অ্যালুমিনিয়ামে বিষ! বাসন বন্ধের ফরমান কেন্দ্রের, দেশ জুড়ে বিতর্ক

অ্যালুমিনিয়ামে বিষ! বাসন বন্ধের ফরমান কেন্দ্রের, দেশ জুড়ে বিতর্ক

 কলকাতা: গৃহস্থের হেঁশেল আর অ্যালুমিনিয়ামের বাসন নেই, এমনটা আবার হয় নাকি? হাড়ি-কড়াই থেকে গামলা, বালতি, অধিকাংশই তো অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি৷ আমাদের রাজ্য তো বটেই, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অগুনিত মানুষ রোজ অ্যালুমিনিয়ামের বাসনেই রান্না করে থাকেন। শুধু গৃহস্থ কেন, যে কোনও অনুষ্ঠান বা ভুরিভোজের আয়োজনেও পেল্লাই সব অ্যালুমিনিয়ামের বাসন ব্যবহার করতে দেখা যায়৷ কিন্তু, সম্প্রতি উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ এই অ্যালুমিনিয়ামেই নাকি রয়েছে বিষ! আর সেই বিষের হাত থেকে বাঁচতে সব রাজ্যের শিক্ষাসচিবকে নির্দেশিকা পাঠাল শিক্ষামন্ত্রক৷ এই নির্দেশিকা ঘিরেই বিতর্কের ঝড়৷ কারণ, এই নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে আম জনতার স্বাস্থ্য নিয়েও উঠল বড় প্রশ্ন৷ 

শিক্ষা মন্ত্রকের নির্দেশিকায় সাফ বলা হয়েছে, মিড ডে মিলের বাসনপত্র যদি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হয়, তাহলে তার সংখ্যা দ্রুত কমিয়ে আনতে হবে এবং ক্রমে তা বন্ধ করে দিতে হবে৷ কেন্দ্রের ফরমান, ‘অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্রে মিড ডে মিল রান্না এবং তা পরিবেশন করা একেবারে তালানিতে নামিয়ে আনতে হবে। কারণ, এই ধরনের বাসন ব্যবহারে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ বা অস্টিওম্যালেশিয়া হতে পারে। রান্না কিংবা পরিবেশনের সময় অ্যালুমিনিয়াম যদি খাবারে মিশে যায়, তাহলেও তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।’ এই নির্দেশিকায় তৈরি হয়েছে জোড়া আতঙ্ক৷ একদিকে ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেছে ব্যবসায়ী মহল। অন্যদিকে, প্রশ্ন উঠেছে আম আদমির সামর্থ্য নিয়ে। কারণ, অ্যালুমিনিয়ামের বাসনের দাম সাধ্যের মধ্যে থাকায় দেশের অধিকাংশ মধ্য ও নিম্নবিত্ত ঘরে অ্যালুমিনিয়ামের বাসনেরই চল। মিড ডে মিলের গন্ডি ছাড়িয়ে এই নির্দেশিকা যদি দেশের খুচরো বাজারে জারি করা হয়, আর নতুন বাসন কিনতে হয়, তাহলে মধ্যবিত্তের পকেটে টান পড়বে বৈকি।

সত্যিই কি স্বাস্থ্যের উপর পুপ্রভাব ফেলে অ্যালুমিনিয়াম? তথ্য বলছে, অ্যালুমিনিয়ামের বাসন নিয়ে এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷ কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্র ব্যবহারের জন্য এতরকম রোগ হয় বলে প্রামাণ্য কোনও নথি নেই। বিশিষ্ট অস্থি বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুমন্ত ঠাকুরের কথায়, ‘‘অস্টিওম্যালেশিয়ায় আক্রান্তদের হাড় খুব ভঙ্গুর হয়। শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ কম থাকলে, তা ক্যালসিয়ামকে শরীরে শুষতে দেয় না। তাই হাড়ও শক্ত হয় না। অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্র ব্যবহারের জন্য যে এমন রোগ হয়, সেটা আমার জানা নেই। তাছাড়া বহু মানুষই তো এই বাসন ব্যবহার করছেন। তা যদি ক্ষতিকারকই হতো, তাহলে তো বহু মানুষ একযোগে এই রোগে ভুগতেন। তা তো হচ্ছে না!’ আবার পুষ্টিবিদ সঞ্চিতা শীল বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন একই বাসনে টক জাতীয় খাবার রান্না হলে অ্যালুমিনিয়াম সামান্য পরিমাণে রান্নায় মিশতে পারে। কিন্তু সাধারণ রান্নাবান্নায় তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া যে পরিমাণ  অ্যালুমিনিয়াম শরীরে গেলে বিপদ হতে পারে, রান্নার বাসন থেকে তা আসা কঠিন।’’ 

ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম বাসন নির্মাণকারী সংস্থাগুলি। ব্যবসায়ীদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স এবং অল ইন্ডিয়া অ্যালুমিনিয়াম ইউটেনসিলস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এই ফরমান প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্যর কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 9 =