নন্দীগ্রাম: নন্দীগ্রাম। দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম সাম্রাজ্যের ভিত টলিয়ে দিয়েছিল এই একটা নাম। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের ঘটনা এই নামটাকে গোটা দেশের সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে নিয়ে এসেছিল। এরই ফলশ্রুতিতে ২০১১-য় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলার মসনদ দখল হয়ে পড়েছিল অনিবার্য। সেদিনের সেই বিপ্লবাত্মক ঘটনার পর কেটে গেছে ১৪টা বছর। ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ফের নতুন রূপে নতুন তাৎপর্যে উঠে এসেছে এই নন্দীগ্রামের নাম। ১৪ বছরে বঙ্গ রাজনীতিতে গুরুত্বের ঠিক কতটা শিখরে পৌঁছেছে পূর্ব মেদিনীপুরের এই গ্রাম? আসুন ভোটের আবহে একবার চোখ রাখা যাক সেদিকে।
২০০৭ সালের ১৪ মার্চের নন্দীগ্রাম হয়তো গোটা বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বীজটা বুনে দিয়েছিল। কেমিক্যাল হাব গড়ার জন্য নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। কিন্তু তার বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। তৃণমূল সমর্থিত এই কমিটির সঙ্গেই সিপিএম ক্যাডারদের ব্যাপক সংঘর্ষে সেদিন রক্তাক্ত হয় ইতিহাসের পাতা। সেদিনের সেই সংগ্রামের স্মৃতি ফিরে ফিরে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের প্রচারেও। মাঝে মাঝেই তিনি বলে উঠেছেন, “ভুলতে পারি নিজের নাম, ভুলবো নাকো নন্দীগ্রাম।”
এবারে ঐতিহাসিক সেই নন্দীগ্রাম থেকেই বিধানসভা নির্বাচনের জন্য লড়াই করার কথা ঘোষণা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।চিরাচরিত ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামকে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য বেছে নিয়ে রাজনীতির আঙিনায় ফের এই গ্রামকে শিরোনামে নিয়ে এসেছেন তিনি। হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রাম থেকে প্রাক্তন দলনেত্রীর বিরুদ্ধে গেরুয়া পতাকা হাতে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী। ফলে জমি আন্দোলনের সেদিনের লড়াকু নেত্রী নাকি ভূমিপুত্র শুভেন্দু, কাকে বেছে নেবেন নন্দীগ্রামের মানুষ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে লাখ টাকার প্রশ্ন। বলা ভালো, ভোটের আগে নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে রাজ্য রাজনীতির মূল সুর।
তৃণমূল বিজেপি ছাড়া এবারের ভোটে জোটবদ্ধ শক্তি হিসেবে লড়ছে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ।হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রাম থেকে এখনও পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি তাঁরা। সংযুক্ত মোর্চার তরফেও কি হাই প্রোফাইল কোনো প্রার্থীকেই দেখা যাবে নন্দীগ্রামে? দানা বেঁধেছে সেই জল্পনাও। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর ফের খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনামে নন্দীগ্রাম। আর তাকে কেন্দ্র করেই ভোট উত্তেজনায় ফুটছে গোটা রাজ্য।