কটক: ১২ বছর আগে এসিড হামলায় ঝলসে গিয়েছিল মুখের সিংহভাগ। তাও আশা ছাড়েন নি ওড়িশার সাহসী মেয়ে প্রমোদিনী রৌল। দীর্ঘদিনের চিকিৎসার পর মুখের ক্ষত সারলেও আয়নার সামনে নিজের বিকৃত চেহারা দেখে ভয়ে শিউরে ওঠার সময় কাটিয়ে সাহসী প্রমোদিনী বিয়ের পিঁড়িতে বসে দেশের সমস্ত এসিড আক্রান্ত মহিলাদের কাছে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। সোমবার দীর্ঘদিনের বন্ধু সরোজ সাহুর সঙ্গে জীবনের বাকিটা পথ হেঁটে যাওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন প্রমোদিনী। আর বিবাহের দিনকে নিজের জীবনের ‘সেরা দিন’ বলে নিজের বিয়ের রিসেপশন মঞ্চ থেকে সরোজের সঙ্গে তার সম্পর্কের গল্পটা নিজেই বলে উঠলেন প্রমোদিনী।
নিজের প্রীতি সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রমোদিনী বলেন যে, সরোজ এবং তার প্রথম দেখা হয় ২০১৪ সালে একটি হাসপাতালে, যেখানে প্রমোদিনী চিকিৎসাধীন ছিলেন দীর্ঘদিন। তারপর তাদের পরিচয় বাড়ে, বাড়ে আসা যাওয়া, দেখা করা, গল্প করা এবং সময় কাটানো। এসবের মাঝখানেই যে কখন সরোজ প্রমোদিনীর যত্ন নিতে শুরু করেছিল, সেটা সরোজ না বুঝলেও বুঝেছিল প্রমোদিনী। আর সেখান থেকেই তার নতুনভাবে বাঁচতে শেখার ইচ্ছেটা জেগে ওঠে, এমনটাই এদিন জানিয়েছে প্রমোদিনী। পাশাপাশি এদিন সে আরো বলে, “সরোজের সঙ্গে বিয়ে করা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওনা। ও শুধুমাত্র আমার স্বামী নয়, ও আমার বেঁচে থাকার শক্তি ও অনুপ্রেরণা৷” পাশাপাশি দেশের অন্য এসিড আক্রান্ত মহিলাদের উদ্দেশ্যে প্রমোদিনী বলেন, “দেশের সকল এসিড আক্রান্ত মহিলাদের উদ্দেশ্যে আমি একটাই কথা বলতে চাই যে, তাদের বাঁচার আশা ত্যাগ করা উচিত নয়। বরং তাদের উচিত নতুনভাবে স্বপ্ন দেখা৷”
২০০৯ সালের ৪ মে ওড়িশা জেলার জগৎসিংপুরে সন্তোষ কুমার বেদান্ত নামে একজন সেনা আধিকারিক প্রমোদিনীর মুখে এসিড ছোঁড়ে। এই ঘটনার পর দীর্ঘ ৭ মাস কটকের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল প্রমোদিনী। তারপর সে আরো ৫ বছর বাড়িতে শয্যাগত ছিল এবং সেই সময়কালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে কটকের অন্য একটি হাসপাতালে ফের ভর্তি করা হয়। এখানেই প্রমোদিনীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে সরোজ সাহু’র। তারপর ২০১৬ সালে সে প্রমোদিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং ২০১৮ সালে লখনৌতে তাদের এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়।