modi
নিজস্ব প্রতিনিধি: জাত গণনা ইস্যুকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনে ঝাঁপাচ্ছে কংগ্রেস। সদ্য শেষ হওয়া পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে এই ইস্যুতে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে হাত শিবির। রাহুল গান্ধী মূলত এই ইস্যুকে আঁকড়ে ধরে বিজেপিকে চাপে ফেলতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে নয়া চাল দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরাসরি জাত গণনার মধ্যে না ঢুকে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, দেশের গরিব মানুষই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতি।
সদ্য শেষ হয়েছে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন পর্ব। তার প্রচারে কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি করে তুলে ধরেছে জাতগণনা ইস্যুকে। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার মোদি বলেন,”গরিবরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতি। যুবসমাজ, নারী, কৃষক, এই জাতিরাই ভারতের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকেন।” বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে ‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এমনটাই বলেছেন মোদি। এদিন এই প্রকল্পের আওতায় থাকা সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন অল্প দামে উন্নত মানের ওষুধ সরবরাহ করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে জন ঔষধি কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। বর্তমানে এই সংখ্যা দশ হাজার হলেও তা শীঘ্রই বাড়িয়ে ২৫ হাজার করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন সেই কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন মোদি। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এদিন মহিলা কিষাণ ড্রোন কেন্দ্রগুলির উদ্বোধন করেন। এই ড্রোনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে নানা সরঞ্জাম অনায়াসে পৌঁছে দেওয়া যাবে। চলতি আর্থিক বর্ষ থেকেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ড্রোন দেওয়া শুরু হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানিয়েছেন, বিভিন্ন চাষের কাজে সরঞ্জাম পাঠানোর পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও ড্রোনগুলি ব্যবহার করতে পারবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। বৃহস্পতিবার বেশি সংখ্যক জন ঔষধি কেন্দ্রের উদ্বোধনের পাশাপাশি ড্রোন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন মোদি। এরপর তিনি বলেন,”দরিদ্র, যুব সমাজ, মহিলা, কৃষকরাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় জাতি। এই চার জাতির উত্থান হলেই দেশের উন্নতি হবে। এই চারটি অমৃত স্তম্ভের উপরই বিকশিত ভারতের সংকল্প নির্ভর করছে।”
সেই সঙ্গে এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতার লোভে নয়, সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে চলেছে। মোদি বলেন,”আমাদের সরকার হতাশার পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। এই সরকার জনগণকে ঈশ্বর মনে করে। আগের সরকার ও জনগণের মধ্যে আস্থার ঘাটতি ছিল। তা পূরণ করেছে আমাদের সরকার। জনগণের কল্যাণকে আমরা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। আমরা মানুষের সেবা করতে এসেছি, তাদের শাসন করতে আসিনি।” সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,”জনগণ বিকশিত ভারত রথকে সর্বত্র স্বাগত জানাচ্ছেন। বিকশিত ভারত যাত্রায় প্রতিটি স্তরের মানুষ আজ যোগ দিচ্ছেন।”
নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেস হাতিয়ার করেছে জাত গণনাকে। যেসব রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে সেখানে জাতিগত জাত গণনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। যে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আন্দোলিত হয়েছে কেন্দ্রীয় রাজনীতি। এখনও পর্যন্ত এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপি নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও কথাই সুস্পষ্ট ভাবে বলছে না গেরুয়া শিবির। বিজেপি ভাল করেই জানে জাত গণনা হলে তা সব সম্প্রদায়কে হয়ত খুশি করবে না। আর সেই জায়গা থেকে ‘ব্যালান্স’ রাজনীতি করার লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী যে দরিদ্র মানুষের কথা এদিন তুলে ধরেছেন, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ দরিদ্র সমাজের মধ্যে সব জাতের মানুষরাই রয়েছেন। এভাবেই কংগ্রেসের তোলা ইস্যুকে ভোঁতা করে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রবিবার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হবে। সেখানে কংগ্রেসের জাত গণনা ইস্যু ব্যালট বক্সে কোনও প্রভাব ফেলবে কিনা সেটা অনেকটাই পরিষ্কার হবে। বলাবাহুল্য বিজেপিও গোটা বিষয়টির উপর সতর্ক নজর রাখছে। সেভাবেই নতুন ছক করে এগোবে তারা। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করলেন তার যে যথেষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে।