political equation
দেবময় ঘোষ: কংগ্রেসের আঁতে ঘা লেগেছে। তা এই মুহূর্তের আচরণেই স্পষ্ট। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে একটি ছবি অনেকেই লক্ষ করেছেন। মহুয়া মৈত্রর বহিষ্কারের প্রতিবাদে সোনিয়া গান্ধী তৃণমূলের পাশে দাঁড়ালেন। সামনে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরা। প্রতিবাদে গর্জে উঠছেন মহুয়া। ‘প্রশ্ন-ঘুষ’ কাণ্ডে বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদের পাশে ও পিছনে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অনেকেই। কিন্তু, লক্ষণীয় যিনি, তিনি হলেন- সোনিয়া।
সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে কংগ্রেস কুপোকাৎ। কিন্তু বহু প্রতিক্ষিত ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সমীকরণ তারা অপরিবর্তিত রাখতে চায়। জোটের ঐক্য মজবুত রাখা কংগ্রেসের কাছে চ্যালেঞ্জ। এখানে কংগ্রেসের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বিভিন্ন রাজ্যে জোটের ছবি বিভিন্ন রকম। যে কংগ্রেস সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিকে গুরুত্ব দেয়নি, সে লোকসভায় আঞ্চলিক দলগুলির প্রতি কতটা স্বহৃদয় হবে তা রাজনৈতিক মহলে অলোচ্য বিষয়।
এটা ঠিক যে কংগ্রেস-বিজেপির একটি ‘ওয়ান ইজ টু ওয়ান’ লড়াই হোক, তা চায় কংগ্রেস। কিন্তু, যে ভাবে দেশের কোনায় কোনায় আঞ্চলিক দলগুলির উত্থান ঘটেছে- সে বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। কংগ্রেস বা বিজেপি দেশের প্রতি প্রান্তে থাকলেও তারা এখন একছত্র ক্ষমতার অধিকারি নয়। সেক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী জোটের ‘দাদা’ হয়ে ওঠার দুর্নিবার ইচ্ছা থাকলেও উপায় সহজলভ্য নয়।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি ইন্ডিয়া জোটের অগ্নি পরীক্ষা। জোটের ভাল বা খারাপ ফলাফল নির্ভর করবে এই আসন ভাগাভাগির উপর। এই পক্রিয়া কতটা মসৃণ হবে, তা লক্ষণীয়। যেমন ধরুন, পশ্চিমবঙ্গ। এখানে, তৃণমূল কংগ্রেস আশা করছে যে তারা লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে। যদি তাই হয়, কংগ্রেসের সঙ্গে তারা আসন সমঝোতা কেন করবে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, যে যেখানে শক্তিশালী বা ক্ষমতায় আছে, তাকে সকলে সমর্থন দিক। তবে অঙ্কটা এত সহজে মিলবে না। অন্য রাজ্যের কথা না হয় পরে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই এই অঙ্ক মেলান কঠিন কাজ। ইন্ডিয়া জোটের মঞ্চে বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল একযোগে বিজেপি বিরোধিতা করেছে। কিন্তু, রাজ্যে কংগ্রেস এবং সিপিএম একযোগে তৃণমূল বিরোধিতা করে এসেছে। এক্ষেত্রে তারা বিজেপির বিরুদ্ধে যেতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দল হিসাবে তৃণমূলকে সমর্থন করবে, এরকম অলীক কল্পনা করার বুদ্ধিমানের কাজ নয়। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তৃণমূল বিরোধিতায় অনেক ক্ষেত্রে কংগ্রেস-সিপিএমের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে বিজেপিও।
হাই-কমান্ড রাজ্য পার্টির কান মুলে আসন ভাগাভাগিতে বাধ্য করতেই পারে। কিন্তু, তাতে তৃণমূলস্তরে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে দাদা শ্রেণির নেতারা কিছু বললেও যে ছোট নেতারা সেকথা মেনে চলবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। হাই-কমান্ড সে রাস্তায় হাঁটবে না। অর্থাৎ, আগামীদিনে জোটের পথ কী নির্বাচন পরবর্তী পর্বে নির্ণীত হবে? আপাতত সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পালা শুরু হল।