কলকাতা: আজ ২১ জুলাই। এই দিনটাকে শহিদ দিবস হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রতি বছর সবথেকে বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে তৃণমূল। এ বারের বিষয়টা আলাদা কারণ অতিমারির জেরে এ বছর জন সমাবেশের কোনও সুযোগই ছিল না। অগত্যা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়ি থেকেই এই কর্মসূচি পালন করলেন যা গোটা রাজ্য জুড়ে টিভিতে দেখলেন সভ্য সমর্থকরা। মমতা ছাড়াও অন্যান্য হেভিওয়েট নেতারাও অবশ্য ভাষণ দিলেন, তবে মুখ্য আকর্ষণ অবশ্যই মমতাই।
একাধিক বিষয় নিয়ে কথা বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো। রাজ্যের প্রতি তাঁর কী অবদান তা জানাতে গিয়ে বললেন, কোষাগারে টাকা না থাকা সত্ত্বেও সরকারি কর্মীদের পে কমিশনের টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। ৬২,০০০ কোটি টাকা দেনা শোধ করার পরেও তাঁরা পে কমিশনের টাকা দিয়েছেন বলে জানালেন তিনি এবং বললেন, ‘এখন মাইনে এবং পেনশন কত বেড়ে গেছে।’ বললেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে আমরা প্রায় ৫২০টা ক্লাস্টার তৈরি করেছি, ৬৫টা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব তৈরি করেছি। এছাড়াও বাংলাশ্রী প্রকল্পে অনেক ক্ষুদ্র শিল্পকে ইনসেন্টিভ দেব ভবিষ্যতে। কর্মসাথী প্রকল্পে এক লক্ষ বেকার যুবক যুবতীকে ঋণ দেব আমরা।’
আরও পড়ুন: লোকসভায় কয়েকটা আসন পেয়ে লম্ফঝম্প করছে বিজেপি, কটাক্ষ মমতার
এরপর মমতা বললেন, রাজারহাটে নির্মীয়মাণ বেঙ্গল সিলিকন হাব এবং বানতলায় লেদার কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে যেখানে পাঁচ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। হাওড়া জেলাতেও নানান ক্লাস্টারে আরও পাঁচ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, সারাদেশে যখন বেকারত্বের হার ৪৫ শতাংশ বেড়ে গেছে সেখানে বাংলায় তা ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এরপর নেত্রীর জিজ্ঞাসা, ‘এটা নিয়ে গর্ব করবেন না আপনারা? শুধু মিথ্যে কথা বলবেন? শুধু মিথ্যে কথা বললে হবে৷’
আরও পড়ুন: ক্ষমতায় থাকলে রাজ্যের মানুষ সারাজীবন বিনামূল্যে রেশন পাবেন: মমতা
এরপরেই তফশিলি প্রসঙ্গে চলে আসেন মমতা। তাঁর দাবি, ২০১১ সালে বাংলায় তফশিলি সম্প্রদায়ের শংসাপত্র পেয়েছিলেন আড়াই লক্ষ মানুষ, আর আজ তা আট লক্ষ ছাড়িয়েছে। তিনি এও দাবি করলেন, সংখ্যালঘুদের জন্য সর্বাধিক স্কলারশিপ এদেশে পশ্চিমবঙ্গেই দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে মমতার বক্তব্য, ‘কেন্দ্র টাকা দেয় না, আমরা দিই। কারণ আমি চাই আমার সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা নিজের পায়ে দাঁড়াক, আমার তফশিলি ভাইবোনেরা নিজের পায়ে দাঁড়াক। ষাটোর্ধ্ব তফশিলি জাতি এবং উপজাতির মানুষের জন্য নতুন করে পেনশন দিয়েছেন সেকথাও জানালেন মমতা।’
সবুজ সাথী প্রকল্পে এক কোটি ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল, আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর না করার নির্দেশনামা জারি, সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের স্কলারশিপ, এ সবের খতিয়ান দিলেন তিনি। এও বললেন, সব হয়তো বলতে ভুলে যাচ্ছেন, এরকম আরও আছে। এছাড়াও জাগো প্রকল্প, ব্যাঙ্কের ঋণে সাবসিডি, আনন্দধারা প্রকল্প এ সবকিছুর উল্লেখ করলেন মমতা।
এক কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তৃণমূল নেত্রীর দাবি প্রসঙ্গে কটাক্ষ করেছেন বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ জানিয়েছেন, ‘‘মমতা বললেন এক কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন৷ এটা বিশ্বাস করা যায়? এক কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান? কোটি মানে তিনি কি বোঝেন? ক্লাস ফাইভের অঙ্ক৷ এক কোটি ৩৬ লক্ষ চাকরি হয়েছে৷ কেন বলছেন এসব কথা? আপনি বিধানসভায় যা বলেছেন, আজ ২১ জুলাই সমাবেশে তা বাড়িয়ে দিলেন? যে দিন, যখন যেমন খুশি বলছেন?’’