বনগাঁ: সবুজ গাছপালায় ঘেরা অঞ্চল৷ তারই মাঝখান দিয়ে সবুজের বুকে চিরে বয়ে চলেছে ইছামতী। সন্ধ্যা ঘনালেই আঁধার নামে সেখানে। কালো চাদরে ঢাকা পড়ে মনোরম প্রাকৃতিক শোভা৷ চারিদিকে ঝিঁঝিঁপোকার ডাক৷ জোনাকির আলো৷ এক অদ্ভূত নিস্তব্ধতা৷ সেই নিস্তব্ধতা ভাঙে জমিদার বাড়ির ভাঙা খিলান ভেদ ধেয়ে আসা এক কণ্ঠস্বরে৷ মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে যায় শীতল স্রোত। মনে হয় কোনও এক অশরীরী আত্মা যেন মিশে গেল ঘন অন্ধকারে। এখানে কি তেনাদের বাস?
এ এমন এক হাতছানি যা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। ভয়ের আকর্ষণে ছুটে বেরায় রহস্যসন্ধানী মানুষ। ছুটতে ছুটতেই অনেকে খোঁজ পেয়ে গিয়েছেন বাগদার মঙ্গলগঞ্জের নীলকুঠির। স্থানীয় মানুষরা অবশ্য বলছেন, জন্ম থেকে নীলকুঠি দেখে আসছেন৷ কিন্তু ভূতের দেখা পাননি। তাঁদের কাছে সবটাই গল্প।
বনগাঁ মহকুমায় বাগদা ব্লকের মালিপোতা পঞ্চায়েতের মঙ্গলগঞ্জে রয়েছে এই নীলকুঠি। প্রায় ৬৫ বিঘে জমির উপর আড়াইশো বছর আগে এই নীলকুঠি গড়ে উঠেছিল। শোনা যায়, গোবরডাঙার এক ব্যবসাদার মঙ্গলচন্দ্র আঁশের পুত্র লক্ষণচন্দ্র কোনও এক ঘোষবাবুর থেকে জমিদারি কেনেন। তিনি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে গড়ে তোলেন এই নীলকুঠি৷ সেই সঙ্গে তৈরি হয় গুদামঘর, নীল পচানোর বড় চৌবাচ্চা। ১৯০৩ সালে ওই গুদামঘরে একটি প্রাইমারি স্কুল হয়। ১৯৫৭ সালে ওখানে পোস্ট অফিস তৈরির অনুমতি দেন লক্ষণচন্দ্রের ছোট কন্যা সাবিত্রীদেবী।
লোকমুখে প্রচলিত এই কুঠিতেই নাকি তেনাদের বাস। সাহেব ভূত, নেটিভ ভূত সব ধরনের ভূত রয়েছে এখানে। আর সেই ভূত দেখতেই ভিড় জমার ভূতপ্রেমীরা। তাঁদের জন্য সেখানে তৈরি হয়েছে কয়েকটি রিসর্টও। নীলকুঠি দর্শনে এসে মানুষ ভয় পেয়ে তবেই বাড়ি ফেরেন।