মুসলিম রাষ্ট্রে গিয়ে মন্দির উদ্বোধন মোদীর! লোকসভার আগে কী বার্তা?

মুসলিম রাষ্ট্রে গিয়ে মন্দির উদ্বোধন মোদীর! লোকসভার আগে কী বার্তা?

2614cf5c67c078bde7edb64de3da77b0

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘুরা তাই বিজেপিকে ভোট দেয় না। এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও বিজেপির দাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও রং-বর্ণ-ধর্ম-জাত দেখেন না। কোনও ভেদাভেদ করেন না। ‘সবকা সাথ সবকা বিশ্বাস’,  এটাই মোদির মূল মন্ত্র। আর মুসলিম রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্দির উদ্বোধনের পর সেই দাবি নিশ্চিত ভাবে আরও জোরালো ভঙ্গিতে তুলে ধরবে গেরুয়া শিবির।

২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর ১৪ ফেব্রুয়ারি মুসলিম রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে গিয়ে মন্দির উদ্বোধন করলেন তিনি। দু’দিনের সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরের দ্বিতীয় দিনে বুধবার আবুধাবিতে বিএপিএস (বোচাসনবাসি শ্রী অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামীনারায়ণ সংস্থা)-এর উদ্যোগে তৈরি হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার, বিবেক ওবেরয়, গায়ক শঙ্কর মহাদেবন-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। এই প্রথম আবুধাবিতে কোনও হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠিত হল। তবে আরব আমিরশাহির দুবাইয়ে একটি মন্দির রয়েছে। অর্থাৎ এই দেশে এই নিয়ে দুটি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হল। উল্লেখ্য ২৭ একর জমিতে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে মন্দিরটি। মন্ত্রোচ্চারণ করে বুধবার মন্দির উদ্বোধনের পর মোদি বলেন, “আমার কাছে বিএপিএস মন্দির ভারতের প্রতি আপনাদের ভালবাসার প্রতিফলন। আপনাদের সমর্থন ছাড়া এটা হতে পারত না।” ২০১৫ সালে আরব আমিরশাহি সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সফরে আমিরশাহি সরকার ঘোষণা করে তারা হিন্দু মন্দির গড়ার জন্য কুড়ি হাজার বর্গমিটার জমি বরাদ্দ করবে। জমি পাওয়ার পর মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গত ডিসেম্বরে মন্দির উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান মন্দির কর্তৃপক্ষ। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন মোদি। সেই সূত্রেই আমিরশাহি সফরে গিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার আমিরশাহি সফরে গিয়েই সে দেশের মন জয় করে নেন মোদি। আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নুহানের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি তাঁকে আলিঙ্গন করে ‘আমার ভাই’ বলে সম্বোধন করেন মোদি। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এছাড়া অনাবাসী ভারতীয়দের উদ্দেশে মোদি যে বক্তব্য রাখেন সেই অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘আহলান মোদি’। আরবি ভাষায় যার অর্থ হল ‘হ্যালো মোদি’। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরবি ভাষাতেও কথা বলতে শোনা যায় মোদিকে। যে ঘটনায় উচ্ছ্বসিত গোটা  আমিরশাহি।

ঘটনা হল লোকসভা নির্বাচনে এবার বিজেপির টার্গেট এনডিএ-কে ৪০০ আসনে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বহু আসন রয়েছে যেখানে বিজেপি অতীতে কোনও দিন দাঁত ফোটাতে পারেনি। তাই বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বার্তা দিচ্ছেন। তাঁদের কাছে টানার জন্য নানা পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে বিজেপিকে। সংখ্যালঘু সমাজকে যে বিজেপি দূরে সরিয়ে রাখতে চায় না, সেই বার্তা দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। উল্লেখ্য চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আমেদাবাদে আমিরশাহির প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বিন জায়েদকে সঙ্গে নিয়ে একটি রোড শো করেন মোদি। সেখানে কয়েক হাজার মুসলিম রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁদের অভিবাদন জানিয়েছিলেন। এমন দৃশ্য এর আগে বিজেপির কোনও কর্মসূচি ঘিরে দেখা যায়নি। অর্থাৎ সংখ্যালঘু সমাজকে চলতি বছরের প্রথম থেকেই বিশেষ বার্তা দিতে শুরু করে দিয়েছেন মোদি। এই আবহের মধ্যে মুসলিম রাষ্ট্র আরব আমিরশাহিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্দির উদ্বোধন যে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *