যুবনেত্রী হিসেবে মমতা ও মীনাক্ষির ব্রিগেড! কেন এগিয়ে থাকবে যৌবনের ডাকে বামেদের ব্রিগেড

যুবনেত্রী হিসেবে মমতা ও মীনাক্ষির ব্রিগেড! কেন এগিয়ে থাকবে যৌবনের ডাকে বামেদের ব্রিগেড

mamata

নিজস্ব প্রতিনিধি: ১৯৯২ সালের শীতের দুপুরে তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশে নজরকাড়া ভিড় হয়েছিল। সেই ব্রিগেড থেকেই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারকে হটানোর জন্য বামেদের ‘মৃত্যুঘন্টা’ বাজানোর ডাক দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় কেন্দ্রে ছিল কংগ্রেস সরকার। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পিভি নরসিমহা রাও। কিন্তু সেই ব্রিগেডের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি যুব কংগ্রেসের তরফ থেকে। কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে ব্রিগেডে ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেব।

মমতার এতটাই ক্যারিশমা ছিল যে তাঁর এক ডাকেই লক্ষ লক্ষ কংগ্রেসের কর্মী সমর্থক ছুটে গিয়েছিলেন ব্রিগেডে। আর চব্বিশের জানুয়ারির রবিবারে শীতের ব্রিগেডে বামেদের কয়েক লক্ষ কর্মী সমর্থক ছুটে গেলেন যুবনেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য শুনতে। রবিবার ব্রিগেডে যা ভিড় হয়েছে তাকে কেউ উড়িয়ে দিতে পারবে না। যেদিকে তাকানো যায় শুধুই লাল পতাকা। সঙ্গে রয়েছে ডিওয়াইএফের সাদা পতাকা। কিন্তু প্রশ্ন হল ৩২ বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রিগেড আর রবিবারের ব্রিগেড, স্বতঃস্ফূর্ততার নিরিখে কোনটিকে  এগিয়ে রাখা যাবে? এক কথায় উত্তর হল রবিবার মীনাক্ষির ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ এগিয়ে থাকবে। কিন্তু কেন? কি কারণ রয়েছে সেখানে?

ঘটনা হল‌ ১৯৯২ সালের ব্রিগেডে এদিনের থেকে অনেক বেশি ভিড় হয়েছিল। কিন্তু শুধু ভিড়ের নিরিখে সবকিছু বিচার করলে চলবে না। কারণ সেই সময় বেশি ভিড় হবে এটাই স্বাভাবিক। তখন মূলত সিপিএমের বিরোধী দল বলতে শুধুই ছিল কংগ্রেস। বার বার সিপিএম জিতলেও কংগ্রেসের ভোট শতাংশ ৪২ এর আশপাশেই থাকত। হয় সিপিএম নয়ত কংগ্রেস, এছাড়া আর কোনও বিকল্প ছিল না। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। এখন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস, এই চারটি দলই সব সময় প্রাসঙ্গিক থাকে। তাই মানুষের সমর্থন ভাগাভাগি করে রয়েছে এই চারটি দলে। সেই জায়গা থেকে রবিবার বাম যুবনেত্রীর মীনাক্ষির ডাকে যে ভিড় হয়েছে ব্রিগেডে, তা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। সবচেয়ে বড় কথা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম তথা বামেরা শূন্য হয়ে গিয়েছে।

গত লোকসভা নির্বাচনেও পশ্চিমবঙ্গে শূন্য রানে  বোল্ড আউট হয়েছে বামেরা। কিন্তু ১৯৯২ সালে মমতা যখন যুব কংগ্রেসের ব্যানারে ব্রিগেড সমাবেশ করেছিলেন তখন রাজ্যে  বিরোধী দল হিসেবে কংগ্রেসের অনেক বেশি শক্তি ছিল। সেই সময় দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস সাংসদ ছিলেন মমতা। কলকাতার অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্র কংগ্রেসের হাতে ছিল। সবচেয়ে বড় কথা কেন্দ্রে ছিল কংগ্রেস সরকার। এছাড়া সর্বস্তরের মিডিয়ার সাপোর্ট পেতেন মমতা। সেই জায়গা থেকে মীনাক্ষি যে প্রতিকূলতার সঙ্গে এখন লড়াই করছেন তার তুলনা হয় না। মমতাকে শুধুই লড়াই করতে হতো সিপিএমের বিরুদ্ধে।  কিন্তু বর্তমানে মীনাক্ষিদের লড়াই  তৃণমূল ও বিজেপি দুটি দলেরই বিরুদ্ধে। তাই নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রবিবার যে স্বতঃস্ফূর্ত ব্রিগেড সমাবেশ করল বামেরা, তা নিঃসন্দেহে ৩২ বছর আগের ব্রিগেডের থেকে এগিয়ে থাকবে বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *