করোনা কালে বাড়ছে একাকীত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা

করোনা কালে বাড়ছে একাকীত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা

কলকাতা: শরীরের অসুখ করলে আমরা দেরি না করেই আগে ডাক্তারের কাছে ছুটি। কিংবা নিদেনপক্ষে ট্যাবলেট, মলম কিংবা সিরাপ কিনে এনে কাজ চালাই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর আমাদের আস্থা অগাধ, নিজেকে তার কাছেই সঁপে দিয়ে খানিক নিশ্চিন্ত হই। কিন্তু অসুখটা যদি মনের হয়? তখন আর তাকে তেমন পাত্তা দিই কই?

মনখারাপেরও কিন্তু চিকিৎসা হয়। স্টেথোস্কোপ আর ট্যাবলেটের গতানুগতিক ধারা থেকে মনের চিকিৎসা পদ্ধতি খানিক ভিন্ন। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের এই চিকিৎসার উপরেই এবার জোর দিচ্ছেন ডাক্তাররা। করোনা অতিমারীর আবহে যখন সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলাই ‘নিউ নর্মাল’, তখন সমীক্ষা বলছে শহরের নানা প্রান্তেই বিশেষত বয়স্কদের মধ্যে একাকীত্বের পরিমাণ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এমতাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটা স্বাভাবিক, আর তা নিয়েই এখন চিন্তিত চিকিৎসক মহল।

একাকীত্ব থেকেই আসে মানসিক অবসাদ। এই মানসিক অবসাদ কোনো প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধির চেয়ে কম নয়। বহুক্ষেত্রে দেখা গেছে একাকীত্বের শিকার হয়ে চরম হতাশাগ্রস্ত এবং অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন মানুষ। গত কয়েক মাসে কলকাতা শহরের বুকে এই ধরণের ঘটনা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। সোমবারই সামনে এসেছে দক্ষিণ কলকাতার এক অবসাদগ্রস্ত দম্পতির ঘটনা। নিজেদের একমাত্র কন্যার সঙ্গে সঙ্গে অতিমারী আবহে দীর্ঘদিন দেখা করতে না পেরে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। অবশেষে সোমবার হতাশা একাকীত্বের চরম পর্যায়ে পৌঁছে জীবনটাই শেষ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন তাঁরা। এই ঘটনা নতুন করে মানসিক অবসাদ বা ‘মনখারাপ’ ও তার চিকিৎসা নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে ডাক্তারদের।

করোনা কালে মানসিক অবসাদগ্রস্ত রোগীর সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেড়েছে। ফর্টিস হাসপাতালের মানসিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভাগের উপদেষ্টা সঞ্জয় গর্গ জানিয়েছেন, “এই সমস্যার সমাধান খুব একটা সহজ নয়। কিন্তু বয়স্ক মানুষ যাঁরা কাছের লোকেদের থেকে দূরে থাকছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা উচিত। নিজেকে কিছু একটার সঙ্গে যুক্ত রেখে শারীরিক ভাবে ব্যস্ত থাকা আবশ্যক।” উল্লেখ্য, ফর্টিস হাসপাতাল ইতিমধ্যে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা অবসাদগ্রস্ত রোগীদের জন্য পরিষেবা উন্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করেছে। আরো একাধিক হাসপাতাল তথা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতেও জোর দেওয়া হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। অতিমারী আবহে এই চিকিৎসা দিন দিন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *