সাগরের অতলে গ্যাসের পাইপে ফাটল! কী ভাবে ঘটল বিপত্তি, ক্ষতিই বা কত? পিছনে কি রাশিয়া?

সাগরের অতলে গ্যাসের পাইপে ফাটল! কী ভাবে ঘটল বিপত্তি, ক্ষতিই বা কত? পিছনে কি রাশিয়া?

মস্কো: বাল্টিক সাগরের নীচ দিয়ে চলে গিয়েছে দুটি প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইন-নর্ড স্ট্রিম ১ এবং ২। যা রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দুটি পাইপলাইনেই আকস্মিকভাবে গ্যাস লিক শনাক্ত করা হয়। যা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। এটাই বিশ্বের ইতিহাসে সবথেকে বড় গ্যাস লিকের ঘটনা বলেও দাবি করেছেন অনেকে৷ এর ফলও ভয়ঙ্কর৷ 

আরও পড়ুন- ডাকাবুকো! আক্রমণের মুখে ভালুকের গালে সপাটে চড়, রক্ষা পেল প্রিয়জন আর প্রিয় সারমেয়

সমুদ্রের উপর প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মিথেন গ্যাসের বুদবুদ উঠতে দেখা গিয়েছে। এদিকে গ্যাস লিকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা৷ এই ঘটনার পিছনে নাশকতার অভিযোগ এনেছে  রাশিয়া৷ অন্যদিকে  ইউরোপীয় দেশগুলির দাবি, এর পিছনে হাত রয়েছে মস্কোর৷ এখন প্রশ্ন হল সাগরের অতলে থাকা এই দুটি গ্যাসের পাইপলাইন কেন ফুটো হল?, এর ফলে কী ক্ষতি হবে?  

২৬ সেপ্টেম্বরের কথা৷ নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইনের অপারেটর হঠাৎ জানান, পাইপ লাইনে আচমকাই চাপ কমে গিয়েছে। এরপরেই ডেনমার্ক জানায়,  সম্ভবত ড্যানিশ জলসীমায় থাকা দুটি নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের একটিতে ফাটল ধরেছে। সেখান থেকেই গ্যাস লিক করতে শুরু করেছে। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের অপর এক অপারেটর সমুদ্রের তলদেশে থাকা গ্যাস পাইপলাইনে চাপ কমার কথা জানান। ২৭ সেপ্টেম্বর সুইডেনের মেরিটাইম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন  নর্ড স্ট্রিম ১-এ দুটি জায়গা থেকে গ্যাস লিক হচ্ছে বলেও সতর্ক করে দেয়। এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য ডুবুরিদের একটি দল পাঠায় আমেরিকা৷ 

এদিকে, গ্যাস লিকের জেরে বাল্টিক সাগরের তলদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইনে “কয়েকশো কিলো বিস্ফোরকের অনুরূপ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানায় ডেনমার্ক এবং সুইডেন সরকার। বিস্ফোরণের ফলে যে কম্পন তৈরি হয়, রিখটার স্কেলে তার তীব্রতা ছিল ২.৩ এবং ২.১। সুদীর্ঘ এই পাইপলাইনে মোট চারটি জায়গায় ফাটল ধরেছে। দুটি ডেনমার্কের জলসীমায়,  অন্য দুটি সুইডিশ জলসীমায়।

কী ভাবে এই লিক হল?

কেন বা কী ভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের এই পাইপে ফাটল ধরল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়,  এভাবে পাইপ ফুটো হয়ে যাওয়ার ঘটনা শুধু বিরল নয়, অভূতপূর্ব৷ তবে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রযুক্তিগত ত্রুটি, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ এর পিছনে নাশকতাও অন্যতম কারণ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। ইউক্রেন তো বটেই, ইউরোপের একাধিক দেশ গ্যাস লিকের ঘটনার পিছনে মস্কোর হাত দেখছে৷ পোল্যান্ড ডেনমার্কও অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না আন্তর্জাতিক মহল। যুক্তরাজ্যের শক্তি উপদেষ্টা সংস্থা ওয়াট-লজিকের যুক্তি, পাইপগুলি একদম নতুন৷ ফলে সেই পাইপ লিক হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই৷ কী ভাবে নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপ লাইনে ফুটো হল, তা তদন্ত করার জন্য তৈরি হচ্ছে ডেনমার্ক, সুইডেন, জার্মানি, সহ একাধিক দেশ।

সম্ভাব্য কী কী ক্ষতি  হতে পারে?

বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপে ফাটল ধরার অর্থ হল নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনগুলি আর আসন্ন শীতে ইউরোপে কোনও গ্যাস দিতে পারবে না। বড়সড় ক্ষতি হয়ে থাকলে দুটি গ্যাস লাইনই স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।  পাশাপাশি  গুরুতর নিরাপত্তাগত এবং পরিবেশগত বিপদও রয়েছে। যে অংশে সাগরের জলে গ্যাসের বুদবুদ দেখা যাচ্ছে সেই অঞ্চলে প্রবেশ করলে জাহাজ ডুবে যেতে পারে। জলে এবং বাতাসে লিক হওয়া গ্যাসে আগুনও জ্বলে উঠতে পারে। তা থেকে বড় অঘটন দেখা দিতে পারে৷ 

 

 

কেন সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে রাশিয়াকে?

রয়্যাল ড্যানিশ ডিফেন্স কলেজের সেন্টার ফর মেরিটাইম অপারেশনের গবেষক অ্যান্ডার্স পাক নিলসেন জানাচ্ছেন, বাল্টিক সাগরের নীচে গ্যাস পাইপ লিক করার সময়টা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ঠিক এই সময় একটি নতুন গ্যাস পাইপের উদ্বোধন করা হচ্ছে। যে পাইপলাইনের মাধ্যমে নরওয়ে থেকে পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। তিনি মনে করছেন, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে, নরওয়ের গ্যাস পাইপেও এমন কিছু ঘটতে পারে বলে সংকেত পাঠানো হচ্ছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এর ফলে ইউরোপের গ্যাসের বাজারে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। আর এই বিশৃঙ্খলা থেকে যে দেশ সবচেয়ে বেশি ফায়দা লুটবে, সে হল রাশিয়া।