কলকাতা: আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরী..মহালয়ার সকালে বীরন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর সেই সুর বাঙালির আবেগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম কেটে গেলেও সেই আবেগ ফিকে হয়নি। প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে বাঙালির ড্রয়িংরুমে পড়ে থাকা রেডিওটা বেজে ওঠে। আকাশ বাতাস মুখরিত হয় মহিষাসুরমর্দিনী- চণ্ডীপাঠে। তবে গত ১৯ বছর ধরে বছরের বাকি দিনগুলো শহর কলকাতার ঘুম ভাঙত রেডিওম্যাম মীরের কণ্ঠ শুনে৷ সম্প্রতি সেই দায়িত্ব থেকে তিনি অব্যাহতি নিলেও বাঙালির কানে আজও তাঁর মধুর কণ্ঠের ছোঁয়া৷ তাই তো এবার মীরের কাছে অবাক করা আবদার করে বসলেন এক অনুরাগী৷ তাঁর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শোনার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন তুষার সেনগুপ্ত নামে এক জনৈক৷ ফেসবুকে ভক্তর কাছ থেকে এমন অনুরোধ পেয়ে হতবাক খোদ মীর৷
আরও পড়ুন- হেফাজতে পেল না সিবিআই, আর্জি খারিজ করে সুবীরেশকে জেলে পাঠাল আদালত
সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে মীরের গলায় চণ্ডীপাঠ শোনার আবদার করে ওই অনুরাগী লিখেছেন, ”বলতে ভীষণ ভয় করছে। জানি এটা শুনলেই নস্টালজিয়ায় ভোগা পাবলিক হারেরের করে তেড়ে আসবে। হয়তো হিন্দুভীর’রা ভর্চুয়াল ত্রিশূলের খোঁচা মারবে। তবুও মনের কথাটা একবার অন্তত না বলে পারছি না। যাদের অনুভূতি আহত হবে তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। তবুও বলতেই হচ্ছে-মীর আসরফ আলির ভরাট কণ্ঠে ইমোশন অ্যাক্টিং সব আছে। ওঁর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শোনার ইচ্ছে রইল। উনি একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন।”
এই পোস্ট নজর এড়ায়নি মীরের৷ তিনি ওই পোস্টটি শেয়ার করে লেখেন, ‘ধৃষ্টতা নেই আমার। মার্জনা করবেন, তবে আপনি যে আমায় নিয়ে এটা ভেবেছেন সেটাই বড় প্রাপ্তি আমার কাছে।’ শুরুটা করেছিলেন তুষার৷ কিন্তু, তাঁকে সমর্থন জানাতে এগিয়ে এলেন আরও অনেকে৷ তাঁদের সকলেই একবাক্যে বললেন, শিল্পীর কোনও ধর্ম হয় না, কোনও জায় হয় না৷ তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠে জানালেন, তাঁরাও তুষার সেনগুপ্তরই দলে৷
তুষার সেনগুপ্তের এই পোস্ট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ শোরগোল৷ প্রসঙ্গত, বছর-কয়েক আগের কথা৷ দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চরম ট্রোলড হয়েছিলেন মীর। তাঁর ধর্ম নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি নেটিজেনদের একাংশ। ফেজ টুপি মাথায় পরে পালটা জবাব দিয়েছিলেন মীরও৷ ধর্ম-বর্ণ, জাতের উর্ধ্বে উঠে এবার সেই মীরের গলায় মহিষাসুরমর্দিনী-চণ্ডীপাঠ শোনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এক বাঙালি৷
এদিন মীরের গলায় চণ্ডীপাঠ শুনতে চেয়ে অপর এক অনুরাগী লিখেছেন, ”একদম৷ উনি চণ্ডীপাঠ করুক .. ভেঙে যাক ধর্মের সব বেড়া, মসজিদের মাইকে মাইকেও বেজে উঠুক চণ্ডীপাঠ মহালয়া! সম্প্রীতির বাংলা!” আরেকজনের মতে, ”সত্যিই দারুন লাগবে , আমি হিন্দু হয়ে বলছি ।। আমিও শুনতে চাই , আমার মনে হয় কণ্ঠের কোনো ধর্ম হয় না।” সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন সব প্রতিক্রিয়ায় আপ্লুত মীরও।
তবে এত বছরে বাঙালি এমন কণ্ঠ খুঁজে পায়নি যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে টেক্কা দেবে৷ স্বয়ং মহানায়ক উত্তম কুমারও সেই স্থান নিতে পারেননি৷ বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠ বাঙালির কাছে আজও নস্ট্যালজিয়া৷ তবে মীরের প্রতি অনুরাগীদের এই ভালোবাসা নিশ্চিত ভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ৷ কারণ, আমরা আজও মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, ভারত সর্বধর্মসমন্বয়ের দেশ।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>