কলকাতা: রাজারহাটে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত জাহানকে তলব করেছে ইডি। আগামী মঙ্গলবার সকাল ১১টার মধ্যে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেওয়ার কথা তাঁর৷ ইডি-র তলবে সাড়া দেবেন কি নুসরত? মঙ্গলবার হিঙ্গলগঞ্জ থেকে সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বসিরহাটের সাংসদ৷ তিনি জানান, ইডি তলব করলে তিনি অবশ্যই যাবেন। তদন্তেও সহযোগিতা করবেন। তবে শুধু নুসরত নন, যে কোম্পানি বা সংস্থার নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেই কোম্পানির ডিরেক্টর রাকেশ সিংকেও তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এছাড়াও ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে প্রতারণার মামলা ডাকা হয়েছে আরও এক অভিনেত্রীকে৷ ইডি সূত্রে খবর, ওই অভিনেত্রীর নাম রূপলেখা মিত্র। যে কোম্পানির মাথায় রাকেশ সিং এবং নুসরত ছিলেন, ওই কোম্পানির ডিরেক্টর পদে ছিলেন রূপলেখাও।
যদিও নুসরতের বক্তব্য, এমন কোনও নোটিস এসেছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। মঙ্গলবার বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ে একটি বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন এলাকার সাংসদ। সেখানে ইডির নোটিস নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নুসরতের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি সকাল থেকে প্রচুর কাজে ব্যস্ত। নোটিস এসেছে কি না অবশ্যই দেখব। ইডি ডাকলে নিশ্চয় যাব। তদন্তে সহযোগিতা করা আমার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।’’
নুসরতের বিরদ্ধে ঠিক কি অভিযোগ? ইডির দাবি, ‘সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে যে সংস্থার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠছে, তার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ নুসরত জাহান। প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে৷ জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে নুসরতের ওই সংস্থা ৪২৯ জনের কাছ থেকে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে নেয়। চুক্তি হয়েছিল এর বিনিময়ে ফ্ল্যাট দেবেন তিনি৷ কিন্তু, সেই ফ্ল্যাট কেউ পাননি৷ কো-অপারেটিভ সিস্টেমের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কেনার জন্য মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড গ্রাহকদের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়েছিল। এর পর প্রায় ৯ বছর কেটে গেলেও বিনিয়োগকারীরা কেউই ফ্ল্যাট হাতে পাননি। সেই সময় নুসরতের সংস্থা দাবি করেছিল, রাজারহাট হিডকোর কাছে এই ৪২৯ জনকে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। তিন বছরের মধ্যে ফ্ল্যাটগুলি হস্তান্তর করা হবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিছু দিন আগে এই মামলায় বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা বেশ কয়েক জন অভিযোগকারীকে নিয়ে গড়িয়াহাট থানা এবং সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দফতরে গিয়ে অভিযোগ জানান। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন কলকাতা পুলিশ এবং ইডির গোয়েন্দারা। জানা যায়, মোট ৪২৯ জনের কাছ থেকে ওই কোম্পানির অ্যাকাউন্টে যে টাকা গিয়েছিল, তা দিয়ে ওই কোম্পানির ডিরেক্টররা ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট কেনেন। যার মধ্যে নুসরত জাহানও রয়েছেন। নুসরত নাকি ওই টাকায় পাম অ্যাভেনিউতে নিজের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন৷ ওই প্রতারণা মামলাতেই আগামী মঙ্গলবার সিজিও কমপ্লেক্সে নুসরতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ইডি।
কিন্তু, নুসরতের এই দুঃসময়ে কী করছেন ‘বোনুয়া’ মিমি? বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এই দুই নায়িকার বন্ধুত্বের কথা কারও অজানা নয়৷ একে অপরকে ‘বোনুয়া’ বলেই সম্বোধন করেন নুসরত জাহান এবং মিমি চক্রবর্তী। যিদিও টলি পাড়ায় কান পাতলে শোনা যায়, অভিনেতা যশ দাশগুপ্তর সঙ্গে নুসরত সম্পর্কে জড়ানোর পর নাকি দুই বন্ধুর সম্পর্কে দুরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে নিজেদের সম্পর্কের ওঠা-পড়া সব সময় আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছেন দু’জনে। তাই দেখা গিয়েছে, যখনই নুসরতকে নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, তখনই পাশে দাঁড়িয়েছেন মিমি। ইডি-র তলব নিয়ে ফের শিরোনাম কেড়েছেন বসিরহাটের সাংসদ। রাজারহাটে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার মধ্যে ইডির অফিসে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে তাঁকে৷ নুসরত যখন নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছেন, তখন কী করছেন, কোথায় আছেন ‘বোনুয়া’ মিমি?
মিমির সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় চোখ রেখে জানা গেল, তিনি এখন ব্যস্ত রয়েছেন নিজের জগৎ নিয়ে। ইনস্টাগ্রাম স্টোরি থেকে জানা গেল, শুটিংয়ের ফাঁকে রীতিমতো মজায় মেতে রয়েছেন তৃণমূলের এই অভিনেত্রী সাংসদ। এই মুহূর্তে চন্দ্রাশিস রায়ের ওয়েব সিরিজে কাজ করছেন মিমি চক্রবর্তী। এই প্রথম ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে রুপোলি পর্দার নায়িকাকে। এই সিরিজে মিমির বিপরীতে দেখা যাবে টোটা রায়চৌধুরীকে। মিমিকে তাঁর প্রিয় সারমেয়দের সঙ্গে খুনসুটি করতেও দেখা গিয়েছে৷ তবে নুসরতের ইডি-র তলব নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি নায়িকা৷