ওয়াশিংটন: কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাস সার্স-কোভ-২ কোনও বায়ুবাহিত ভাইরাস নয়, অবশেষে খারিজ করা হল এতদিনের এই বিশ্বাসযোগ্য তথ্য। ‘দি ল্যানসেট’ জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসকে বায়ুবাহিত প্যাথোজেন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেনের ৬ বৈজ্ঞানিকের লেখা এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, “কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী সংক্রমক করোনা ভাইরাস সার্স-কোভ-২ একটি বায়ুবাহিত প্যাথোজেন। হাওয়ার মাধ্যমে এই ভাইরাস মানব দেহে ছড়িয়ে পড়ছে।” এই দাবিকে আরও প্রকট করার জন্য ওই ৬ বৈজ্ঞানিক ১০টি বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিও দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা অবিলম্বে কোভিড-১৯ রোগের সুরক্ষাবিধিতে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছেন।
‘দি ল্যানসেট’ জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টে গবেষকরা জানিয়েছেন:
১. বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে সার্স-কোভ-২ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাস শুধুমাত্র মিউকাসবাহিত নয়। মানুষের আচার-আচরণ, কথা বলার মাধ্যম, বদ্ধ ঘর থেকেও এই ভাইরাসের সংক্রমণই তার প্রমাণ।
২. এক ঘরে না থেকে কোয়ারেন্টাইন হোটেলের পাশাপাশি ঘরে থাকার পরও সংক্রমণ হচ্ছে। এর অর্থ সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের লং রেঞ্জ ট্রান্সমিশন হচ্ছে, যা একমাত্র বায়ুবাহিত ভাইরাসের ক্ষেত্রেই হয়।
৩. গবেষকদের মতে, ৩৩ থেকে ৫৯ শতাংশ ক্ষেত্রে হাঁচি বা কাশি হয়নি এমন উপসর্গহীন বা প্রাথমিক উপসর্গযুক্ত কোভিড আক্রান্তদের থেকেই সংক্রমণ হয়েছে। এক্ষেত্রেও এই বৈশিষ্ট্য ভাইরাসের বায়ুবাহিত সংক্রমণকেই নির্দেশ করে।
৪. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা বাইরে বের হন তাদের থেকে যারা বদ্ধ ঘরের মধ্যে থাকেন তাদের মধ্যেই সংক্রমণ বেশি হয়েছে।
৫. সার্স-কোভ-২ বায়ুবাহিত ভাইরাস নয়, এমন কোনও অকাট্য প্রমাণ আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকদের হাতে আসেনি।
৬. খাঁচায় বন্দি রয়েছে এমন প্রাণীদের বায়ুথলিতে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। যা প্রমাণ করে এই ভাইরাস বায়ুবাহিত।
৭. রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভাইরাসের নসোকোমিয়াল ইনফেকশন-এর মাধ্যমে যেসব স্বাস্থ্যকর্মীরা সারাদিন পিপিই কিট পড়ে কাজ করছেন তারাও সংক্রমিত হয়েছেন।
৮. বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাতাসে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এই ভাইরাস বাতাসে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে।
৯. করোনা আক্রান্তদের হাসপাতলে এয়ার ফিল্টার, পাইপলাইন-সহ এমন সব জায়গায় সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যেখানে শুধুমাত্র অ্যারোসোল পৌঁছতে পারে।
১০. এই ভাইরাসের ফুসফুসে আক্রমণের পথ দেখেও প্রমাণিত হয় যে এই ভাইরাস বায়ুবাহিত প্যাথোজেন।
এতদিন মনে করা হচ্ছিল যে, করোনা ভাইরাস বাতাসে ছড়ায় না। কিন্তু এবার সেই দাবিও খারিজ করে দিলেন তিন দেশের ৬ বৈজ্ঞানিক। তাদের এই দাবি প্রমাণিত এবং গৃহীত হলে সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারীর মোকাবিলা অন্য মোড় নেবে। হতে পারে মানুষকে ঘরের মধ্যে থাকাকালীনও অর্থাৎ সবসময়ই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।