ঘর – নেই, পানীয় জল – নেই, টিন, ত্রিপল দিয়ে ঘিরে কোনওরকমে মাথা গোঁজার এক টুকরো আশ্রয় বানিয়ে বেঁচে থাকার বিকল্প উপায় খুঁজে নিয়েছে এই আদিবাসী পরিবারগুলো। নদীয়ার শান্তিপুর থানার হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরদারপাড়া। শতাধিক মানুষের বসবাস সেখানে। অথচ, গত ৫ বছরেও সেখানে এসে পৌঁছয়নি উন্নয়ন। দোর গোঁড়ায় পঞ্চায়েত ভোট। গত পাঁচ বছরে পঞ্চায়েতের কাজে কতটা খুশি হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরদারপাড়া? কী বলছেন স্থানীয় মানুষজন? খোঁজ দেব এই প্রতিবেদনে…
ভাঙা বেড়ার ওপরে ছেড়া ত্রিপল! বৃষ্টি এলেই ভিজে যায় ঘর, দমকা হাওয়া দিলেই উড়ে যায় ত্রিপলের ছাদ। মাথা বাঁচাতে সেই সময় বাড়ির ছেলে- মেয়েদের নিয়ে ঠাঁই নিতে হয় চৌকির তলায়। সরকারী যোজনায় বাড়ির জন্য বারবার জানিয়েও নাম ওঠেনি বলেই অভিযোগ… তার ওপর রয়েছে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সমস্যা। জলের পাইপ লাইন বসলেও জল পড়ে না। ফলে, সমস্যা যা ছিল তাই-ই আছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও পরিষেবারই মুখ দেখেনি হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরদারপাড়া…
সামান্য বৃষ্টি হলেই ভাঙাচোরা বেড়ার ঘরে ঢুকে পড়ে জল। দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় ত্রিপলের আচ্ছাদন। সমস্যার কথা বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাই ভোট যত এগিয়ে আসছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকাবাসীর। দিনমজুর রাম সরদার বলেন, পঞ্চায়েত সদস্যকে এ বিষয়ে জানানো হলেও মিলেছে শুধুই আশ্বাস। ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা খুদু সদ্দার বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ির সামনে এক হাঁটু জল জমে যায়। বাড়ে সাপের উপদ্রব। ছোট বাচ্চা নিয়ে ওইভাবেই দিন কাটাতে হয় তাঁদের।
বাসস্থানের পাশাপাশি পানীয় জলের সমস্যাতেও ভুগছেন সরদারপাড়ার বাসিন্দারা। অভিযোগ, পঞ্চায়েতের তরফে বাড়ি বাড়ি করে লাইন বসানো হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই কল দিয়ে জল পড়ে না এক ফোঁটাও। তাই পিপাসা মেটাতে আর্সেনিকযুক্ত জলই খাচ্ছেন বাসিন্দারা। ঘর, বাসস্থান, পরিসেবা নিয়ে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় জমছে রীতিমত। যদিও তৃণমূলের আমলে এলাকায় ১০০ শতাংশ উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন এলাকার বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্যা তনুশ্রী সাহার স্বামী এবং প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য তাপস কুমার সাহা।
এলাকায় ঘর না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষেছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শোভা সরকার। তিনি বলেন, ঘর মূলত কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারের আর্থিক বরাদ্দে হয়ে থাকে। কিন্তু কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে কোন আর্থিক সাহায্য না মেলায় ঘর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শীঘ্রই জলের সমস্যার সমাধান করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। যদিও পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উপড়ে দিয়েছেন ওই এলাকার বিজেপি নেত্রী শিলা হালদার মন্ডল। হরিপুর পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে সজন পোষণের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, যারা মূলত তৃণমূল করছেন তারাই ঘর পারছেন। অন্যদিকে সরকারি প্রকল্প নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি নেত্রী। এলাকাবাসির মনে তৈরি হওয়া ক্ষোভের আঁচ পঞ্চায়েত নির্বাচনের উপর পড়ে কিনা এখন সেটাই দেখার।