polls
নিজস্ব প্রতিনিধি: শনিবার লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তার আগে যে সমস্ত ভোট সমীক্ষা সামনে এসেছে তার প্রত্যেকটিতেই বিজেপি তথা এনডিএ শিবিরের জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে উল্লসিত গেরুয়া শিবির। কার্যত সমস্ত সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে বিজেপি তথা এনডিএ ৩৭০ পেরিয়ে যাবে। এমনকী একটি সমীক্ষা দাবি করেছে এনডিএ চারশোর গণ্ডিও নাকি পেরিয়ে যাবে। সত্যিই কী তাই হবে? উত্তরটা সম্ভবত না। একটু বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে তথ্য তালাশ করলেই এর স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যেতে পারে।
ঘটনা হচ্ছে গত বছর বিজেপি অসাধারণ ভাল ফল করে একাই ৩০৩ আসনে জয়লাভ করে। বিহারে চল্লিশটি আসনের মধ্যে বিজেপি তথা এনডিএ পায় ৩৯টি আসন। কর্ণাটকের ২৮টির মধ্যে এনডিএ ২৬ টি আসন পায়। মহারাষ্ট্রে ৪৮টির মধ্যে এনডিএ ৪২টি আসন পায়। একই ভাবে রাজস্থানে ২৫-এ ২৫, হরিয়ানায় ১০-এ ১০, মধ্যপ্রদেশে ২৯-এ ২৮, হিমাচল প্রদেশে ৪-এ ৪, উত্তরপ্রদেশে ৮০-তে ৬৪, উত্তরাখণ্ডে ৫-এ ৫, দিল্লিতে ৭-এ ৭, ছত্তিশগড়ে ১১-এ ৯, ঝাড়খণ্ডে ১৪-এ ১২, গুজরাটে ২৬-এ ২৬। একই ভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য থেকে প্রায় সিংহভাগ আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি তথা এনডিএ শিবির। সেই জায়গা থেকে বিজেপি এবার আসন বাড়াবে কোথা থেকে সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একমাত্র আসন বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাবের মতো রাজ্য থেকে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ বাদ দিলে বাকি রাজ্যগুলি থেকে তা সম্ভব নয় বলেই রাজনৈতিক মহলের মত। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে নিয়ে যতই লাফালাফি করা হোক না কেন তারা গতবারের ১৮ থেকে এবার অনেক আসন বাড়িয়ে ফেলবে সেটা ধরে নেওয়া কী ঠিক হবে? দক্ষিণ ভারতে বিজেপির অবস্থা কর্ণাটক বাদে কোথাও ভাল নয়। তবে তেলেঙ্গানায় তাদের ফল কিছুটা ভাল হতে পারে। কিন্তু আবার অন্য রাজ্য থেকে আসন কমার সম্ভাবনাও রয়েছে। কৃষক বিদ্রোহের জেরে হরিয়ানা বিজেপিতে ফাটল ধরেছে। সাংসদ তথা একাধিক শীর্ষ নেতা দল ছেড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী পদে সেখানে পরিবর্তন আনতে হয়েছে বিজেপিকে। বিজেপির সঙ্গে জেজেপির জোট হরিয়ানায় ভেঙে গিয়েছে। উল্টে হরিয়ানায় কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির জোট হয়েছে। এই দুটি পার্টির জোট হয়েছে দিল্লিতেও।
পাঞ্জাবেও বিজেপির আসন বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। কর্ণাটকে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। তাই সেখানে বিজেপির আসন এবার কমবে বলেই রাজনীতির কারবারিরা মনে করছে। মহারাষ্ট্রেও বিজেপির আসন গতবারের থেকে কমবে, কারণ তাদের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ শিবসেনা নেই। বদলে সঙ্গে রয়েছে অজিত পাওয়ারের এনসিপি ও একনাথ শিন্ডের শিবসেনার অংশ। কিন্তু শরদ পাওয়ারের এনসিপি ধারে ভারে অনেকটাই এগিয়ে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। আর ভারতীয় রাজনীতিতে শরদ পাওয়ারের মতো হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে অজিত পাওয়ারের তুলনাই চলে না। শিন্ডের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার অংশ তাঁদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে বলে সবাই মনে করেন। এমন নানা কার্যকারণ একাধিক রাজ্যে রয়েছে। সবমিলিয়ে কীভাবে বিজেপি তথা এনডিএ-র আসন সংখ্যা গতবারের থেকে রকেটের গতিতে এতটা বেড়ে যাবে, যা সমীক্ষাগুলি দেখাতে চাইছে, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই গেল। এই পরিস্থিতিতে প্রকৃত ফলাফল কী হয় সেটাই দেখার।