প্রেসিডেন্সি জেলে পড়শি পার্থ-বালু, এবার খেতে হবে জেলের ভাত!

প্রেসিডেন্সি জেলে পড়শি পার্থ-বালু, এবার খেতে হবে জেলের ভাত!

pertha

কলকাতা: এক সময়ে তাঁরা দু’জনেই ছিলেন তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরের কাণ্ডারী৷ দলের বিশেষ আধিপত্যও ছিল তাঁদের৷ তবে বর্তমানে দু’জনেরই ঠিকানা প্রেসিডেন্সি জেল৷ দু’জনেই কাঠগড়ায় দুর্নীতির অভিযোগে৷ 

নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২-এর জুলাই মাসে ইডির হাতে গ্রেফতার হন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ অন্যদিকে, রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু৷ কালীপুজোর দিন হয়েছে তাঁর জেলযাত্রা৷ ঘটনাক্রমে পার্থ ও বালু এখন পড়শি৷ তাঁরা দু’জনেই এখন প্রেসিডেন্সির পহেলা বাইশ ওয়ার্ডের ভিন্ন ভিন্ন সেলের বাসিন্দা৷ সেখানেই দিন কাটছে তাঁদের৷ 

তবে শুধু পার্থ বা জ্যোতিপ্রিয় নন, প্রেসিডেন্সি জেলের পহেলা বাইশ সেলে রয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য এবং কুন্তল ঘোষও৷  অন্যদিকে, গরু পাচার মামালায় অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর মেয়ে সুকন্যা রয়েছেন দিল্লির তিহার জেলে৷ 

ইডি দফতর থেকে সোজা প্রেসিডেন্সিতে ঠাঁই হয়েছে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়র৷ এবার খেতে হবে জেলের ভাত৷ আদালতের নির্দেশে এতদিন বাড়ি থেকেই খাবার আসছিল বালুর জন্য৷ তবে প্রেসিডেন্সি জেলের রিপোর্ট দেখে ব্যাঙ্কশাল আদালতের নির্দেশ, এবার থেকে জেলের খাবারই খেতে হবে মন্ত্রীকে৷ প্রেসিডেন্সি জেলের তরফে জানানো হয়েছে, চিকিৎসকরা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে যে ধরনের ডায়েটের পরামর্শ দিয়েছেন, সেই পরিকাঠামো সংশোধনাগারে রয়েছে৷ তার পরেই এই নির্দেশ৷ 

ইডি হেফজতে থাকার সময় বালুকে বাড়ির খাবার দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী৷ তাতে আপত্তি জানায়নি ইডি৷ এর পর রায়ের কপিতে বিচারক তনুময় কর্মকার লেখেন, তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে শারীরিক সমস্যার কারণে সুনির্দিষ্ট খাবার খেতে হয়৷ ইডি হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মেয়েকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে৷ তবে সেই খাবার নিরাপদ কিনা, প্রতিবারই খতিয়ে দেখবেন ইডির অফিসাররা৷ এর পর থেকে বাড়ির খাবারই খেতেন জ্যোতিপ্রিয়৷ তবে এবার থেকে আর বাড়ির খাবার মিলবে না৷ এদিকে, আদালতের নির্দশে পহেলা বাইশের সেলে খাট জুটেছে পার্থের৷ তবে জেল সূত্রে খবর, এখনও মাটিতেই ঘুমাতে হচ্ছে জ্যোতিপ্রিয়কে৷ 

একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর জেলযাত্রার পর বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘এর পর ক্যাবিনেট মিটং প্রেসিডেন্সি জেলেই হবে৷ পার্থবাবু-জ্যোতিপ্রিয়বাবু থাকবেন৷ এর পর অন্যান্যরাও ঢুকবেন৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘চোর চোরই৷ সে সিধ কেটেই হোক বা মন্ত্রীর চেয়ারে বসে৷ জেলের স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দেওয়া হবে কেন?’’

এদিকে, জেলে আসা ইস্তক নিজেকে অসুস্থ বলে দাবি জানিয়ে আসছেন বালু৷ যদিও তাঁর সেই দাবি ধোপে টেকেনি৷ জেলের চিকিৎসকরা সাফ জানিয়েছেন, সুস্থ্যই আছেন বনমন্ত্রী৷ জেল সুপার দেবাশিষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরনো চিকিৎসার রিপোর্ট আদালত আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ সেই সকল রোগের চিকৎসা চলছে৷’’

বালুর অসুস্থতা মানতে নারাজ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী৷ তিনি একটি সাংবাদিক বৈঠকে সাফ বলেন, ‘‘কেউ অসুস্থ হয়নি৷ অসুস্থতার সব নাটক করছে৷ আমি তো কালকে বলেছি, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এগুলোকে নিয়ে যাওয়া উচিত কোর্টে৷ সব ঢপ৷ মিথ্যা কথা৷’’

এদিকে, জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার পর উঠে এসেছে তিনটি ভুয়ো কোম্পানির নাম৷ গ্রেসিয়াস ইনোভেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড, শ্রী হনুমান রিয়েলকন প্রাইভেট লিমিটেড এবং গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড৷ ইডি সূত্রে দাবি, এই সব ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমেই রেশন দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল৷ যদিও তদন্তে এই সংস্থাগুলোর প্রসঙ্গে কিছু জানেন না বলেই উল্লেখ করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়র স্ত্রী মণিদীপা মল্লিক ও মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিক৷ তবে ইডির রিপোর্ট বলছে, ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড-এর ডিরেক্টর পদে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়-জায়া৷ অন্যদিকে, ২০১৬ সালের ১০ জুন থেকে ২০১৭ সালের ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত গ্রেসিয়াল ইনোভেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড ও শ্রী হনুমান রিয়েলকর প্রাইভেট লিমিটেড-এর ডিরেক্টর পদে ছিলেন মনিদীপা৷

শুধু বালুর স্ত্রীই নন৷ ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর গ্রেসিয়াস ইনোভেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড এবং ২০১৬-র ১০ জুন থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত  গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন ও শ্রী হনুমান রিয়েলকন প্রাইভেট লিমিটেড-এর ডিরেক্টর পদে ছিলেন প্রিয়দর্শিনী৷ বিভিন্ন সময় ওই তিন ভুয়ো কোম্পানির ডিরেক্টর পদে ছিলেন বালুর প্রয়াত শাশুড়ি অঞ্জলি সেন ও শ্যালক অশোককুমার সেন৷ দায়িত্ব সামলেছেন বনমন্ত্রীর প্রাক্তন আপ্ত সহায়কের মা ও স্ত্রী৷ এমনকী দায়িত্বে ছিলেন বাড়ির পরিচারক রামস্বরূপ শর্মাও৷ রেশন দুর্নীতির জাল ঠিক কতটা গভীরে বিস্তৃত, তার হদিশ পেতেই এখন মরিয়া ইডি৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 9 =