নন্দীগ্রাম: ভোটযুদ্ধে শামিল হওয়া জীবনে এই প্রথমবারের জন্য, তবে রাজনীতিতে তা নয়। বঙ্গ রাজনীতির উড়োজাহাজে তিনি বহু বছরের সওয়ারী। তিনি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। সিপিআইএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী ও সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য মীনাক্ষী। এবারে তিনিই বহুল চর্চিত নন্দীগ্রামে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী। বাম যুব নেত্রী মীনাক্ষীর ক্যারিশ্মায় ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রামের দ্বিমুখী সম্মুখ সমর পরিণত হয়েছে ত্রিমুখী মহারণে।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার ২৯৪টি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে হেভিওয়েট কেন্দ্র নন্দীগ্রাম। ঠিক যে মাটি থেকে ২০১০ সালে ৩৪ বছরের বাম জমানাকে কাঁচকলা দেখিয়ে শুরু হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা দখলের লড়াই। এবারে সেই কেন্দ্রের একদিকে যেমন রয়েছেন তৃণমূল থেকে আসা ‘দলবদলু’ বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদিকে রয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই হেভিওয়েটের মাঝেই সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিআইএমের প্রার্থী হয়েছেন তরুণ নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তবে কুলটির চলবলপুর গ্রামের বাসিন্দা মীনাক্ষী এই লড়াইয়ে তার আর পাঁচটা লড়াইয়ের মতোই নির্ভিক যোদ্ধা। ভয়ডর একেবারেই নেই। খোলামেলা সাক্ষাৎকারে জানালেন, ‘‘ভয়, দোটানা কিছুই নেই৷ এটা ঠিক যে ভোটের ময়দানে প্রথমবার লড়ছি৷ কিন্তু গত এক দশক ধরে এই তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধেই লড়াই করেছি৷ বেকারদের কর্মসংস্থান নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলছে আমাদের৷ সেই লড়াই একই আছে, শুধু মঞ্চ বদলেছে৷”
বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বামফ্রন্টের সামনের সারিতে পাকা চুলের কমরেডদের ভিড় বাড়ছে বলে ক্ষোভ ছিল বাংলার মানুষের। সেই ক্ষোভকেই এবার ধুয়েমুছে সাফ করে দেওয়ার চেষ্টায় বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকায় উঠে এসেছে প্রচুর নতুন মুখ। সেই উঠতি তরুণ তুর্কিদেরই একজন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের মত হেভিওয়েট কেন্দ্রে শুভেন্দু ও মমতার সামনে তাকে প্রার্থী করেছে বামফ্রন্ট। মূলত যুবকদের সমর্থন পাওয়ার জন্যই বামেদের এই সিদ্ধান্ত। এই নিয়ে মীনাক্ষী জানালেন, “যুব বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট বয়স। তবে আমাদের সাথে রয়েছেন গৃহবধূ থেকে শুরু করে চাকরি না পাওয়া যুবকও। আমরা তাদের কাছে পৌঁছেছি। তারা সকলেই পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করে আছেন। যারা হাতের কাজ কেড়ে নিয়েছে, সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি করেছে, তাদের হাত থেকে সবাই মুক্তি চায়। দমবন্ধ করা পরিবেশ থেকে সকলে এবারে মুক্তি চায়।”
কিন্তু যে নন্দীগ্রামের মাটি থেকে ১১ বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম শাসন আমলকে সমূলে উৎখাত করার যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেই নন্দীগ্রামে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে দাঁড়াতে পারবেন সিপিআইএমের মীনাক্ষী? নন্দীগ্রামে মমতা-ম্যাজিককে কতটা পেছনে ফেলতে পারবে মীনাক্ষী ম্যাজিক? এই নিয়ে বাম যুব নেত্রী মীনাক্ষী জানিয়েছেন, “না, মমতা ম্যাজিকের বিরুদ্ধে মীনাক্ষী ম্যাজিক কাজ করবে না। মমতা ম্যাজিককে কুপোকাত করবে কর্মসংস্থানের ম্যাজিক, গণতন্ত্রের ম্যাজিক। আর এই ম্যাজিক এর জন্যই নন্দীগ্রামের মানুষ অপেক্ষা করে আছেন।” তবে, বিজেপি ও তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট শুভেন্দু আর মমতার বিরুদ্ধে ‘বাচ্চা মেয়ে’ মীনাক্ষী কতটা জমি দখল করতে পারবে সেই নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।