প্রণব-রাজনীতির প্রথম অধ্যায় লেখা হয়েছিল হাওড়ার এই বাড়িতে

হাওড়া জেলার কদমতলা অঞ্চলে প্রথমে শ্রীরূপা সিনেমার পাশের গলিতে এক পুরোনো বাড়িতে ওঠেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পরিবার। প্রণব বাবুর বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় কর্মসূত্রে সস্ত্রীক বীরভূমের কীর্ণাহার ছেড়ে এখানে চলে আসেন। এরপর ওই বাড়ি ছেড়ে কদমতলা বাজারের খুব কাছে আরেকটি বাড়িতে ভাড়া যান। এখানেই দীর্ঘ দিন বসবাস করেন তাঁরা।

 

সিদ্ধার্থ বোস: দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতিকে হারিয়েছেন ভারতবাসী। প্রয়াত হয়েছেন দেশের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি তথা বরেণ্য রাজনীতিক প্রণব মুখোপাধ্যায়। দিল্লিবাসী প্রণববাবুর রাজনীতি জীবনের শুরুটা হয়েছিল হাওড়া জেলা থেকে। বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন হাওড়ার কদমতলা অঞ্চলে। দীর্ঘ ৪৫ বছরের ‘আত্মীয়’ প্রণববাবুকে হারিয়ে সেই বাড়িতেও আজ শোকের ছায়া।

প্রণব বাবুর হাওড়ার ভাড়া বাড়ি

হাওড়া জেলার কদমতলা অঞ্চলে প্রথমে শ্রীরূপা সিনেমার পাশের গলিতে এক পুরোনো বাড়িতে ওঠে ছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পরিবার। প্রণববাবুর বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় কর্মসূত্রে সস্ত্রীক বীরভূমের কীর্ণাহার ছেড়ে এখানে চলে এসেছিলেন৷ এরপর ওই বাড়ি ছেড়ে কদমতলা বাজারের খুব কাছে আরেকটি বাড়িতে ভাড়া যান। এখানেই দীর্ঘ দিন বসবাস করেন তাঁরা। এরপর প্রণববাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য বীরভূম ছেড়ে হাওড়ায় এই বাড়িতেই বাবা-মা'য়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। সাংসদ হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি এখানেই ছিলেন। এখান থেকেই ইতিহাস ও পলিটিক্যাল সায়েন্সে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

হাওড়ার প্রথম ভাড়া বাড়ি

এই বাড়ির ছোট কন্যা কল্পনা বসু জানান, ভাড়া থাকলেও প্রণব বাবু ও তাঁর পরিবাররের সঙ্গে কোনও দিন ভাড়াটে-বাড়িওয়ালার সম্পর্ক ছিল না তাঁদের। বরং আত্মীয়তার বাঁধনে জড়িয়েছিলেন দুই পরিবার। কল্পনা দেবী'র কথায়, ‘‘প্রণব বাবুকে আমরা খুব কম পেয়েছিলাম৷ কিন্তু প্রণব-বাবুর স্ত্রী শুভ্রা দেবীকে আমরা বৌদি বলে সম্মোধন করতাম। নিজের বৌদির থেকেও অনেক বেশিকিছু ছিলেন তিনি। সব সময় সহায়তা করেছেন প্রণববাবু। ওঁদের দুই সন্তান আমাদের ঘরেই সর্বক্ষণ থাকত ছেলেবেলায়। খুব স্নেহ করতাম ওঁদের। এখনও যোগাযোগ আছে ওঁদের সঙ্গে।’’ তিনি আরও জানান, সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর প্রণববাবু এখান থেকে দিল্লি চলে যান। পরিবার এখানে থাকায় মাঝে মাঝেই আসা যাওয়া করতেন। এরপর পরিবারকে নিয়ে প্রণববাবু চলে যান কলকাতার বেলগাছিয়ায়।

হাওড়ায় থাকাকালীন প্রণববাবু বাঁকড়া অঞ্চলে বাঁকড়া ইসলামিয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ২ বছর এখানে চাকরি করেন তিনি। এরপর রাজনীতিতে পদার্পন করেন ধীরে ধীরে। বাড়ির প্রণব হয়ে ওঠেন বরেণ্য রাজনীতিক। ফলে দেখা সাক্ষাতের ক্ষেত্রে অনেক বাধা নিষেধ পেরোনো শুরু হয় এরপর থেকেই। তবুও আত্মীয়তায় কোনও খেদ পড়েনি কোনও দিন, এমনটাই জানান কল্পনা বসু। এরপর ভারাক্রান্ত মনে প্রণব বাবুর আত্মার শান্তি কামনা করে বাকরুদ্ধ হয়েছেন কল্পনা দেবী।

এই সেই ঘর

বাড়ির সদস্যা গৌড়ি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “কোনও দিন আত্ম-অহংকার ছিল না প্রণব বাবুর।” যে ঘরে প্রণব বাবুরা থাকতেন, বর্তমানে সেখানে বাস করেন গৌড়ি দেবী। তিনি বলেন, ‘‘যতদূর সম্ভব ১৯৭৬ সালে প্রণব বাবু এখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রণব বাবু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আমাদের নিকটতম আত্মীয়ের থেকেও অনেক বেশি কিছু ছিলেন। দিল্লিতে প্রণব বাবু তাঁর মেয়ের বিয়েতেও আমাদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন। যদিও আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিতি খুব বেশি ছিল না প্রণব বাবুর।’’ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে তিনিও গভীর ভাবে শোকাহত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × five =