শুধু বিজেপি নয়, ‘পিকে’র থেকে সাবধানে সিপিএমও!

শুধু বিজেপি নয়, ‘পিকে’র থেকে সাবধানে সিপিএমও!

দেবময় ঘোষ: তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, কংগ্রেস এবং প্রশান্ত কিশোর (পিকে) – এই চার রাজনৈতিক শক্তি এক হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। সরাসরি না হলেও প্রচ্ছন্নে। আবহে। – এমনই আশঙ্কা করছে বিজেপি। এমন হতেও পারে, ধারণা গেরুয়া শিবিরের। পাল্টা পরিকল্পনাও তৈরি রাখা হচ্ছে।

এই বাংলায় ইতিমধ্যেই সিপিএম এবং কংগ্রেসের কয়েকজন নেতারা আগে থেকেই এই সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান তো লোকসভা নির্বাচনের সময় তার দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন – বামফ্রন্টকে সমর্থন না করে বরং তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করাই ভাল।

আবার উল্টো দিকে এটাও সত্যি যে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস’কে তাদের সাথে একযোগে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যদিও সে ইঙ্গিত পত্রপাঠ খারিজ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তৃণমূলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় কার লাভ হবে তা নিয়ে সন্দিহান বাম – কংগ্রেস।

সেই সময়, সিপিএম বিধায়ক তন্ময় চক্রবর্তী এবং আনিসুর রহমান বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূলকে ইস্যু বুঝে সমর্থনের কথা বলেছেন। আবার তৎকালীন কংগ্রেস নেতা এবং মুখপাত্র (এখন উনি তৃণমূল কংগ্রেসে আছেন) ওমপ্রকাশ মিশ্র প্রায় একইরকম কিছু বলেছেন।

তবে, সিপিএমের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক রণকৌশল বলছে, সিপিএম এর পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক রণকৌশলগত লাইন নির্ধারিত হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বিজেপি-কে পরাস্ত করা, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার থেকে তাদের অপসারণ করা। পশ্চিমবঙ্গেও প্রাথমিক লক্ষ্য বাংলা ও ভারতের স্বার্থে তাদের পরাস্ত করা। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এই লক্ষ্য পূরণ করা যায়।

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বিজেপি-কে পরাস্ত করতে গেলে তৃণমূল কংগ্রেসকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে, পরাস্ত করতে হবে। তৃণমূল বাংলায় বিজেপি-কে প্রবেশের রাস্তা করে দিয়েছে। তাদের ওপরে নির্ভর করেই বিজেপি বাংলায় পা রেখেছে। তৃণমূল বিজেপি-র সঙ্গে আঁতাত করেছিল, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এনডিএ সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। বিজেপি-র বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে শূন্য৷’’

তার আরও বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে গভীর জনঅসন্তোষ রয়েছে। তৃণমূলের হিংসা ও শাসানির রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষের তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। কেউ যদি বলেন বিজেপি-কে পরাস্ত করতে তৃণমূল সহ সকলকে নিয়ে চলতে হবে তা হবে আত্মঘাতী। সেক্ষেত্রে সমস্ত প্রতিষ্ঠান-বিরোধী, শাসক দলের বিরোধী ভোট বিজেপি-র কাছে চলে যাবে। এই ধরনের কৌশল বিজেপি-র জয়কেই উলটে নিশ্চিত করবে। বাংলায় প্রয়োজন বিজেপি-বিরোধী, তৃণমূল-বিরোধী সমস্ত ভোটকে সর্বোচ্চ সম্ভব এক জায়গায় জড়ো করা। এই লক্ষ্য নিয়েই চলার কথা সিপিএম-র কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অলিমুদ্দিন স্ট্রিট জানে, সতর্ক হাতেই হবে। পি কে সাধারণ মানুষ নন। যে ছকে ২০১৯ সালে সিপিএম বা বাম ভোট ভেঙেছে বিজেপি, সেই ছকই কাজে লাগাতে চাইবেন তিনি। কিন্তু, মাত্র সাড়ে ছয় শতাংশ ভোট আর ক্ষয় করতে চায় না সিপিএম। কারণেই তন্ময় ভট্টাচার্যের কথার অনুমোদন করা হচ্ছে না। বিজেপিকে নিয়ে তৃণমূলের এবং তৃণমূলকে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক বিপজ্জনক প্রবণতা চালু করার চেষ্টা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *