নেত্রী নিজেই শুভেন্দুকে ধরে রাখতে চান, কল্যাণ-মন্তব্যে কি আসে যায়!

শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ থেকে দলের অন্য অনেক নেতা-কর্মীরা বলতে শুরু করেছেন, যা হওয়ার স্পষ্ট হয়ে যাক। এই অবস্থায় দল করা কঠিন কাজ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় কল্যাণবাবুর মন্তব্য দলের পক্ষে বুমেরাং হতেই পারে।

তপন মল্লিক চৌধুরী : কয়েকদিন ধরে শুভেন্দুর আচরণে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে তিনি কি চাইছেন। কখনও তাঁর নিজের দলের নেতাদের কথায় মনে হচ্ছে যে শুভেন্দুর পক্ষে তৃণমূলে থাকা আর সম্ভব হবে না। অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থাকে প্রচার করা হচ্ছে বিজেপিতে শুভেন্দুর নাম লেখানোটা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু পরমুহূর্তেই সেই সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে শুভেন্দু তাঁর দল ও নেত্রীর নাম এমনভাবে উচ্চারণ করছেন, যাতে জল্পনা ভেঙে একটা কুয়াসাচ্ছন্ন পরিস্থিতি তইরি হচ্ছে। তাতে অবশ্য কাজের কাজ মানে এসপার ওসপার কিছু ঘটছে না।

তবে একটা বিষয় ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই যেন তৃণমূল কংগ্রেসের ভিতর দিকটায় দিদির দল আর দাদার দলে ভাগ হচ্ছে। ২০২১-এর নির্বাচনের তৃণমূলের এককাট্টা হওয়াটা যে জরুরি সেটা সে দলের নেতা কর্মীরা খুব ভাল করেই বোঝেন। কিন্তু যদি তাদের কাছেই প্রশ্ন রাখা হয় সেটা কতখানি হচ্ছে? উত্তরে তারা এ কথা মানতে হয়ত চাইবেন না যা তার উল্টো পথেই হাটছে দল এবং দাদার দল আর দিদির দলের ভাগ রেখাটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

একটা দলের ভিতরেই দাদার অনুগামীরা গত তিনমাস ধরে মূল দলের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে পরোক্ষভাবে দলের বিরুদ্ধে এবং দলহীন দলের হয়ে প্রচার চালাচ্ছে, জনসংযোগ করে যাচ্ছে। দলহীন হলেও জানতে বুঝতে কোনও অসুবিধা হচ্ছেনা তৃণমূল দল দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। মূল দলের মধ্যেএকটি আলাদা মঞ্চ ‘দাদার অনুগামী’ নামে শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। যাতে দলের নেত্রীশুভেন্দু অধিকারীকে তার যোগ্য মর্যাদা দিয়ে কাছে টেনে নেন, তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এতে একদিকে শুভেন্দুর সঙ্গে তিক্ততা যেমন বাড়ছে, দলের মধ্যে নির্বাচনের আগে প্রবল চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, সর্বোপরি বিজেপির জমি শক্ত হচ্ছে।

শুভেন্দুকে নিয়ে যে চাপ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে তা বুঝতে পেরেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ইতিমধ্যে দুজন সাংসদকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় ইতিবাচক দিক উঠে আসতে পারে পরিস্থিতি যখন এমনতখন আরেক সাংসদের কটুক্তি পালটা শুভেন্দুর জবাবে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর তর্জায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের পারদ নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। দু’জনের বাক্য বিনিময়ে রাজনীতির জলঘোলা হতে থাকে।

একটা কথা স্পষ্ট তৃণমূল দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন শুভেন্দুর মন রক্ষার্থে, তাঁকে বোঝাতে দলের দু’জন প্রবীণ নেতা তথা সাংসদকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তখন বোঝাই যাচ্ছে তিনি শুভেন্দুকে দলে ধরে রাখতে চান। এক্ষেত্রে দলের অন্য কোনও নেতা বা সাংসদের চাওয়া দিয়ে কিছু এসে যায় না। কিন্তু তা স্বত্বেওঠিক সেই সময় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত আক্রমণ কেবল অশোভন নয়, দলের পক্ষে ক্ষতিকারক।এটা ঘটনা সৌগত রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলার পর শুভেন্দুর কথা থেকে অন্তত রামনগরের মেগা শো-তে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি তৃণমূলেরই সদস্য। ওই সভায় শুভেন্দুকে আর নতুন করে বিস্ফোরক হতে দেখা যায়নি। তিনি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলেছেন। সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে তাড়িয়ে দেননি, তাছাড়া তিনি তাঁর দলও ছেড়া দেননি। বরং বলেছেন তিনি এখনও তৃণমূলেরই সদস্য।

তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়শুভেন্দুর ঔদ্ধত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসবামেদের মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। কল্যাণবাবুর স্মরণে থাকা উচিত সেই আন্দোলনে অধিকারী পরিবারের একটা বড় ভূমিকা ছিল। তাছাড়া নন্দীগ্রামের আন্দোলনের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর শুভেন্দু অধিকারীর নামই করা হয়। কল্যাণবাবুর এও স্মরণে রাখা দরকার; শুভেন্দু অধিকারী সেই নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়েই তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। এই কথাটা যদি তিনি নাও বুঝলেও বিষয়টি অনুভব করতে পারছেন ত্র নেত্রী স্বয়ং। এটা যে তাঁর দলের পক্ষে খুব একটা সুবিধার নয় সেটাও মনে করেছেন তিনি। তাই শুভেন্দুকে শান্ত করতে দলের দুই বর্ষীয়ান সাংসদকে পাঠিয়েছেন।

এই মুহূর্তে শুভেন্দুর অবস্থান কি, তা নিয়ে ধন্দে যেমন তাঁর অনুগামীরা তেমনি শুভেন্দুর অবস্থানের অপেক্ষায় আছে তৃণমূল। দল চাপে নির্বাচনের আগের মুহুর্তে, যাতে বিজেপি এর ফায়দা তুলতে না পারে। দলের অন্দরেও বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ থেকে দলের অন্য অনেক নেতা-কর্মীরা বলতে শুরু করেছেন, যা হওয়ার স্পষ্ট হয়ে যাক। এই অবস্থায় দল করা কঠিন কাজ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় কল্যাণবাবুর মন্তব্য দলের পক্ষে বুমেরাং হতেই পারে। -ফাইল ছবি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − two =