কলকাতা: বৃহস্পতিবারেই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে মোকা। বৃহস্পতিবার সকালের আগেই অতি গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম, বুধবার রাতের শেষ বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছে দিল্লির মৌসম ভবন। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে মোকা। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে সন্ধ্যাতেই। শুক্রবার আরও শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ অত্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেবে। এই অবস্থায় ‘মোকা’র গতিবিধির কোনদিকে থাকছে সেদিকে নজরদারি চলছে।
কোন পথে ‘মোকা’?
মৌসম ভবন ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত পূর্বাভাসে জানিয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর একটু একটু করে উত্তর-উত্তরপূর্বে সরে যেতে পারে ‘মোকা’। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর থেকে ধীরে ধীরে উত্তর-উত্তরপূর্বে সরে যেতে পারে ‘মোকা’। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৮০ কিমি।
সমুদ্রে বাধা না পেয়ে তা এগিয়ে আসবে উপকূলের দিকে। তবে, স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার আগে এর কিছুটা শক্তিক্ষয় হতে পারে। স্থলভূমিতে ঢোকার পর দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে মোখা। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, শনিবার থেকে ধীরে ধীরে শক্তি কমতে শুরু করবে মোকার। তখন এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে যেতে পারে। এর জেরে রবিবারের পর সেখানে বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে পারে। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে- রবিবার দুপুরের দিকে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মায়ানমারের কাউকপুরের উপর আছড়ে পড়তে পারে ‘মোকা’। এর পর তা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং উত্তর মায়ানমারের দিকে এগিয়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
তবে, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মোকার পূর্বাভাস থাকলেও তার প্রভাব খুব বেশি পড়বে না বাংলাতে। উল্টে রাজ্যের একাধিক জেলার তাপমাত্রা হূ হূ করে বাড়বে। রয়েছে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তাও।
রাজ্যের আবহাওয়া কেমন?
বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রক্রিয়ার জন্য জলীয় বাষ্প সেদিকেই চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে, উষ্ণ ও শুষ্ক উত্তর-পশ্চিমা হাওয়া ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গে। যে কারণে এই কয়েকদিনে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বুধবার দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই অস্বস্তিকর গরমের দাপট দেখা গেছে। রাজ্যের উষ্ণতম স্থান ছিল বীরভূমের সিউড়ি।
বুধবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (ডিগ্রি সেলসিয়াসে)
সিউড়ি- ৪৩.৪
বাঁকুড়া- ৪৩.৩
পুরুলিয়া- ৪২.৭
আসানসোল- ৪২.৩
শ্রীনিকেতন- ৪২.১
মালদহ- ৪১.৮
বর্ধমান- ৪১.৬
কৃষ্ণনগর- ৪১
বারাকপুর- ৩৯.৬
দমদম- ৩৯.৫
কলকাতা- ৩৮.৭
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, বৃহস্পতিবারও তীব্র গরম থাকবে রাজ্য জুড়ে। শুক্রবার পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলবে একাধিক জেলায়। কলকাতার তাপমাত্রা থাকবে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে- উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়ায়। শুক্রবার তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে- বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ,নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহে। রবিবার উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও শুকনোই থাকবে অন্যান্য জেলা। ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার পর ফের ঝড়বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।