মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ মেধার ভিত্তিতেই, ধর্মের ভিত্তিতে নয়, সুপ্রিম নির্দেশ

মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ মেধার ভিত্তিতেই, ধর্মের ভিত্তিতে নয়, সুপ্রিম নির্দেশ

নয়াদিল্লি: মাদ্রাসা নিয়ে সার্বিক ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়ার সময় হয়েছে। আজকাল উগ্র এবং প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুত্ববাদী এবং ইসলামিক নেতাদের দাপাদাপি চতুর্দিকে বাড়ছে। সেই দিকে তাকিয়ে বলতেই হয়, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক রায় যুগান্তকারী।

মাদ্রাসাকে অনেকে 'সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান' বলে থাকেন। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্ট রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে, অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শব্দটি। তা সংখ্যালঘু  বা সংখ্যাগুরুদের জন্য কিনা, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কোনও সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাতে নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যালয় গুলির নিয়ন্ত্রণভার স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপর। অন্যদিকে, মাদ্রাসগুলি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। ২০০৮ সালেই বামফ্রন্ট সরকার তা করে রেখে গিয়েছে। কিন্তু, কাঁথির একটি মাদ্রাসা ওই কমিশনের বৈধতা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। মাদ্রাসা কমিশনের সমস্ত নিয়োগ আটকে যায়।

কিন্তু, সুপ্রিম কোর্ট কমিশনের পক্ষেই রায় দিয়ে সাফ জানিয়ে দেয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ করতে হবে। মাদ্রাসা বা বিদ্যালয় – এই নিয়মই বলবৎ থাকবে। এখানে 'সংখ্যালঘু' শব্দটি বড় নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধারণাটিই বড়।

মনে রাখা জরুরি, বিদ্যালয়ের সঙ্গে মাদ্রাসার তেমন কোনও তফাৎ নেই। মাদ্রাসায় ইসলাম এবং আরবি শিক্ষা, এই দুটি বিষয় থাকে। বাকিটা একই। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো, বিদ্যালয় বা মাদ্রাসা – যে কোনও ধর্মের ছাত্রছাত্রীরাই উভয় জায়গাতে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেন।

আজকাল হিন্দু এবং মুসলিম – উগ্র, বিভেদকামী, ধর্মীয় নেতারা বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সেক্ষেত্রে খারিজি মাদ্রাসার বিষয়টিও খেয়াল রাখা উচিত। ওই মাদ্রাসা গুলিতে ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষার পাঠ দেওয়া হয়। ওই মাদ্রাসা জনসাধারণের জন্য নয়। হাই মাদ্রাসা এবং খারিজি মাদ্রাসার মধ্যে তফাৎ রয়েছে।

ঘৃণাই যাদের ব্যাবসা, তারা নানান সুযোগ নিয়ে হিন্দু এবং মুসলিমদের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে ভুল বুঝিয়ে হাই মাদ্রাসা এবং খারিজ মাদ্রাসার ব্যাখ্যা দিতেই পারে। সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একটি বিষয় স্পষ্ট রূপে উঠে এসেছে – মাদ্রাসায় নিয়োগের ভার শুধু তাদের হাতে থাকবে না। এই বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। মাদ্রাসা বা বিদ্যালয়ের নিয়ম শুধুমাত্র কোনও নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য কুক্ষিগত নয়। ধর্মের বাঁধ ভেঙে মেধাকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। এবার আসা করা যায়, ২০১৩ সালে এরাজ্যে মাদ্রাসা নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল না মিটবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *