আলুর দাম থেকে করোনা টিকা, সরকারি সভামঞ্চে কেন্দ্রকে নিশানা মমতার

আলুর দাম থেকে করোনা টিকা, সরকারি সভামঞ্চে কেন্দ্রকে নিশানা মমতার

বাঁকুড়া: কখনও বললেন ‘আমাদের সরকারই থাকবে’, আবার কখনও আবেদন জানালেন, ‘বিজেপিকে একটি ভোটও নয়’৷ সোমবার বাঁকুড়ার খাতরার সরকতারি সভামঞ্চ থেকে একপ্রকার ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! সরকারি সভামঞ্চে আগাগোড়া বিজেপির বিরুদ্ধে রণংদেহী মেজাজে আক্রমণ শানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷ অত্যাবশকীয় পণ্য আইনের সংশোধন, করোনার মোকাবিলা ও টিকা, থেকে শুরু করে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির মতো ইস্যু ধরে ধরে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় সরব হলেন তিনি৷

বাঁকুড়ার সরকারি মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা চাষির থেকে চাল কিনি৷ সেই চাল আমরা খাদ্যসাথীতে রেশনের মাধ্যমে মানুষকে দিই৷ আমরা চাষির থেকে চাল কিনি ২৯ টাকায়, আর আমি মানুষকে চাল দিতাম ২ টাকায় আর এখন দিচ্ছি বিনামূল্যে৷ চাষির থেকে চাল কেনা হয় কারণ, চাষিকে যাতে অভাবী বিক্রি করতে না হয়৷’’ এরপরেই অত্যাবশকীয় পণ্য আইনের সংশোধন নিয়ে মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গত বাদল অধিবেশনে এই আইনের সংশোধনী পাস করিয়েছে মোদী সরককার৷ সেখানে আলু, পেঁয়াজ ডালের মতো অত্যবশকীয় খাদ্য সামগ্রি আইনের সংশোধন করে সেগুলির মজুদে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে৷ বিরোধী দল ও তাদের হাতে থাকা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের অভিযোগ, এরফলে ঘুরপথে কালোবাজারি এবং মূল্যবৃদ্ধি বাড়বে৷

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দিল্লির সরকার আলুর সরকার, সব আলু নিয়ে চলে যাবে। আপনারা আলুসিদ্ধ ভাত ও আর খেতে পারবেন না৷ এই আইন দিল্লি তৈরি করেছে৷ এদের আর একটি ভোটও নয়৷’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “কতগুলি কালোবাজারি, জোতদার এদের হাতে আইন করে দিয়েছে৷ চাষিদের সব কেড়ে নেবে, দলিতদের সব কেড়ে নেবে, তপশিলিদের সব কেড়ে নেবে, সংখ্যালঘুদের সব কেড়ে নেবে৷’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ক্ষমতায় এসে বলবে এনআরসি চাই৷ তোমার বাবার সার্টিফিকেট দাও, তোমার মায়ের সার্টিফিকেট দাও, ঠাকুমার সার্টিফিকেট দাও, ঠাকুরদাদার জন্মের সার্টিফিকেট দাও৷ আর তা নাহলে তুমি বাংলা থেকে বেরিয়ে যাও৷ এটাই এদের কাজ৷’’

এদিনের সভামঞ্চ থেকে করোনা ভাইরাস এবং টিকা নিয়েও কেন্দ্রকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘বিনা পয়সায় কোভিড চিকিৎসা করতে দেবে না৷ নাটক, ইঞ্জেকশন৷ বলবে এখন দেব, আর আসতে আসতে ৬ থেকে ৮ মাস হয়ে যাবে৷ আমরা যদি প্রতিটা কোভিডে দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারি, ইঞ্জেকশন আমরাও করতে পারি৷ নির্দেশিকা দাও, আর বলো কোথা থেকে নিতে হবে৷’’ শুধুমাত্র কোভিড নয়, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে এদিন উঠে এসেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার প্রসঙ্গও৷ তিনি বলেন, ‘‘তিনশোর বেশি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের ভাড়া আমরা দিয়েছি৷’’

বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের মতো জঙ্গলমহল নিয়ে চিন্তিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একদা এখানে ঘাসফুল ফুটলেও এখন শাল, পিয়ালের জঙ্গলে পদ্মের গন্ধ৷ লোকসভা নির্বাচনের বাঁকুড়ার দুটি আসনেই ফুটেছে পদ্মফুল৷ ফলে উদ্বেগ বেড়েছে শাসকের অন্দরে৷ আর সেই কারণেই বাঁকুড়া থেকেই এদিন কার্যত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করলেন তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 16 =