বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য চাপ, অত্যাচারের অভিযোগ! রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর বিরুদ্ধে তিলজলা থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন তার স্ত্রী স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী। গত ২৮ শে মে আইনের ছাত্রী স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরীর সঙ্গে আইনী মতে বিয়ে সারেন রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক পেশায় চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারী। দুই পরিবারের উপস্থিতিতেই রেজিস্ট্রি হয় তাদের।
স্ত্রী স্বস্তিকার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি বিধায়ক। এমনকি বিয়ের কথা যাতে প্রকাশ্যে না আনেন সেজন্য তার উপর চাপ দেওয়া হয় রীতিমত। পরিবার সূত্রে খবর, বাবার মৃত্যুর পর পিকনিক গার্ডেনের বাড়িতে মায়ের সঙ্গেই থাকেন স্বস্তিকা। গত ২৮ মে ওই বাড়িতেই দুই পরিবারের উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রি হয় তাদের। বিধায়কের মা, বাবা, ভাই, দিদি, জামাইবাবু সকলে সেখানে উপস্থিত থেকে বিয়ে দেন তাদের।
আইনের ছাত্রী স্বস্তিকা পড়াশোনার সূত্রে কলকাতার বাইরে থাকেন। বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয় তাঁর। সম্পর্ককে চিরস্থায়ী করতে রেজিস্ট্রি বিয়ের জন্য ১৩ মার্চ অনলাইনে আবেদন করেন দুজনে। গত ২৮ মে তাদের রেজিস্ট্রিও সম্পন্ন হয়। স্বস্তিকার অভিযোগ, রেজিস্ট্রির পর থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বিধায়ক। এমনকি, বিয়ের ঘটনা যাতে প্রকাশ্যে না আসে তার জন্য স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরীকে বারংবার তিনি চাপ দিতে থাকেন। স্বস্তিকার দাবি, বিধায়ক তাঁকে স্ত্রীর পরিচয় দিতে নারাজ। যে কারণে, বিয়ের পরদিনই মিউচুয়াল ডিভোর্সের জন্য চাপ দিতে শুরু করে। এমনকি তাঁর থেকে ১ কোটি টাকা দাবি করা হয়। ডিভোর্সের দাবি জানিয়ে বিধায়ক তাঁকে মানসিকভাবে হেনস্থা করছেন বলেও অভিযোগ স্বস্তিকার।
সেই অভিযোগ নিয়েই তিলজলা থানার দ্বারস্থ হয়েছেন স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী। বিধায়কের পাশাপাশি তার বাবা ভূপাল অধিকারী এবং ভাই অনুপম অধিকারীর নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী সহ তাঁর বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, পণের জন্য চাপ দেওয়া, হুমকি সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। কিন্তু, রেজিস্ট্রির পর কেন আচমকা বেঁকে বসলেন বিধায়ক? স্ত্রী স্বস্তিকার কথায়, “২৯ মে জানতে পারি আমি ছাড়াও একাধিক মহিলার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক আছে মুকুটমণির। এমএলএ হস্টেলে থাকাকালীন বাইরে থেকে বিভিন্ন মহিলাদের এনে তিনি সময় কাটাতেন। তারা এখন ওকে আমার থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। তাই আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।“
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তাঁদের রেজিস্ট্রি বিয়ের বিভিন্ন নথি এবং ভিডিও। এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরেও বিধায়কের তরফে যদিও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলে নি। এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির। যদিও বিজেপি বিধায়ক মুকুটমনি অধিকারী প্রসঙ্গে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সংসার জগন্নাথ সরকারকে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। রেজিস্ট্রির পরেও রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক তার বিয়ে কেন অস্বীকার করছেন? তা এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। স্বস্তিকার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে তিলজলা থানার পুলিশ।