নয়াদিল্লি: দু’দিন আগে ঘোষিত হয়েছে ২০২০ সালের মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ডের নাম। গর্বিত সম্মানের মুকুট পড়েছেন হায়দ্রাবাদের ২৩ বছরের তরুণী মনসা বারাণসী। কিন্তু মিস ইন্ডিয়া নয়, বুধবারের ফল ঘোষণার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া যাঁকে নিতে মেতে রয়েছে তিনি হলেন মান্য সিং। উত্তরপ্রদেশের এই তরুণী সেরার শিরোপা ছুঁতে পারেননি, থেমেছেন এক ধাপ আগেই। কিন্তু তাঁর জীবনের লড়াইটা উদ্বুদ্ধ করেছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, সকলকেই।
মিস ইন্ডিয়ার রানার্সআপ মান্য সিংকে নিয়ে এদিন গর্ব করেছেন ২০১৭ সালের মিস ওয়ার্ল্ডের শিরোপাজয়ী মানুশি চিল্লার। শুধু তিনিই নন, আসমুদ্র হিমাচলের সমস্ত মেয়েদের মনকেই নাড়িয়ে দিয়েছে মান্য সিংয়ের কাহিনী। কেন চাম্পিয়ন নয়, একজন রানার্সআপকে নিয়ে চলছে এই মাতামাতি? কী তাঁর আসল কাহিনী? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
গত বুধবার মিস ইন্ডিয়ার ফল ঘোষণার পর সামনে আসে মান্য সিংয়ের জীবনযুদ্ধের কাহিনী। তাঁর বাবা উত্তরপ্রদেশের একজন সাধারণ অটোচালক। মান্য সিং সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানান কী তুমুল অর্থকষ্টের মধ্যে দিয়ে তাঁকে জীবন কাটাতে হয়েছে। এক একসময় জোটেনি পেটের ভাতটুকুও। তাঁর কথায়, “অনেক রাত পেটে কিছু দানা পড়েনি। কখনও আধপেটা, কখনও খালি পেটেই শুয়ে পড়েছেন। খিদের পেটে ঘুম আসে না। তাই অনেক রাত জেগেই কেটে যেত। কিন্তু মনে মনে স্বপ্নটা বুনতাম। বাড়িতে অভাব, তাই স্কুলে যেতে পারতাম না। ভোরে উঠেই কাজ করতে হত।”
এখানেই শেষ নয়, পরণের জামাকাপড়টুকুও জোটেনি মান্যর। তিনি লিখেছেন, “সব জামা কাপড়গুলোই অন্যের দেওয়া ছিল। নিজের কাপড় কেনার পয়সা ছিল না। খুব ইচ্ছে হত, বই কিনে পড়ব। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না। মা-বাবা যেটুকু গয়না ছিল, তাও বন্ধক রেখেছিলেন। যাতে অন্তত পরীক্ষার ফি টুকু দিতে পারি। মা সব গয়নাই বন্ধক রেখে বলেছিলেন, পরীক্ষায় পাশ করে ডিগ্রি পেতেই হবে।” ১৪ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়েও গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সমস্ত লড়াইয়ের মাঝেই লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন মান্য সিং। আর তাতেই এসেছে এই সাফল্য। সাফল্যের পর দেশের সমস্ত মেয়েদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, “যদি মন থেকে কিছু চাওয়া যায়, তবে তুমি তা পাবেই।”
মান্য সিংয়ের কাহিনী দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দেয় নেট মাধ্যমে। সকলেই তাঁর কঠিন লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত হন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও ইতিমধ্যে দেখা করেছেন এই তরুণীর সঙ্গে। লক্ষ্যে অবিচল থাকলে যে কোনো বাধাই সামনে আসতে পারে না, মান্য সিং তা প্রমাণ করেছেন আরো একবার।