বাবা টোটো চালক, মেধাবী কন্যার চিকিৎসক হওয়ার পথে বাধা দারিদ্র

কলকাতা: এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চাঁদপাড়া অঞ্চলের বাসিন্দা লাবণ্য রায়। তার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার, কিন্তু সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভাবী সংসারের দারিদ্র।

 

কলকাতা:  নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার৷ ৬ জনের পরিবারে অভাব নিত্য সঙ্গী৷ দীর্ঘ লকডাউন পরিস্থিতি অসহনীয় করে তুলেছে৷ কিন্তু, নিত্য অনটন প্রভাব ফেলেনি শিক্ষায়৷ ফেলতেও দেননি৷ রাত-দিন এক করে মেয়েকে পড়িয়েছেন৷ বাবার কঠোর পরিশ্রমের মূল্যেও দিয়েছে বছর ১৮-র সদ্য তরুণী৷  এবারে উচ্চমাধ্যমিকে ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চাঁদপাড়া অঞ্চলের বাসিন্দা লাবণ্য রায়৷ তাঁর স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার৷ কিন্তু সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভাবী সংসারের দারিদ্র৷

আরও পড়ুন- UGC-র সুপ্রিম মামলায় আরও অনিশ্চিত চূড়ান্ত বর্ষের ফলপ্রকাশ​​​

লাবণ্য'র বাবা শিবপদ রায়ে'র শাড়ির দোকান। কিন্তু ব্যাবসায় মন্দা চলতে শুরু করায়, হাতে করে শাড়ি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তা বিক্রি করতেন৷ কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান ঘটেছে না৷ বর্তমানে ফ্যাশন মল বা নামী দামি দোকানের জিনিস ছেড়ে কেউ শিবপদ বাবুর থেকে শাড়ি কিনছেন না৷ তাই বাধ্য হয়ে টোটো চালাতে শুরু করেন তিনি৷ কিন্তু লকডাউনের জন্য সেটাও বন্ধ৷ বাড়িতে দুই মেয়ে, স্ত্রী এবং বাবা ও মা সহ ৬ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিবপদ বাবুকে। ছোট মেয়ে আদ্রিতা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে এবং বড় মেয়ে লাবণ্য এ বছর উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে। দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে চরম আর্থিক সংকটের মুখোমুখি শিবপদ বাবু।

আরও পড়ুন- পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা শিক্ষাদান, ব্রাত্য ইংরাজি? বাম-পথে কেন্দ্রের শিক্ষানীতি

লাবণ্য চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবীথি স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে সেরা নম্বর পয়েছে৷ এতে তাঁর পরিবারের সকলের মতো খুশি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও। লাবণ্য জানিয়েছে, ‘‘খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে আমাকে পড়াশোনা চালাতে হয়েছে, যদিও আমাকে আমার শিক্ষকরা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন৷ আমি যাঁদের কাছে প্রাইভেট পড়তাম তাঁরা আমার থেকে কোনও অর্থই নেননি৷’’ লাবণ্য এবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত যে কোনও কলেজে অনার্স নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়৷ ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্সির ফর্ম জমা করেছে সে। কিন্তু কীভাবে তাঁর পড়াশোনার খরচ আসবে তা নিয়ে চিন্তিত লাবণ্য।

আরও পড়ুন- ১০ হাজার শিক্ষককে পিওন-রাঁধুনি-সাফাইকর্মী পদে চাকরি দিচ্ছে সরকার

লাবণ্য মাধ্যমিকেও ভাল ফল করেছিল। মাধ্যমিকে সে ৬৬৬ নম্বর পেয়েছিল। স্থানীয় ঝিকরা বিদ্যালয়ে'র শিক্ষিকা শাশ্বতী চট্টোপাধ্যায় তাঁকে পড়াশোনা করতে সাহায্য করেছেন বলে জানায় লাবণ্য। মেধাবী মেয়ের পড়াশোনা চালাতে দিনরাত ছুটে চলেছেন গর্বে বুক বাধা বাবা শিবপদ রায়। তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় বিডিও অফিসে এ বিষয়ে আবেদন করবেন। শিবপদ বাবুর কথায়, যদি তাঁরা মেয়ের পড়াশোনা চালাতে কিছু সাহায্য করেন, তাহলে লাবণ্যকে তার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে দিতে পারবেন তিনি৷ সাহায্যের জন্য ‎+91 84367 20397 এই নম্বরে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন৷

আরও পড়ুন- শিক্ষকদের জন্য জারি হচ্ছে নয়া নিময়, নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

আরও পড়ুন- ইংরাজি তুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা শিক্ষাদান, বাম-পথে কেন্দ্রের শিক্ষানীতি

আরও পড়ুন- উচ্চশিক্ষার মাঝে নেওয়া যাবে দীর্ঘ বিরতি, লাটে মাধ্যমিক, এম ফিল! নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

আরও পড়ুন- প্রাথমিক শিক্ষায় আমূল বদল, কমছে দশমের গুরুত্ব, নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

আরও পড়ুন- গুরুত্বহীন মাধ্যমিক, ৪ বছরে অনার্স, কলা-বিজ্ঞান মিশিয়ে নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

আরও পড়ুন- স্কুলশিক্ষায় আমূল বদল, গুরুত্বহীন মাধ্যমিক! নয়া শিক্ষানীতিতে অনুমোদন কেন্দ্রের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + twelve =