কলকাতা: ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ নিয়ে বেতনের সমস্যায় পড়েছেন রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গঠনের পরে মাসের প্রথম তারিখে শিক্ষকদের মাইনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। গত ১০ বছর তা অক্ষরে অক্ষরে পালনও হয়েছিল। তবে এবার এপ্রিল মাসের ৫ দিন কেটে যাওয়ার পরেও বেতন পাননি হাজার হাজার শিক্ষক। দেশজুড়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের ফলেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে মঙ্গলবারের মধ্যে সমস্ত শিক্ষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাসিক বেতন ঢুকে যাবে বলেই আশ্বাস দিয়েছে বিকাশ ভবন।
শিক্ষক সংগঠন এসটিইএ-এর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক অনিমেষ হালদার জানিয়েছেন যে তিনি এই সমস্যার কথা আগেভাগেই আন্দাজ করেছিলেন। সেইমতো তিনি স্কুলশিক্ষা কমিশনার এবং ডিআই অফিসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। এই আশঙ্কার কথা বুঝে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সরব হয়েছিল রাজ্যের সমস্ত শিক্ষকরা। মার্চ মাসেই কেন্দ্রীয় সরকারের ছোট ব্যাঙ্কগুলিকে বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ফলে ছোট ব্যাঙ্কগুলির আইএফএসসি এবং এমআইসিআর কোড পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু নতুন কোড সময় থাকতে আইওএসএমএস পোর্টালে আপডেট করা হয়নি। এই পোর্টালের মাধ্যমেই সরাসরি শিক্ষকদের ব্যাংক একাউন্টে মাসিক বেতন ঢুকে যায়। ফলে এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ হয়ে যাওয়ার পরও এখনও মার্চ মাসের বেতন পাননি রাজ্যের কয়েক হাজার শিক্ষক।
এসটিইএ-এর অনিমেষ হালদার এই সমস্যার আগাম আভাস পেয়ে স্কুল শিক্ষা কমিশনে এবং ডিআই অফিসে চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়ে ছিলেন, বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করে শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। কিন্তু সেই সময়ে তা করা সম্ভব হয়নি। কারণ, কেন্দ্রীয় নির্দেশ না এলে ডিআইরা নিজেদের চেষ্টায় এই কাজের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। যদিও কয়েকটি জেলায় ডিআইরা শিক্ষকদের ব্যাঙ্ক ডিটেইলস আপডেট করেছেন। তবে তা খুবই যৎসামান্য। এদিকে এখনও পর্যন্ত কোনও কেন্দ্রীয় নির্দেশ আসেনি।
চলতি বছরের গোড়া থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ছোট ব্যাঙ্কগুলিকে বড় ব্যাংকের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ করছে। মার্চ মাসে সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স। এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক জুড়েছে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের সঙ্গে। ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অন্ধ্র ব্যাঙ্ক। সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক যুক্ত হয়েছে কানাড়া ব্যাঙ্কের সঙ্গে। তবে এর মধ্যে যে হাজার হাজার শিক্ষক এই মাসের বেতন পাননি তার বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের।
ফলে যাদের টাকা পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকার কথা তাদেরই বেতন পেতে সবচেয়ে দেরি হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এমন নয় যে অন্যান্য ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা ইতিমধ্যেই বেতন পেয়ে গিয়েছেন। এই ঘটনায় ফের একবার সরব হয়েছেন শিক্ষকরা। যার ফলে বিষয়টিকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে বিকাশ ভবনও। এক শীর্ষ আধিকারিক শিক্ষকদের আশ্বাস দিয়েছেন, ৬ এপ্রিল মঙ্গলবারের মধ্যে বকেয়া বেতন তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে। এর জন্য তাদের কোথাও যেতে হবে না। তবে, জানা গিয়েছে, কোথাও কোথাও ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অ্যাকাউন্টে বেতন ঢুকতে শুরু করেছে৷