নিজের কার্টুন জমাতে ভালবাসতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, রাষ্ট্রপতি ভবনে করেছিলেন প্রদর্শনী

কলকাতা: দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান। জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন দুঁদে রাজনীতিবিদ এবং ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাজনীতিকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন প্রণববাবু। প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি ছিল তাঁর দ্বিতীয় সত্তা। তবে পঙ্কিল রাজনীতির পথে কোনদিনই অগ্রসর হননি এই বাঙালি। বরং রাজনীতি ছিল তার ভালবাসার জায়গা। রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত হওয়ার পরও প্রতিদিনের রাজনীতির টানাপোড়েন মনে পড়ত তাঁর। সেকথা ঘনিষ্ঠমহলে বলেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রয়াণে সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতি হারাল এক নক্ষত্রকে। কার্যত ইন্দ্রপতন হল ভারতের রাজনীতি জগতে।

কলকাতা: দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান। জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন দুঁদে রাজনীতিবিদ এবং ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাজনীতিকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন প্রণববাবু। প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি ছিল তাঁর দ্বিতীয় সত্তা। তবে পঙ্কিল রাজনীতির পথে কোনদিনই অগ্রসর হননি এই বাঙালি। বরং রাজনীতি ছিল তার ভালবাসার জায়গা। রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত হওয়ার পরও প্রতিদিনের রাজনীতির টানাপোড়েন মনে পড়ত তাঁর। সেকথা ঘনিষ্ঠমহলে বলেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রয়াণে সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতি হারাল এক নক্ষত্রকে। কার্যত ইন্দ্রপতন হল ভারতের রাজনীতি জগতে।

বই পড়তে ভালোবাসতেন প্রণববাবু। দিনের অনেকটা সময় তাঁর কাটতো লাইব্রেরি ঘরে। এছাড়াও তাঁর আরও এক অদ্ভুত নেশা ছিল। নিজের কার্টুন জমাতেন তিনি। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিভিন্নভাবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কার্টুন প্রকাশিত হয়। সেগুলি কেটে কেটে জমিয়ে রাখতেন তিনি। তিনি যখন রাষ্ট্রপতি পদে আসীন, তখন সেই সব কার্টুন নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি প্রদর্শনীও হয়েছিল।

বীরভূমের বিরাটি গ্রামের ছেলে প্রণব মুখোপাধ্যায় কিন্তু রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর কেরিয়ার শুরু করেননি। প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকারের 'পেস্ট এন্ড টেলিগ্রাফ' বিভাগে কেরানি হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এরপর 'দেশের ডাক' নামে একটি পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। বিদ্যাসাগর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অধ্যাপনাও করেন তিনি। রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি ১৯৬৯ সালে। প্রণব মুখোপাধ্যায়কে এক নির্দল প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে ইন্দিরা গান্ধী নজর পড়ে। তিনি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কংগ্রেসের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেন। বলাই বাহুল্য সেই প্রস্তাব ফেরাননি বাংলার ছেলে। সেই বছরই জুলাই মাসে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ৪ বার রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত রাজ্যসভার কংগ্রেসের দলনেতা ছিলেন প্রণববাবু।

তাঁর রাজনীতির পথ চড়াই-উৎরাইয়ে ভরা। ১৯৭১ সালে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের অধিবেশনে প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের প্রতিনিধি। সেখানে পাক সেনার ভয়াবহতা তুলে ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন তিনি। বছর কয়েক পরে শাহ কমিশনের সাক্ষ্য দিতে না যাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ওই বছরই ইন্দিরা গান্ধী-সহ কয়েকজন কংগ্রেস নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই খবর পৌঁছেছিল প্রণববাবুর কানেও। কয়েকটি প্রিয় বই, জামাকাপড় আর তামাক নিয়ে তিনি গ্রেপ্তারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি সিবিআই।

তিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীনই বিশ্ব অর্থভাণ্ডারের ভারত তার দেনা শোধ করতে পেরেছিল। রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর পদে মনমোহন সিংহের নিয়োগপত্র তিনিই সই করেছিলেন। নরসিংহ রাওয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এছাড়া বহুবার তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০৪ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর মনে করা হয়েছিল সোনিয়া গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু তিনি দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করার পর উঠতে থাকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্ব পাননি প্রণববাবু। ২০১২ সালে দেশের সর্বোচ্চ পদে অভিষিক্ত হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। দেশ পায় তার প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতিকে। আজ তাঁর প্রয়াণের পর ভারতীয় রাজনীতির এক যুগের অবসান হল। দেশ হারাল রাজনীতির চাণক্যকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *