আঙুলের ছোঁয়ায় নতুন মাত্রা পায় ১২ হাতের পোশাক, শুধু শাড়ি পরাতে ২ লক্ষ টাকা নেন ডলি!

আঙুলের ছোঁয়ায় নতুন মাত্রা পায় ১২ হাতের পোশাক, শুধু শাড়ি পরাতে ২ লক্ষ টাকা নেন ডলি!

কলকাতা: তাঁর কাজ হল শাড়ি পরানো৷ আর সেই কাজ করেই লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেন কলকাতার এক গৃহবধূ। কিছুটা অবাক করা পেশা তাই না? কিন্তু, তাঁর ক্লায়েন্টদের তালিকা দেখলো চোখ কপালে উঠবে৷ জানেন কি দীপিকা পাদুকোন থেকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ইশা আম্বানী, তাঁর ক্লায়েন্টের তালিকায় রয়েছে তাবড় সব নাম৷ চেনেন কলকাতার সেই গৃহবধূকে? নাম ডলি জৈন। তিনি একজন পেশাদার শাড়ি ড্রেপার।

 

 

আমাদের দেশের অধিকাংশ মহিলাই নিজেদের সাজাতে ভালোবাসেন ১২ হাত কাপড়ে৷ অনেকে তো আবার সকাল-বিকেল অঙ্গে শাড়ি জড়িয়েই কাটিয়ে দেন৷ সেই শাড়ি পরাতে ডলি কম করে ৩৫ হাজার টাকা নেন। তবে স্টাইল যত ক্লাসি হবে, দামও বাড়বে পাল্লা দিয়ে। বিশেষ বিশেষ কায়দায় শাড়ি পরানোর জন্য ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চার্জ করে থাকেন তিনি।

 

ডলির আঙুলের কেরামতিতে সাধারণ শাড়িও নাকি ভোল পাল্টে ফেলে! ফ্যাশন দুনিয়ায় কান পাতলে শোনা যায় এমনই কথা। বলিউড তারকারা আজকাল নামী ব্র্যান্ডের ‘কুতুর’ গাউন ছেড়ে শাড়ি হাতে শরণাপন্ন হন কলকাতার ডলির।

 

দিন কয়েক আগে প্যারিসের কান-এর রেড কার্পেটে শাড়ি জড়িয়ে হাজির হয়েছিলেন বলি তারকা সারা আলি খান। ডিজাইনার আবু জানি এবং সন্দীপ খোসলা তৈরি করলেও, সরু পাড় সাদা শাড়িটি সারার অঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছিলেন এই ডলিই। এর আগে  দীপিকাও কানের লাল গালিচায় হেঁটেছিলেন তাঁর হাতে শাড়ি পরেই৷ 

গত কয়েক বছরে বারবার তারকাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের ডাক পেয়েছেন কলকাতার গৃহবধূ। হালেই বিয়ে সেরেছেন কিয়ারা আডবাণী এবং সিদ্ধার্থ মলহোত্রা৷ তাঁদের বিয়েতেও হাজির ছিলেন ডলি৷ নায়িকাকে শাড়ি এবং লেহঙ্গা পরানোর দায়িত্ব বর্তেছিল কলকাতার বৌমার উপরেই। এমনকি,  সিদ্ধার্থকেও উড়নি পরিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই।

বিয়ের শাড়ি হোক কিংবা লেহঙ্গা, যে পোশাকশিল্পীই বানিয়ে দিন না কেন, তা পরিয়ে দেওয়ার জন্য ডলিই তারকাদের ভরসা৷ প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, দীপিকা পাড়ুকোনের থেকে আলিয়া ভাট, ক্যাটরিনা কাইফ এমনকি নয়নতারাকে তাঁর বিয়ের দিনে শাড়িতে সাজিয়েছিলেন তিনি। ডলির নিয়মিত খদ্দেরদের তালিকায় শাহিদ কাপুরের স্ত্রী মীরা রাজপুত থেকে শুরু করে নীতা অম্বানী, নীতু সিং, করিশ্মা কাপুর, রয়েছেন নামীদানি সব সেলেবরা।

বলিউডির গন্ডি ছাড়িয়ে ভারতীয় শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর ঘরেও মেয়ে-বউদের নির্ভরযোগ্য ভরসা এই ডলি৷ কন্যা ইশা অম্বানীকে বিয়ের শাড়ি পরিয়েছেন কলকাতার বউ মা৷ শাড়ি পরিয়েছিলেন মুকেশের পুত্রবধূ শ্লোক মেহতা এবং হবু পুত্রবধূ রাধিকা মার্চেন্টের বাগদানের অনুষ্ঠানেও। আবার ভারতীয় ক্রিকেটার হার্দিক পাণ্ডের বিয়েতেও তাঁর স্ত্রী নাতাশাকেও শাড়ি পরানোর জন্য তলব করা হয়েছিল ডলিকের। গত বছর মেট গালায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সেরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার ভারতীয় শিল্পপতি আদর পুণাওয়ালার স্ত্রী নাতাশা পুণাওয়ালাকে। তিনি সেজেছিলেন ডলির হাতে৷  

যদিও ডলির অনুরাগীদের দাবি, শাড়ি পরানোর জন্য হয়তো একটু বেশিই চার্জ নেন এই শাড়ি ড্রেপার। কিন্তু তাঁর আঙুলের ছোঁয়া, কয়েকটি সেফটিপিন, আর সুচসুতোর কেরামতি যে মায়া জানে৷ একবার রবিনা ট্যান্ডন নাকি এক বার ডলিকে বলেছিলেন, ‘‘তোমার হাতে সেফটিপিনের যাত্রা নিয়ে একটা বই লিখে ফেলো৷’’ ডলির প্রশংসা করে দীপিকা বলেছিলেন, ‘‘তোমার হাতে পড়লে অবাধ্য শাড়িও বাধ্য হয়ে যায়।’’ 

কলকাতার গৃহবধূ ডলি অবশ্য নিজেকে ‘ড্রেপিং আর্টিস্ট’ হিসাবেই পরিচয় দেন। ডলির দাবি, তিনি ১২ হাতের একটি কাপড়কে ৩৬০ রকম স্টাইলে পরাতে পারেন। তবে তাঁর এই দক্ষতার কৃতিত্ব যতটা  তাঁর  নিজের, তার চেয়ে অনেক বেশি তাঁর শ্বশুরবাড়ির। কারণ কলকাতায় এমন এক পরিবারের বিয়ে করে আসেন ডলি, যেখানে শাড়ি ছাড়া আর অন্য কোনও পোশাক পরার অনুমতি ছিল না৷ প্রথমে শাড়ি নিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হত তাঁকে৷ এর পর নিজের প্রয়োজনেই  বিভিন্ন ভাবে শাড়ি পরা শুরু করেন তিনি৷ তাঁর সেই সব স্টাইল বেশ প্রশংসিতও হতে থাকে৷ সেই পরীক্ষা নিরীক্ষাই এক সময় তাঁর নেশা হয়ে দাঁড়ায়৷ ঘুরে যায় ডলির জীবন৷