কলকাতা: দেশ গঠনের পর থেকেই নিজেদের সামরিক শক্তিকে বারবার প্রাধান্য দিয়ে এসেছে পাকিস্তান৷ দেশের অর্থনীতি, রাজনীতির চেয়েও পাক মুলুকে অনেক বেশি কদর দেওয়া হয় সেনাবাহিনীকে। স্বাভাবিকভাবেই সে দেশে সামরিক ব্যবস্থাপনা প্রশাসনিক পরিকাঠামোর চেয়েও বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। আর শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলার পিছনে পাকিস্তানের প্রধান লক্ষ্য হল ভারত।
ভারত এবং পাকিস্তানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ৷ দুই মুলুকের দ্বৈরথ কারও অজানা নয়৷ ভারতের বিরুদ্ধে হামেশাই নানাবিধ সামরিক পরিকল্পনা করে থাকে পাকিস্তান। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত পাক লেফটেন্যান্ট জেনারেলের কথায় উঠে এসেছে তেমনই এক পরিকল্পনার কথা৷
গত মে মাসে ছিল পাকিস্তানের প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষার ২৫তম বার্ষিকী৷ সেই উপলক্ষে ইসলামাবাদের ইনস্টিটিউ অফ স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালিদ কিদওয়াই৷ ওই তিনি পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী পারমাণবিক নীতি নিয়ে আলোচনা করেন। খালিদ জানান, স্থল, জল এবং আকাশপথে ভারতের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী প্রতিরোধে প্রস্তুত তাঁদের দেশ।
তাঁর কথায়, ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে চলেছে পরমাণু অস্ত্র। খালিদের বক্তৃতা অনুযায়ী, ত্রিমুখী আক্রমণের জন্যে পাকিস্তান যদি প্রস্তুত থাকে, তাহলে তাদের কাছে স্থল, জল এবং আকাশপথের লড়াইয়ে ব্যবহারের উপযোগী পরমাণু অস্ত্রও আছে।
খালিদের কথায়, স্থলভাগে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ভারতকে রুখতে প্রস্তুত আর্মি স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স কমান্ড (এএসএফসি)। জলপথে প্রতিরোধ গড়বে নেভাল স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স কমান্ড (এনএসএফসি) এবং আকাশে গর্জে উঠবে এয়ার ফোর্স স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড (এএফএসসি)। এ ছাড়াও, কৌশলগত এবং প্রয়োগমূলক ভাবে ভারতের বিরুদ্ধে সবরকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পাকিস্তান প্রস্তুত বলেই উল্লেখ করেন খালিদ কিদওয়াই। তিনি বলেন, প্রতি ক্ষেত্রেই জোর দেওয়া হচ্ছে পরমাণু অস্ত্রের উপরে৷
মনে করা হচ্ছে, ভারতের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে একটি ‘পারমাণবিক ছাতা’ তৈরি করছে পাকিস্তান। পরমাণুর ছত্রছায়াতেই ‘চিরশত্রু’ ভারতকে ঘিরে ফেলতে চাইছে ইসলামাবাদ। সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক কৌশলে বেশ কিছু পরিবর্তনও এনেছে পাকিস্তান। ভবিষ্যতে ইসলামাবাদ জিরো-রেঞ্জ কৌশলে ভারতের সীমা বরাবর পারমাণবিক ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখার নীতি নিতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে৷ যদিও সবটাই সম্ভাবনার পর্যায়ে। পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক ক্ষেত্রের পরিকল্পনা নিয়ে প্রকাশ্য কথন করে না। তাই পাক পরমাণু তৎপরতা বরাবর ধোঁয়াশাতেই থেকেছে৷ পারমাণবিক অগ্রগতিকে আড়ালে রেখে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ এবং প্রস্তুতির দিকগুলিকে বারবার প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছে ইসলামাবাদ। এটিও তাদের সামরিক কৌশলের বড় অঙ্গ।