে বিরক্ত মানুষ

দেশজুড়ে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, ‘জিনপিং ইস্তফা দিন’, স্লোগান শাংহাইয়ে! শি-র কোভিড নীতিতে বিরক্ত মানুষ

বেজিং:  করোনার বিরুদ্ধে দেশে জিরো কোভিড পলিসি বা ‘কোভিড-শূন্য নীতি’ নিয়েছে চিনের শি জিনপিং সরকার। কমিউনিস্ট সরকারের এই নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে সে দেশের জনগণ। দলে দলে পথে নেমেছে সে দেশের মানুষ৷ বিক্ষোভের আঁচে পুড়ছে গোটা দেশ৷ এমন সরকার বিরোধিতা, এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের দৃশ্য চিনের ইতিহাসে সত্যিই বিরল। 

আরও পড়ুন- বিশ্বের সবচেয়ে সরু বহুতলের নির্মাণ কাজ শেষ, রয়েছে চোখ ধাঁধানো ব্যবস্থা

কোভিড সংক্রমণ রুখতে বারবার লকডাউন, দীর্ঘ নিভৃতবাস এবং গণ পরীক্ষার চাপে ক্লান্ত-অবসন্ন চিনা নাগরিক৷ এর হাত থেকে পরিত্রাণ চাইছেন তাঁরা৷ এদিকে নতুন করে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিনের বিভিন্ন এলাকায় কড়া ভাবে লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। দিনের পর দিন ধর বন্দি থাকতে থাকতে তাঁরা অতিষ্ট৷ রবিবার রাজধানী শহর বেজিং এবং শাংহাইয়ের পথে নামে শ’য়ে শ’য়ে চিনা নাগরিক। জিনপিং সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা।

জনরোষ জমতে শুরু করেছিল গত বৃহস্পতিবার থেকে৷ শিনজিয়াং প্রদেশের রাজধানী উরুমকিতে এক মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড সরকার বিরোধী এই বিক্ষোভে ঘৃতাহুতি দেয়৷ আগুন লাগার পর উদ্ধারকার্য ব্যাহত হওয়ার জন্য লকডাউন নীতিকেই দায়ী করেন সেখানকার মানুষ। যদিও সরকার সেই অভিযোগ মানতে নারাজ৷ 

রবিবার রাতে রাজধানী বেজিংয়ে একটি নদীর পাড়ে প্রায় ৪০০ মানুষ জমায়েত করে৷ সেখানে কয়েক ঘন্টা ধরে তাঁরা সরকার বিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, উত্তেজিত জনগণ নিজেদের শিনজিয়াংবাসী বলে দাবি করেন৷ বিক্ষোভস্থানের দূরেই অপেক্ষা করছিল জিনপিং-এর পুলিশ৷ 

বিক্ষোভের এই ছবি দেখা গিয়েছে চিনের উহান প্রদেশেও। যদিও সেখানকার বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিয়ো চিনের কমিউনিস্ট সরকার  সেন্সর করেছে। এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাংহাই শহরের কেন্দ্রস্থলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। প্রতিবাদীরা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং চিনা কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তফা দাবি করে তাঁদের স্লোগান ‘শি জিনপিং, ইস্তফা দাও’৷ শনিবার গভীর রাতেই শাংহাইয়ের রাস্তায় জড়ো হয়েছিলেন দলে দলে বিক্ষোভকারীরা। রবিবার সকালে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। বেলা বাড়লে ফের পথে নামেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ।

সকাল বেলা উরুমকি থেকেও বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ৷ বিকেলে ওই একই স্থানে চলে নীরব প্রতিবাদ৷ তবে  প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, যাঁরা বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের তন্নতন্ন করে খুঁজছে চিনা পুলিশ। গুয়াংজু এবং চেংডু শহর থেকেও বিক্ষোভের একই ছবি দেখা গিয়েছে।

শুধু সাধরণ মানুষের পথে নেমে বিক্ষোভ নয়৷ চিনা কোভিজ নীতির প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও। রবিবার বেজিংয়ের অভিজাত সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন কয়েকশো ছাত্রছাত্রী। এদিন স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ পড়ুয়ারা ক্যান্টিনের দরজায় দরজায় সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। তাঁদের স্লোগান, ‘‘লকডাউন নয়, আমরা স্বাধীনতা চাই’’। 

সরকারের বিরুদ্ধে চিনা নাগরিকদের এহেন  স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ জিনপিং সরকারকে কি প্রচ্ছন্নে বার্তা দিচ্ছে? টানা তিন বার ক্ষমতায় এসে সদ্যই মাও জে দংয়ের রেকর্ড ছুঁয়েছেন জিনপিং। এর ক’দিনের মধ্যেই দেশ জুড়ে জনরোষের জোয়ার৷ যা চিনের বাস্তবিক ছবির নিরিখে বড়সড় অঘটন।