কলকাতা: বাঙালির প্রাণের পুজো দুর্গা পুজোর খুশি ধরে রাখতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি টুইট করে বলেন, “কোভিডের জন্য আমাদের উৎসব উদ্যাপন অনেক বিধিনিয়মে বাঁধা পড়েছে। কিন্তু দুর্গাপুজোর উদ্দীপনাকে কোনও ভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।” আর এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে জল্পনা।
‘মহালয়ার প্রতিশ্রুতি’ ট্যাগ লাইন ব্যভার করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অবস্থান জানিয়েছেন৷ সম্প্রতি দুর্গাপুজো বন্ধের গুজব নিয়ে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রচারের উৎস সন্ধান করে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। কিন্তু মহালয়ার জন্যে মমতার এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, আসলে মহালয়ার সকালেই শারদোৎসব পালনে সকলকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচারেরও মোকাবিলা করলেন। সুদক্ষ সুপ্রিমোর আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এটা একটি কুশলী পদক্ষেপ বলেও মনে করছেন অনেকে৷
On the auspicious occasion of Mahalaya,I extend my warm regards to one & all.Although #COVID19 has restricted how we celebrate festivals, we shall not allow it to dampen the spirit of this Durga Puja. To this end & to lighten up every home,I undertake #MahalayaProtishruti. (1/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) September 16, 2020
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা নিয়ে কটাক্ষ করেছে কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি৷ কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা’র কথায়, ‘‘মহরমের জন্য দুর্গাপুজোর বিসর্জন আটকে রাখার নজির আগেই গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন ভোটের আগে দুর্গানাম জপ করে মমতা নিজেদের বিনাশ আটকাতে চাইলেও তা পারবেন না৷’’ অন্যদিকে বামফ্রন্ট নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘পুজো নিয়ে ক্লাব দখলের রাজনীতি আগে হয়েছে। বিজেপি এখন শুরু করেছে ধর্মীয় রাজনীতি। দুটোই আপত্তিকর। পুজো হোক স্বাস্থ্যবিধি মেনে।’’ থেমে নেই কংগ্রেসও। কংগ্রেসের তরফে প্রদীপ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘দুর্গাপুজোর মতো জাতীয় উৎসবেও বিজেপি ও তৃণমূল উভয় দল ধর্মীয় রাজনীতির হিসেব কষছে।’’
প্রতিবারের মতো এবারেও মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ উত্তরবঙ্গ সফর থেকে ফিরে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর এই বৈঠক করার কথা স্থির হয়েছে। হাওড়ার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই বৈঠক করা হবে। এদিন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন পুলিশ, পুরসভা, দমকল, সিইএসসি-সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরা। পুজোর আগে এই বৈঠকে মূলত পুজো সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি নির্দেশ, আচরণবিধি এবং ক্লাবগুলির কর্মসুচি নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। এই বৈঠকেই কলকাতার দুর্গা পুজো নিয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রতি বছর।
কিন্তু এবছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যেহেতু দুর্গা পুজো হচ্ছে তাই উদ্যোক্তাদের মধ্যেও বহু সংশয় ও প্রশ্ন রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই মূল মণ্ডপ ছাড়া পুজো-প্রাঙ্গণের বাকি অংশ খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন উদ্যোক্তাদের। তিনি বলেছেন, দর্শনার্থীদের সহজে চলাফেরার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা যেন না হয়। সেক্ষেত্রে অঞ্জলি দিতেও ভিড় এড়ানোর কথা বলেছেন তিনি। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় তা মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা থেকেই স্পষ্ট। প্রতিটি ঘরে যাতে উৎসবের আলো জ্বলে এবং উৎসবের আনন্দ থেকে কেউ বঞ্চিত না হন, সেই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও অন্যবারের মতো প্রতিমা নিরঞ্জন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রতিবারের মতো এবারেও কি রেড রোডে কার্নিভাল হবে, হলেও সেখানে কীভাবে মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। -ফাইল ছবি