প্রথা ভেঙে লাল শাড়িতে নিকাহ পাক তরুণীর! প্রশংসায় ভরাল নেটদুনিয়া

প্রথা ভেঙে লাল শাড়িতে নিকাহ পাক তরুণীর! প্রশংসায় ভরাল নেটদুনিয়া

কলকাতা: বিয়ে মানেই লাল টুকটুকে শাড়ি৷ সঙ্গে মানানসই গয়না৷ এটাই তো দস্তুর৷ জীবনের এই বিশেষ দিনটাকে লাল রঙেই রাঙিয়ে তুলতে ভালোবাসেন অধিকাংশ নারী৷ সম্প্রতি নেটপাড়ায় ভাইরাল হয়েছে এমনই এক টুকটুকে বউয়ের ছবি৷ পরনে কালচে লাল রঙের ঝলমলে শাড়ি। তাতে সোনালি রঙের চওড়া ভারী কাজের পাড়, সারা জমিতে ছোট্ট ছোট্ট সোনালি বুটি। তার সঙ্গে সোনালি পাড়ের মানানসই ব্লাউজ। গলায় সোনার উপরে পাথর সেটের জড়োয়ার ভারী গয়না। কানে ঝোলা দুল, গলা জোড়া চোকার আর কয়েক নরী রানিহার৷ হাত জোড়া চওড়া চূড়। সিঁথি জুড়ে মাঙ্গটিকা। মাথায় লাল নেট আর সোনালি পাড়ের স্বচ্ছ ওড়না। কাঁধ থেকে এলিয়ে পড়েছে শাড়ির আঁচল৷ এই সাজ যে কোনও বিয়ের কনের তা সহজেই বোঝা যায়৷ সম্প্রতি এই তরুণির সাজসজ্জা নজর কেড়েছে নেটিজেনদের। তবে প্রশ্ন হল, হঠাৎ কেন নেটপাড়ায় শোরগোল ফেলল এই ছবি? বিয়েতে তো এমন সাজই স্বাভাবিক। আসলে আপেক্ষিক দৃষ্টিতে এটা স্বাভাবিক হলেও, কোথাও যেন ব্যতিক্রমী৷ কারণ, এই ছবিটি আমাদের দেশের নয়৷ এক সময় ধর্মের কারণে সে দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল শাড়ি৷ সেই পড়শি পাকিস্তানেই এবার লাল টুকটুকে বেনারসি গায়ে জড়িয়ে নিকাহ সারলেন এক লাস্যময়ী তরুণী৷ 

পাকিস্তানে সে অর্থ শাড়ি পরার চল নেই। ধর্মের দোহাই দিয়েই সে দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল শাড়ি। মুসলিম প্রধান দেশে ধর্মীয় বিধি নিষেধ পরতে পরতে৷ সেই মুলুকে ধর্মীয় নিদানের অন্যথা হলেই বয়ে যায় নিন্দার ঝড়৷ তোলপাড় হয়ে গোটা সমাজ৷ তবে শাড়ি নিষিদ্ধ হওয়ার পিছনে রয়েছে অন্য একটি গল্প৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় গায়ে শাড়ি জড়িয়েই মার্চ করত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রমীলা বাহিনী। বিরোধী পক্ষের মহিলাবাহিনীর এই দাপট একেবারেই মেনে নিতে পারেননি তৎকালীন পাকিস্তানের কর্তাব্যক্তিরা। এমতাবস্থায় হিন্দু ধর্ম, বলা ভাল ভারতীয় সংস্কৃতির যাবতীয় ছাপ দেশ থেকে মুছে ফেলতে তৎপর হয়ে ওঠে পাক সরকার। পোশাক নিয়ে ফতোয়া জারির পক্ষে সওয়াল করেন জিয়া উল হক৷ তাঁর যুক্তি ছিল, এই পোশাকে মহিলাদের মুসলিমের চেয়ে বেশি  ভারতীয় বলে মনে হয়। এর পরেই দেশের প্রায় সমস্ত সরকারি ক্ষেত্রে শাড়ি পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তৎকালীন পাক সরকার।

পাকিস্তানি কনেরা সাধারণত শাড়ি পরেন না৷ ব্রাইডাল লেহঙ্গা বা ব্রাইডাল শারারা পরাটাই সেদেশের চল৷ কিন্তু ইতিহাস বলছে, বহু বছর আগে এই অঞ্চলের অধিকাংশ মেয়ে শাড়ি পরেই নিকাহ সারতেন৷ সেই সময় এই অঞ্চল ছিল অখণ্ড ভারতের অংশ৷ পাকিস্তানি নববধূরা আবার তাঁদের শিকড় খুঁজে পেতে চাইছেন৷ তেমনই এক পাকিস্তানি নববধূর ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল৷ তাঁর নাম ফজর৷ শুধু এই পাক তরুণীর সাজই নয়, তাঁর রূপেও মহিত হয়েছেন নেটিজেনরা৷ লাল শাড়ি পরে নিকায় বসে প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই পাক কন্যা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 1 =