প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি বেতন মুখ্যমন্ত্রীর! বিধায়কদের মাইনেই বা কত? কত টাকা পান সাংসদরা?

প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি বেতন মুখ্যমন্ত্রীর! বিধায়কদের মাইনেই বা কত? কত টাকা পান সাংসদরা?

কলকাতা: পুজোর আগে রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের সুখবর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। যদিও নিজে বর্ধিত বেতন নেবেন না বলেই জানিয়েছেন মমতা৷ কিন্তু জানেন কি, বেতন ও ভাতা বাবদ কত টাকা পেয়ে থাকেন মন্ত্রী-বিধায়করা? কতই বা বেতন সাংসদদের? 

রাজ্য ভেদে বিধায়কদের ভাতা এবং বেতনের পরিমাণ অবশ্য আলাদা৷ এদিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণী রাজ্য তেলেঙ্গানা৷ সবচেয়ে বেশি বেতন পেয়ে থাকেন এই রাজ্যেরই বিধায়করাই। তাঁদের মোট প্রাপ্ত বেতন আড়াই লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেও দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বেতন পেয়ে থাকেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর মাসিক বেতন ৪ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। যা প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতনকেও হার মানায়। অন্যদিকে, সর্বনিম্ন বেতন পান ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের বিধায়করা। তাঁদের প্রাপ্ত বেতন মাত্র ২০ হাজার টাকা।

কয়েকটি রাজ্য বাজ দিলে, দেশের অন্যান্য রাজ্যের বিধায়কদের বেতন কিন্তু মন্দ নয়৷ ২০২২ সালের কাঠামো অনুযায়ী প্রতি মাসে উত্তরপ্রদেশের বিধায়করা পান ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। অন্ধ্রপ্রদেশের বিধায়কদের মাসিক বেতন ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা৷  বিহারে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা, ছত্তিশগড়ের ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। সেই নিরিখে অনেকটাই কম বেতন উত্তরপূর্বের অরুণাচলে৷ সে রাজ্যের বিধায়করা পান মাত্র ২৫ হাজার টাকা৷ ২০২২ সালের কাঠামোয় অসমের বিধায়করা প্রতি মাসে পান ৬০ হাজার টাকা৷ নাগাল্যান্ডের বিধায়করা পান ৩৫ হাজার টাকা৷

এছাড়াও গোয়ার বিধায়করা পান ১ লক্ষ টাকা, গুজরাটের বিধায়কদের বেতন ১ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা, হরিয়ানায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা, হিমাচল প্রদেশে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা, জম্মু-কাশ্মীরে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা৷ ঝাড়খণ্ডের বিধায়করা প্রতি মাসে বেতন ও ভাতা বাবাদ পেয়ে থাকেন ১ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা,  ওডিশার বিধায়করা পান ৩৫ হাজার টাকা, পঞ্জাবের বিধায়কদের বেতন ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, রাজস্থানে পান ৫৫ হাজার টাকা, সিকিমের বিধায়করা পান ৫২ হাজার টাকা, তামিলনাডুর বিধায়কদের বেতন ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা, ত্রিপুরায় ২৫ হাজার ৮৯০ টাকা এবং উত্তরাখণ্ডের বিধায়কদের মাসিক বেতন ৩৫ হাজার টাকা। আমাদের রাজ্যে সরকারের নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী, ভাতা এবং কমিটির বৈঠকে যোগদানের জন্য সবমিলিয়ে বিধায়করা পাবেন মোট ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। অন্যদিকে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, পূর্ণমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীরা এত দিন ভাতা ইত্যাদি মিলিয়ে পেতেন ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা৷ এ বার থেকে তা বেড়ে হল প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।

তবে বেতন পরিকাঠামোয় বিধায়কদের অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছেন সাংসদরা৷ তবে সাংসদদের চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীদের বেতন কিন্তু বেশি নয়৷ কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী বাকি মন্ত্রীরা তো বটেই প্রধানমন্ত্রী নিজেও আগে একজন সাংসদ৷ ফলে তাঁর মূল বেতনও এক জন সাংসদেরই সমান। বর্তমানে একজন সাংদের মূল বেতন ১ লক্ষ টাকা। সেই সঙ্গে সংসদীয় এলাকা ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৭০ হাজার টাকা। অফিস চালানোর খরচ ৬০ হাজার টাকা। 

এই পর্যন্ত প্রত্যেক সাংসদ, পূর্ণমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বেতন কাঠামো এক। তবে  পার্থক্য রয়েছে অতিথি আপ্যায়ন বাবদ খরচে। এই খাতে প্রধানমন্ত্রী মাসে পান ৩ হাজার টাকা, পূর্ণমন্ত্রীরা ২ হাজার এবং প্রতিমন্ত্রীরা ১ হাজার টাকা। সাধারণ সাংসদরা এই খাতে কোনও অর্থ পান না। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী মাসে পান ২ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা। পূর্ণমন্ত্রীর বেতন ২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা এবং প্রতিমন্ত্রীর বরাদ্দ ২ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা।

বেতন ছাড়াও আরও নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন সাংসদরা৷ তার মধ্যে রয়েছে দিল্লিতে বিনা ভাড়ায় একটি বাংলো, বিনামূল্য ৫০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, বিনা খরচে দুটি ল্যান্ডলাইন ফোন। মোট দেড় লক্ষ ফ্রি ফোন কলের সুবিধা পান সাংসদেরা। এছাড়াও বিনা খরচে দেশের যে কোনও প্রান্তে এসি ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন তাঁরা। বিমানের ক্ষেত্রে বিনা খরচে দেশের অভ্যন্তরে বিজনেস ক্লাসে সফরের সুবিধা পেয়ে থাকেন সংসদের সদস্যরা। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এক জন সাংসদের জন্য মাসে ৩ লাখ টাকার বেশি খরচ করে।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *