নয়াদিল্লি: ‘‘দুর্ভাগ্যবশত প্রধানমন্ত্রীর সেই সৎ সাহস নেই৷ তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই৷ আর সেকারণেই তাঁদের ওপর পুলিশ দিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে৷” মন্তব্য রাহুল গান্ধীর৷ রাজনৈতিক বিচারে বিরোধিতার জন্য এই মন্তব্য হলেও বাস্তবে দেশের যুব সমাজের কাছে এটাই এখন চরমতম সত্যি৷ তবে স্বভাবতই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পাল্টা দোষারোপের একটা চল আছে৷ আর আর ইদানিং অর্থনীতি, বেকারত্ব, এমনকি নাগরিকত্বর মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সমাধান সূত্র আঁধারে রেখেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিরোধিতার জন্য এই প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের শাসক দলের শীর্ষস্থানীয়রা৷ আর এক্ষেত্রে একমাত্র হাতিয়ার অতীতের সরকারগুলির এই ধরনের দুর্বলতা খুঁজে বার করা৷
ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও)এর পরিসংখ্যান যেখানে বলছে বিগত ৪৫ বছরে ২০১৭-২০১৮ এই একবছরে বেকারত্বের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তখনও সেই অতীতের গল্পই শুনিয়ে যাচ্ছেন শাসক নেতৃত্ব৷ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ''যাঁরা নেতিবাচক কথা বলছেন, তাঁরা মূলত বেকারত্বের যুক্তি দিচ্ছেন৷ এই প্রসঙ্গে একটা প্রশ্নই মাথায় আসে৷ আপনারা ৫০-৬০ বছর দেশ শাসন করলেন৷ দেশের বেকারত্বের সমস্যা দূর করতে কী করেছেন? ১৩০ কোটির দেশের তরুণ প্রজন্মের কাজের জন্য নতুন কিছু করেছেন কি?''
এ প্রসঙ্গে তার জোরালো দাবি, মোদি সরকারের 'স্কিল ইন্ডিয়া' আগামী দিনে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে৷ মঙ্গলবার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেছেন, এভাবে বেকারত্ব বাড়তে থাকলে তুলনায় রোজগার কমতে থাকলে, ছাত্র ও যুবসমাজের ক্ষোভ বিস্ফোরণের রূপ নিতে পারে৷ সম্প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে যুবসমাজের যে রুদ্রমূর্তি প্রকাশ্যে এসেছে তা সেই ইঙ্গিতই বহন করছে৷ তবে বিরোধী শিবিরের দাবি নস্যাৎ করে বেকারত্বের হতাশা নিয়ে গর্জে ওঠা যুবসমাজকে সবরকম শিক্ষা দেওয়ার জন্য একের পর এক দাওয়াই তৈরি করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷
এবার বেকারত্ব দূর করতে একেবারে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চলেছে মোদির মন্ত্রিসভা৷ কয়েকদিন আগেই বেকারত্ব কমাতে যুব সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শীর্ষ মন্ত্রী-আমলাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন তিনি৷ ১০ জানুয়ারি লিখিত আকারে জমা পড়েছে সেই পরামর্শগুলি৷ সম্ভবত এই পরামর্শ অনুসারেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হতে পারে৷ যদিও ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুব সমাজের এই দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টিতেই বেশি জোর দিয়ে আসছেন তিনি৷
ভারতীয় যুবসমাজকে দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি তাদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মানসিকতা তৈরির লক্ষ্যে পৃথকভাবে দক্ষতা বিকাশ এবং উদ্যোক্তা মন্ত্রক গঠন করেছেন৷ ব্যক্তিগতভাবে শংসাপত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য 'স্কিল ইন্ডিয়া' চালু করেছেন৷ সম্প্রতি শিল্প ক্ষেত্রে যুবসমাজের প্রযুক্তিগত দক্ষতা তৈরীর উদ্দেশ্যে চালু করেছেন রিস্কিলিং অথবা আপস্কিলিং অফ আইটি ম্যানপাওয়ার ফর এম্প্লয়াবিলিটি (প্রাইম)৷ এত শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বেকারত্বের পালে হাওয়া লাগেনি৷ বিশিষ্টদের অনেকেই বলছেন নাগরিক পঞ্জি তৈরীর বদলে কেন্দ্রীয় সরকারের এই মুহূর্তে মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বেকারত্ব পঞ্জি তৈরি করা৷ সব মিলিয়ে বিরোধীদের কথায় কেন্দ্রীয় সরকারের এই সমস্ত পরিকল্পনাই যে 'ছেলেভোলানো',এই আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত জোরদার হচ্ছে৷