নদীয়া: হেলমেট না পরলে কোনভাবে বাইক স্টার্ট হবে না, এমনকি মদ্যপান করে স্টার্ট নেবে না বাইকটি! এমনই অভিনব এবং অদ্ভুত বাইক আবিষ্কার করলেন নদীয়ার এক শিক্ষক। তবে এইটা তার প্রথম আবিষ্কার নয়, এর আগেও অন্য একটি অভিনব বাইক আবিষ্কার করেছিলেন তিনি, যা চালিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক তথা বাংলার মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সদ্য আবিষ্কৃত এই বাইকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এই বাইক ফুল চার্জ দিলে চলবে ৪০০ কিলোমিটার! এই বাইক আবিষ্কার করে এখন উন্মাদনার কেন্দ্রবিন্দুতে নদীয়ার এই শিক্ষক।
এই অভিনব বাইকের আবিষ্কর্তা নদীয়া জেলার বগুলার বাসিন্দা শুভময় বিশ্বাস। পেশায় শিক্ষক শুভময় জানাচ্ছেন, মূলত গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কথা মাথায় রেখেই এই ধরনের অভিনব বাইক আবিষ্কার করার চিন্তা তার মাথায় আসে প্রথমে। এই নির্দিষ্ট বাইকে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেটা শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। তিনি বলছেন, ইলেকট্রনিক এবিএস দিয়ে এবং জাপানি সেল দিয়ে এমন একটা বাইক তিনি বানিয়েছেন যা, অনায়াসে ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার যেতে পারে। এর জন্য কোনও রকম তেল বা পেট্রোল খরচ হবে না। দুর্ঘটনা যাতে সহজে না ঘটতে পারে সেইজন্য বাইকের দুটি চাকাতে দেওয়া আছে ইলেক্ট্রনিক এবিএস। এর ফলে সামান্য ব্রেক মারলে ও বাইক সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে যেতে সক্ষম। বাইকে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত চলবে।
শুভময় জানাচ্ছেন, লং ড্রাইভের জন্যই তিনি দুটি বাইক বানিয়েছেন। যাতে অনায়াসে ফুল চার্জ দেওয়ার পর নদীয়া থেকে কলকাতা গিয়ে আবার ঘুরে আসা যায়। মাঝপথে কোনরকম পেট্রোল বা ব্যাটারির খরচ একেবারেই হবে না। এই প্রসঙ্গে মূলত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেভ ড্রাইভ সেভ লাইফের কথা বলছেন শুভময়। তিনি বলছেন, প্রতিবছর কয়েকশো মানুষ শুধুমাত্র বাইক দুর্ঘটনার কারণে মারা যাচ্ছে। সরকার এবং পুলিশের তরফে ক্রমাগত সচেতনতা মূলক প্রচার চালানো হলেও সাধারণ মানুষ সচেতন হচ্ছে না। তাই এই বাইকের ক্ষেত্রে তিনি অভিনব আরেকটি সিস্টেম এনেছেন। হেলমেট না পরলে কোন ভাবে এই বাইক স্টার্ট দেওয়া যাবে না, এজন্য অন্যরকমের সেন্সর ব্যবহার করেছেন তিনি। একই সঙ্গে, মদ্যপান করে ও যাতে এই বাইক চালানো সম্ভব হয় তার জন্য আলকোহল সেন্সর লাগিয়েছেন বাইকে। যদি কেউ ১ শতাংশও মদ্যপান করেন, তাহলেও এই বাইক চলবে না।
একইরকমভাবে অভিনব পদ্ধতিতে শুভময় বানিয়েছেন দ্বিতীয় বাইকটিও। সেই বাইকের নাম দিয়েছেন ‘সান পাওয়ার বাইক’। দ্বিতীয় বাইকের অন্যতম সেরা বৈশিষ্ট্য হল, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্টার্ট। অর্থাৎ এই বাইকে কোন চাবির সিস্টেম নেই, বাইকে বসে বায়োমেট্রিকের সাহায্যে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিলেই বাইক স্টার্ট হবে। অর্থাৎ যার ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকবে তিনি এই বাইক চালাতে পারবেন। বাইক চুরি হয়ে গেলেও কেউ বাইক স্টার্ট দিতে পারবে না। তবে এই বাইক চুরি করাও সম্ভব নয়, কারণ এই বাইকে রয়েছে জিপিএস সিস্টেম। অর্থাৎ বাইক কোথায় আছে তা ন্যূনতম সময়ে খুঁজে বের করা সম্ভব। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যখন লকডাউন কার্যকরী হয়েছে, তখনই বাড়িতে বসে এই বাইক আবিষ্কার করে ফেলেন শুভময়। এই ধরনের অভিনব সৌরশক্তি চালিত বাইক আবিষ্কারের খবর সামনে আসার পরই উচ্ছ্বসিত বাইক প্রেমীরা। ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিবেশ বান্ধব বাইক আরো বেশি প্রাধান্য পাবে বলে আশা করছেন এই বাইকের আবিষ্কর্তা শুভময়।