বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি: বাংলা বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে নীতীশ কুমারের দল সংযুক্ত জনতা দল। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় ঘুরে সেখানকার সাংগঠনিক প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠক করছেন নীতীশ কুমারের বঙ্গ সেনানিরা। সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে বিস্তারিত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর কতগুলি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা হবে, তা স্থির করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের রাজ্য সভাপতি অশোক দাস জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে রাজ্য সফরে কেন্দ্রীয় নেতারাও আসবেন, বিশেষ করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রামচন্দ্র প্রসাদ সিংয়ের মতো নেতারাও রাজ্যে প্রচারে আসতে পারেন বলে দলের নেতাদের দাবি। বিহারে নীতীশ কুমারের ‘সুশাসনের মডেল’কে সামনে রেখেই বঙ্গের ভোটযুদ্ধে নামতে চান অশোক দাসেরা।
সংযুক্ত জনতা দলের অন্দরের খবর, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জেলাকে চিহ্নিত করে সেখানে লাগাতার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ঝাড়খণ্ড দিসম পার্টি, আদিবাসী সেঙ্গল অভিযানের মতো তপশিলি জাতি ও উপজাতি বিভিন্ন সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে মোর্চা তৈরি করে লড়াইয়ের ময়দানে নামার সলতে পাকানোর কাজ শুরু করেছে জেডিইউ এর বঙ্গ ব্রিগেড। মঙ্গলবার গাজোলে একটি জনসভাও করেছে এই তিন দলের মোর্চা। সেখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে বলে দাবি দলের নেতাদের। আদিবাসী সংগঠনের নেতা সালখান মুর্মু, রাজ্য সভাপতি অশোক দাস ছিলেন সেই বৈঠকে। পুরুলিয়া থেকে শুরু হয়েছে এই তিনদলের মোর্চার বিশেষ প্রচারাভিযান, আজ কোকরাঝাড়ে সভা করে আগামিকাল ঝামশেদপুরে ফিরে যাবেন তিনি।
জেডিইউয়ের তরফে আদিবাসী সমাজে বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘‘সালখান মুর্মু শুধুমাত্র আপনাদের ধর্মগুরু বা নেতা নন, উনি আমাদেরও নেতা।’’ আর এই বার্তা দেওয়ার ফলেই তাঁদের সভায় ‘ভাল সাড়া’ পড়েছে বলে দাবি করেছেন রাজ্য সভাপতি। তাঁর দাবি মালদার গাজোলের সভায় ১০ হাজারের বেশি মানুষের সমাগম হয়েছিল। দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে প্রায় ৫ হাজার, পুরুলিয়ায় ২ হাজার লোকের সমাগম হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি৷ রাজ্য সভাপতির কথায়, ‘‘কতগুলি আসনে লড়া হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়, যে হারে সাড়া পড়েছে, জানুয়ারির পরেই রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় নেতারা৷ দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ঝুকেছেন। তাঁরাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
কোন জেলায় কত আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে, সেই প্রার্থী বাছাই করা থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ে নজর রেখেছেন জেডিইউ কেন্দ্রীয় নেতারা, তাঁরা সমস্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে দাবি অশোক দাসের। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, আসানসোল, হুগলি, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, মালদা, শিলিগুড়ির ওপর নজর দিয়ে বিশেষ প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি। সমস্ত কর্মসূচিই আদিবাসী সেঙ্গল অভিযানের সঙ্গে মোর্চা গঠন করে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এই প্রচারাভিযান এবং নির্বাচনে লড়াই করা শুধুমাত্র এ রাজ্যে নিজেদের জমি শক্ত করার জন্যই নয়। আগামি ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে নীতীশ কুমারকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চায় জেডিইউ৷ তার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার কৌশল নিয়েছে নীতীশ-ব্রিগেড৷
তবে, নীতীশ কুমারের দল সংযুক্ত জনতা দল বিজেপির নেতৃত্বের থাকা এনডিএর বন্ধু৷ বিহারে নীতীশের নেতৃত্বে সরকারে রয়েছে বিজেপি৷ কিন্তু, বাংলা দখলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমানে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি৷ শক্ত হয়েছে জমি৷ কিন্তু, বাংলায় বিজেপির পাকা ধানে মই দিতে হাজির হবে না নীতীশের জনতা দল? নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে বন্ধু বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে সংযুক্ত জনতা দল? নাকি, বিজেপির সমর্থনে অপেক্ষাকৃত দুর্বল কেন্দ্রে গোঁজ প্রার্থী দিয়ে ভোট কাটাকাটিতে সামিল হবে নীতীশের দল? এবিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও বাংলা ভোটে সংযুক্ত জনতা দলের প্রস্তুতি বদলে দিতে পারে সমীকরণ! আশঙ্কা পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের৷