কলকাতা: আজকাল মাতৃত্ব নিয়ে ধ্যানধারণাটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে৷ কেটেছে অনেক ছুঁৎমার্গ৷ কর্মব্যস্ত জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে অনেকেই তাই ঝুঁকছেন ফার্টিলিটি সেন্টারের দিকে৷ বিশেষ করে কর্মরত মহিলাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি করে দেখা দিচ্ছে৷ এই ধরুন অরুনিমা দত্তের কথা৷ তিনি তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী৷ অফিসে প্রবল কাজের চাপ৷ তার উপর নাইট শিফট৷ অপেক্ষা প্রোমোশনের৷ তাহলে অন্তত নাইট শিফটটা করতে হবে না৷ কিন্তু, সেই অপেক্ষায় তো আর মাতৃত্বের বয়স থেমে থাকবে না৷ অগত্যা শহরের একটি ফার্টিলিটি সেন্টারের দ্বারস্থ হলেন তিনি। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ডিম্বাণু সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন অরুনিমা৷ যাতে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়ে গেলেও শরীর বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
শহরে এমন উদাহরণ খুঁজলে মিলবে ভূরি ভূরি৷ কেরিয়ারের পিছনে ছুটতে গিয়ে যাঁদের পেরিয়ে যাচ্ছে মাতৃত্বের বয়স৷ চিকিৎসকরা মনে করেন, ৩০ বছর বা তার আশপাশেই মা হওয়া ভালো। বেশি দেরি হলে ডিম্বাণুর মান ও পরিমাণ দুটোই কমতে থাকে। তাই দম্পতিরা ছুটছেন ডিম্বাণু সংরক্ষণের পথে৷
চিকিৎসকরা বলছেন, ডিম্বাণু সংরক্ষণ বা এগ ফ্রিজিং এখন ট্রেন্ড৷ মহানগরে এগ ফ্রিজিংয়ের গ্রাফ রীতিমতো ঊর্ধ্বমুখী। বিভিন্ন ফার্টিলিটি সেন্টার সূত্রে জানা যাচ্ছে, ডিম্বাণু সংরক্ষণের ব্যবস্থা এই শহরে আগেও ছিল। তবে তা নেহাতই শারীরিক জটিলতার কারণে। যাকে বলা হয় ‘মেডিক্যাল এগ ফ্রিজিং’। যেমন ধরুন কেমোথেরাপির ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত তরুণীর ডিম্বাণু উৎপাদন ব্যাহত হতে পার৷ সেই আশঙ্কা থেকে তাঁর ডিম্বানু সংরক্ষণ করে রাখা হতো কেমো-র আগেই। কিন্তু, হালফিলের জমানায় শুরু হয়েছে ‘সোশ্যাল এগ ফ্রিজিং’৷ কেউ করছেন কেরিয়ারের তাড়নায়, কেউ আবার ডিভোর্সের জেরে কিংবা অন্য কোনও কারণে৷ কেউ আবার এগ ফ্রিজিং করছেন মন মতো পার্টনার না-পেয়ে। কিন্তু এগ ফ্রিজিং-এর খরচ কত জানেন?
বিভিন্ন ফার্টিলিটি ক্লিনিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ডিম্বানু সংরক্ষণের জন্য প্রথমে ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ লক্ষ টাকা লাগে৷ তার পর প্রতি বছর ৩০-৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ যাই হোক না কেন, শহরের বুকে এটাই এখন ‘রাইজিং ট্রেন্ড’৷ ‘বিড়লা ফার্টিলিটি’-র বন্ধ্যত্বরোগ বিশেষজ্ঞ স্বাতী মিশ্রর কথায়, ৯০-এর দশক থেকেই কলকাতায় চালু রয়েছে মেডিক্যাল এগ ফ্রিজিং৷ কিন্তু ‘সোশ্যাল ফ্রিজিং’ চালু হয়েছে কয়েক বছর ধরে। এই ‘সোশ্যাল ফ্রিজিং’ এখন প্রায় ৬০-৬৫%।
কী ভাবে হয় এগ ফ্রিজিং? স্বাতী মিশ্র জানান, হরমোন স্টিমুলেট করে প্রথমে এগের সংখ্যা বাড়ানো হয়। তার পর তা ডিম্বাশয় থেকে বের করে হিমাঙ্কের অনেক কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। এ ভাবে রাখলে বহু বছর ভালো থাকে ডিম্বানু। পরে যখন ওই মহিলা মা হতে চাইবেন, তখন ওই ফ্রোজেন এগ-কে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে তার সঙ্গে নিষেক ঘটানো হয় তাঁর স্বামী কিংবা পছন্দের পুরুষের স্পার্ম বা শুক্রাণুর। তিনি আরও জানান, সিঙ্গল মাদাররা অনেক সময় সন্তানের আশায় স্পার্ম ব্যাঙ্কের শুক্রাণু ব্যবহার করে থাকেন।