করোনার আড়ালে বাড়ছে নয়া বিপদ! ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে প্রতারণা

যেহেতু করোনা নিয়েই মানুষের আগ্রহ বেশি তাই বিভিন্ন বিশ্বস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তর বা সরকারি মন্ত্রনালয় এমনকি স্কুল, কলেজের নামেও বাল্ক ইমেইল পাঠাচ্ছে হ্যাকাররা। কখনো আবার সন্দেহজনক লিংক-ও পাঠাচ্ছে।

কলকাতা: মহামারী করোনার আতঙ্কে ঘুম উড়েছে বিশ্ববাসীর কিন্তু এই দুর্দিনেও সক্রিয় বা বলা যায় অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাইবার ক্রিমিনালরা। করোনা-র নামেই বিশ্বজুড়ে ফাঁদ পেতেছে। এখন সব মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার খুললেই  করোনা সম্পর্কে সচেতনতামূলক মেসেজ, মেইল, বিজ্ঞাপন চোখে পড়ছে। সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থাই নিজের মত করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে অনলাইনে। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে অনলাইন প্রতারণা চক্রগুলি। 

যেমন আপনার ফোনে মেসেজ এলো করোনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই ওয়েবসাইটে বা এখানে ক্লিক করুন।  কৌতূহলবশত সেখানে ক্লিক করলেই সর্বনাশ। মুহূর্তেই আপনার মোবাইলের সব তথ্য চলে যাবে প্রতারণা চক্রের হাতে। এরপর হঠাৎ হয়তো দেখবেন আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা। শুধু তাই নয়, এই ধরনের মেসেজ বা মেইল থেকে ফোন এবং কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করছে হ্যাকাররা।

যেহেতু কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির সরকার ইন্টারনেটের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে, তাই সাধারণ মানুষও চাইছে নিজেদের আপডেট রাখতে। আর হ্যাকাররা এরই সুবিধা নিচ্ছে।

করোনা আতঙ্কে দেশের সমস্ত স্কুল, কলেজ ও সিনেমা হল বন্ধ রাখা হয়েছে। এবিষয়ে রীতিমতো অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি হিসাবে ই-মেইল আসছে অনেকের কাছেই। সেখানে আরও তথ্যের জন্য একটি লিঙ্কে ক্লিক করতে বলা হয়েছে। যারা এটি করেছেন তাঁরা কিন্তু তাঁদের ফোন এবং কম্পিউটারের সর্বনাশ ডেকে আনছেন।

অনেকে এমন ই-মেইল পাচ্ছেন যেখানে বলা হচ্ছে তারা ডাব্লুএইচও অফিস থেকে নিখরচায় স্বাস্থ্যপরীক্ষার কিট সরবরাহ করে। ম্যালওয়্যার হান্টার টিম তেমনই একটি ই-মেইল সনাক্ত করেছে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নামে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের উপর আপডেট হওয়ার কথা বলছে। এই মেইলে এমন একটি ফাইল রয়েছে যা সম্পুর্ন অন্য একটি পেজে নিয়ে যেতে চাইছে ফলে ফোন এবং কম্পিউটারগুলিতে একটি এনক্রিপ্টড ম্যালওয়ার ইনস্টল হয়ে যাচ্ছে যেটা কেউ দেখতেও পাচ্ছেননা।

এমনই একটি 'ডেডলি করোনা ভাইরাস ম্যাপ'। যা অবিকল জন হপকিন্স করোনার ওয়ার্ল্ড ম্যাপের একটি অনুলিপি। সম্প্রতি রিসার্চ ল্যাবগুলি এর খোঁজ পেয়েছে।  এটি তৈরী করা হয়েছে আপনার সমস্ত জরুরী তথ্য যেমন ব্যবহারকারীর নাম, পাসওয়ার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড নম্বর চুরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই ম্যাপ থেকে বিস্তারিত জানতে গেলেই  AZORult চিহ্নিত একটি ম্যালওয়্যার সক্রিয় হয়ে যাবে যা মূলত তথ্য চুরির জন্য।

এই আক্রমণগুলি কীভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা সাইবার বিশেষজ্ঞরা তাঁরা বলছেন যে একবার দূষিত ইমেলটি খোলার পরে কম্পিউটার সিস্টেমে একটি লুকানো ফাইল সংরক্ষিত হয়ে যায় যা ব্যবহারকারীর অজান্তেই হ্যাকারকে ফোন বা কম্পিউটারে বুকে পড়ার অনুমতি দেয়। এরফলে হ্যাকাররা দূর থেকেই আপনার সংবেদনশীল ফাইল, ই-মেল বা ব্যাঙ্কের লেনদেন সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জানতে পারবে। 

সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং নিরাপত্তা দলগুলি পুরো বিষয়টির ওপর নজর রাখছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন করার চেষ্টা করছে। কারণ ভারত সহ বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই হ্যাকাররা এখন করোনাকেই  নিশ্চিত মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে এর মূল কারণ হল এই মহামারী নিয়ে মানুষের ভীষণভাবে কৌতূহল এবং আপটেড থাকার হুজুগ। তাই বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইল বা কম্পিউটারে ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে বলছেন। আর তা সম্ভব না হলে কিছু গাইডলাইন মেনে চলতে বলছেন। তেমন বিগত কয়েকদিনের তথ্য অনুসারে তাঁরা দেখেছেন যে এখন যেহেতু করোনা নিয়েই মানুষের আগ্রহ বেশি তাই বিভিন্ন বিশ্বস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তর বা সরকারি মন্ত্রনালয় এমনকি স্কুল, কলেজের নামেও বাল্ক ইমেইল পাঠাচ্ছে হ্যাকাররা। কখনো আবার সন্দেহজনক লিংক-ও পাঠাচ্ছে। এক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই এই আসল নকলের পার্থক্য বোঝার সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *