টার্ম ইনস্যুরেন্স কী? এই বিমা কেনার আগে মাথায় রাখুন এই সব বিষয়, না হলেই মিুশকিল

টার্ম ইনস্যুরেন্স কী? এই বিমা কেনার আগে মাথায় রাখুন এই সব বিষয়, না হলেই মিুশকিল

imagesmissing

 কলকাতা:  জীবনে সবচেয়ে বড় সত্যি হল মৃত্যু৷ আর মৃত্যু কখনও বলে আসে না৷ তাই, আপনার মৃত্যুর পর যাতে আপনার পরিবার সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে জীবন কাটাতে পারে, তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টার্ম ইনস্যুরেন্স বা মেয়াদি বিমা৷ আর আপনার পরিবার যদি আপনার একার রোজগারের উপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে টার্ম ইনস্যুরেন্স থাকাটা অত্যন্ত জরুরি৷

টার্ম ইনস্যুরেন্স আসলে কী? 
 

এটি এমন একটি বিমা, যা আপনার মৃত্যুর পর আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত করে৷ টার্ম ইনস্যুরেন্স সীমিত সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে কভারেজ দিয়ে থাকে। যা মৃত্যুর পরে পলিসিধারকের পরিবারকে বড় বিমা কভারেজ দিতে সাহায্য করে। যদি পলিসি হোল্ডারের পলিসির মেয়াদের মধ্যে মৃত্য ঘটে তাহলে বিমার টাকা নমিনিকে দেওয়া হয়। তাই এটা সবার আগে বুঝে নেওয়া দরকার যে, মেয়াদি বিমা কোনও বিনিয়োগ নয়৷ এটা একটা সুরক্ষা বলয়৷ আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড থাকার মতোই গুরুত্বপূর্ণ টার্ম ইনস্যুরেন্স৷ কিন্তু বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা জেনেশুনেও এই বিমা করাতে নারাজ৷ অনেকে আবার এই বিষয়ে ভালো মতো জানেনই না৷ যারা এই বিমা সম্পর্কে জানেন না, তাঁদের জন্য এই ভিডিয়ো খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ 

দেখুন, যতদিন আপনি সুরক্ষিত, আপনার পরিবারও সুরক্ষিত৷ কিন্তু যখন আপনি থাকবেন না, তখন কাজে আসবে এই মেয়াদি বিমা৷ কখন টার্ম ইনস্যুরেন্স করাতে হবে? কত টাকার ইনস্যুরেন্স করাতে হবে? কী ভাবে নিতে হবে? তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে৷ অনেকে আবার টার্ম ইনস্যুরেন্স নিয়ে ফেলেছেন৷ কিন্তু তাতে কোনও ভুল করেননি তো? আজকাল বাজারে এমন অনেক বিমা সংস্থা রয়েছে, যারা মেয়াদি বিমা বা টার্ম ইনস্যুরেন্স পলিসি বিক্রি করে। কিন্তু, অনেক সময়ই বোঝা যায় না যে টার্ম ইন্স্যুরেন্স কেনার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত।

টার্ম ইনস্যুরেন্স হল এমন একটি বিমা যা, কম পয়সায় বেশি কভারেজ দেয়৷ আপনার বয়স যদি ২৫ হয়, তাহলে দেখা যাবে মাসে মাত্র ৯০০ টাকার বিনিময়ে আপনাকে বিমা সংস্থা এক কোটি টাকার টার্ম ইনস্যুরেন্স দেবে৷ কিন্তু বয়স যখনই ৩৫ হবে, তখন পলিসি বাজারে গিয়ে দেখা যাবে মাসে প্রিমিয়াম পড়ছে ১২৭০ টাকা৷ তাই মেয়াদি পলিসি নেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করাটা একদমই উচিত নয়৷ 

এছাড়াও মেয়াদি বিমা বা টার্ম ইনস্যুরেন্স কেনার সময় আপনার পরিবারের প্রয়োজনের কথা মাথায় রাখাটা জরুরি। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে তার পর মেয়াদি বিমা কিনুন। অনেকবার দেখা গিয়েছে, কোনও ব্যক্তি মেয়াদি বিমা কিনলেও তা তাদের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়াদি বিমা আপনার বর্তমান বার্ষিক আয়ের কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ গুণ হওয়া উচিত। কারণ আজকে যিনি ২৫ লক্ষ টাকার বিমা করাচ্ছেন, ২৫ বছর বাদে সেই ২৫ লক্ষ টাকার কিন্তু মূল্য থাকবে না৷ সেটা আগেই ভেবে নিতে হবে৷ 

বেশ কিছু পলিসি থাকে লাইফ ইভেন্ট পলিসি৷ যেমন বিয়ে হলেই প্রিমিয়াম ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে, প্রথম সন্তান হলে ২৫ শতাংশ, দ্বিতীয় সন্তান হলে আরও ২৫ শতাংশ৷ এই ধরনের পলিসি না করাই ভালো৷ 

টার্ম ইন্স্যুরেন্স নেওয়ার সময় অনেকেই রোগ সম্পর্কে তথ্য গোপন করে। এই ধরনের কাজ করাটা ঠিক নয়৷ আপনি যদি ইতিমধ্যেই কোনও ধরনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে আগে থেকেই বিমা কোম্পানিকে তা জানিয়ে দিন। এতে পরবর্তীতে ক্লেইম নেওয়ার সময় আপনাকে কোনও ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না।

টার্ম ইনস্যুরেন্স কেনার সময় আপনার কেবল সেই কোম্পানি বেছে নেওয়া উচিত, যার দাবি নিষ্পত্তির অনুপাত বেশি। এর ফলে পরবর্তীকালে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আপনার পরিবারকে কোনও ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না।

যে কোনও প্রকার পলিসি কেনার সময় আপনাকে দুটি অপশন দেওয়া হবে৷ একটি হল রেগুলার পে৷ অন্যটি লিমিটেড অপশন৷ রেগুলির পে-তে কোনও ৩৫ বছরের ব্যক্তি টার্ম ইনস্যুরেন্স নিতে চাইলে তাঁকে মাসে প্রিমিয়াম দিতে হবে ১২৭০ টাকা৷ ৬০ বছর পর্যন্ত কভারেজ৷ ফলে ২৫ বছর এই ইনস্যুরেন্স দিতে হবে৷ 

লিমিটেড পে-র ক্ষেত্রে বোঝানো হয়, মাসিক প্রিমিয়াম খানিকটা বাড়িয়ে ২৩৮৫ টাকা করে দিন৷ তাহলে ১০ বছর প্রিমিয়াম দিলেই হবে৷ আপনার পুরো ২৫ বছরই কভার করে দেওয়া হবে৷ দেখতে গেলে এক্ষেত্রে ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা বাঁচবে৷ অনেকেই সেই প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে দেয়৷ আর এটাই বড় ভুল৷ কী ভাবে? 

এখন আপনাকে দিতে হত ১২৭০ টাকা৷ সেখানে কোম্পানি চাইছে ২৩৮৫টাকা৷ ১১০০ টাকা যে বাড়তি চাওয়া হচ্ছে, সেই টাকা অন্যত্র বিনিয়োগ করলে ১২ শতাংশ সুদ সুদে আপনি পেতেন ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা৷ তাহলে বুঝলেন তো, ক্ষতিটা কোথায়?

অনেক ক্ষেত্রে আবার বলা হয় পলিসি বাড়িয়ে ৯৯ বছর করে নিন৷ কারণ টার্ম ইনস্যুরেন্স ৬০ বছরের জন্য৷ ৬১-৬২ বছর বয়সে কিছু হলে তখন? একবার ভেবে দেখুন সেই সময় আপনার জীবনের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজই সারা হয়ে গিয়েছে৷ বাচ্চারও তখন সেটেল্ড৷ আপনার উপর আর কেউ নির্ভরশীল নয়৷ ফলে অযথা টার্ম বাড়ানোর কোনও অর্থ হয় না৷    

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *