কলকাতা: বৈশাখ এখনও আসেনি। তার আগেই হাঁসফাঁস করা গরমে যেন নাভিশ্বাস উঠেছে। চৈত্রের বাতাসে আগুনের হলকা৷ জেলায় জেলায় বইছে লু। তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস৷ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই বাচ্চাদের স্কুল সকালে করার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি এগিয়ে আনা হয়েছে গ্রীষ্মের ছুটি৷ ২৪ মে-র বদলে ২ মে থেকে সরকারি স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হবে৷
আরও পড়ুন- তীব্র গরম, এগিয়ে আসছে গ্রীষ্মের ছুটি, কবে থেকে বন্ধ হবে স্কুল?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হবে৷ বৃষ্টির স্বস্তির কোনও আশা নেই৷ বৃহস্পতিবার কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁতে পারে৷ আগামী চারদিন পরিস্থিতি বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই৷ বরং চৈত্র শেষের কলকাতায় রয়েছে তাপপ্রবাহের সতর্কতা৷ আগামীকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সবকটি জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ যদিও বুধবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি চলছে৷ আজ থেকে কলকাতা-সহ হাওড়া, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান জেলায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি থাকবে৷ ১৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল, দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা থাকছে৷
আগামী রবিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহের পর যে ঝড়বৃষ্টির হাত ধরে পরিবেশ শীতল হবে, সেই আশা বৃথা! আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ দাস স্পষ্ট জানিয়েছেন, এখনই বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই৷ বরং, রবিবারের পরেও তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি চলতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচদিনের পূর্বাভাস জারি করা যায়। তাই আপাতত রবিবার পর্যন্ত পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় এই সময়ে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন গণেশ দাস৷ এদিকে, তাপপ্রবাহের পূর্বাভাসে উদ্বিগ্ন বঙ্গবাসী। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ উপকূলবর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রিতে পৌঁছলেই তা তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়। তবে সমতলে তাপপ্রবাহ ঘোষণা করতে গেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অন্তত ৫ ডিগ্রি বেড়ে ৪০ ডিগ্রির পারদ ছুঁতে হয়।
এদিন মুর্শিদাবাদ ও বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির বেশি। অন্যদিকে, সল্টলেক, আসানসোল, বর্ধমান, পুরুলিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। চৈত্রেই কেন এমন পরিস্থিতি? আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছে, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হু হু করে আমাদের রাজ্যে ঢুকছে শুকনো গরম হাওয়া৷ সঙ্গে চড়া রোদ। অথচ বঙ্গোপসাগর থেকে সে ভাবে জলীয় বাষ্প স্থলভাগে ঢুকছে না। তাই আপেক্ষিক আর্দ্রতাও রয়েছে অনেকটাই কম। ফলে গায়ে গরমের ছেঁকা লাগছে৷ খুব বেশি ঘাম ঝরছে না। আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড অনুযায়ী, শেষবার ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পার করেছিল। এবারও সেই আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না৷
আগামিকাল অর্থাৎ শুক্রবার থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতা, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার কয়েকটি জায়গায় তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি থাকবে। একই পরিস্থিতি থাকবে উত্তরবঙ্গের তিন জেলা মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের বেশ কিছু জায়গাতেও। ওই জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>