পাঠশালায় সংক্রমণ ঠেকানোর পাঠ ও পরিকল্পনা

পাঠশালায় সংক্রমণ ঠেকানোর পাঠ ও পরিকল্পনা

 তন্ময় দে 

দিন কয়েক আগে সামাজিক মাধ‍্যমে একটা ভিডিও দেখলাম ,করোনার লকডাউন শেষে বিদেশের একটা স্কুলে পড়ুয়ারা এসেছে।গেটের মুখে ধুয়ে দেওয়া হচ্ছে জুতো।বাড়ি থেকে আনা মাস্ক ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে ভেতরে ঢুকে হাতশুদ্ধিতে হাত ধোয়ানো হয়ে গেলে স্কুলেই দেওয়া নতুন মাস্ক পরে নেওয়ার পর সারা শরীর স্বাস্থ‍্যসম্মত স‍্যানিটাইজার স্প্রে করে স্কুলের মূল কম্পাউণ্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ভারতে করোনার লকডাউন কতোদিন চলবে অনুমান করা কঠিন।তবে পরিস্থিতির সামান‍্য উন্নতি হলেই অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর পাশাপাশি স্কুল-কলেজ খোলার‌ও জোর দাবি উঠবে প্রয়োজনের কারণেই।কিন্তু এই অতিমারীর সময়ে করোনা পূর্ববর্তী চিরাচরিত ব‍্যবস্থা কর্ম কিংবা শিক্ষা পরিবেশে প্রভাব ফেলবেই।কর্মক্ষেত্রে নানারকম গাইড লাইন তৈরি হচ্ছে।

শিক্ষাঙ্গনেও নতুন পরিবেশ রচনায় নতুন ভাবনার বিক্ষিপ্ত আলোচনা শুরু হয়েছে।তবে সেসবের মধ‍্যে শিক্ষাবর্ষের ধারাবাহিকতা,পরীক্ষা,ফলপ্রকাশ ও অনলাইন পড়াশুনো নিয়েই বিভিন্ন মত উঠে আসলেও স্কুলের পরিবেশ কেমন হ‌ওয়া উচিত,তার আলাপ আলোচনা তেমন একটা শোনা যাচ্ছেনা।এখনও এই দেশ তথা রাজ‍্যের সিংহভাগ পড়ুয়ার একমাত্র গন্তব্য সরকারি বা সরকার অনূদিত কিম্বা পোষিত বিভিন্ন গোত্রের বিদ‍্যালয়।সেখানেই শিক্ষার্থীরা রোজ কমবেশি পাঁচঘন্টা পড়াশুনার জন‍্য থাকে,তারমধ‍্যে প্রায় আশি শতাংশ সময় তাদেরকে কোনও না কোনও লেখা, আঁকা, অংক কষায় ব‍্যস্ত থাকতে হয়।শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ অনুসারে এ রাজ‍্যের বহু স্থানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক অনুপাতে শিক্ষক সংখ‍্যায় ঘাটতি যেমন আছে,তেমনই ক্লাস চালাতে অধিক পড়ুয়াকে একটা কক্ষেই বসিয়ে পাঠ‍্যসূচি শেষ করার প্রক্রিয়াও চলে।শিক্ষা নিয়ামক কর্তৃপক্ষের নিয়মে একটা বেঞ্চে উচ্চশ্রেণিতে পাঠরত সর্বাধিক তিনজন পড়ুয়া বসতে পারে।বাস্তবের অভিজ্ঞতা কিন্তু আলাদা,প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি প্রায় সর্বত্রই প্রতি বেঞ্চে পাঁচ-ছয়জন পড়ুয়া বসে ।ফলে লকডাউনের মেয়াদ শেষে অধিকাংশ বিদ‍্যালয়ে সব পড়ুয়াকে নিয়ে শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে পঠনপাঠন চালানো  বাস্তবিক অসম্ভব।বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে এদেশের তথা রাজ‍্যের সিংহভাগ বিদ‍্যালয়ে পড়ুয়াদের জন‍্য বেঞ্চের সংখ‍্যা কম।   ভোটের কাজে বা নানা কারণে এই রাজ‍্যের বিভিন্ন  প্রান্তের সরকারি ,সরকার পোষিত বেশকিছু নামী-অনামী স্কুলে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করার অভিজ্ঞতায় জোরের সঙ্গেই বলতে পারি,পড়ুয়াদের বয়স ও উচ্চতার কথা মাথা রেখে কোথাও বেঞ্চ বা ক্লাসরুমগুলি তৈরি করা হয়নি।প্রাথমিক স্কুলে দু-একটা জায়গায় এগুলো মেনে চলা হলেও হাইস্কুলের ক্ষেত্রে শিশু শিক্ষার্থীদের কথা ভাবাই হয়নি। বসার জন‍্য বেঞ্চের‌ও নানা ব‍্যবস্থা। কোথাও শুধু সিট বেঞ্চটুকু আছে তো কোথাও সিট আর টপ বেঞ্চ আলাদা করা।যদিও হাইবেঞ্চের ব‍্যবহার বেশি।কিন্তু ডেস্ক সুবিধাযুক্ত বেঞ্চ বা ডেস্ক হাইবেঞ্চ আছে সব ক্লাসরুমে এমন সরকারি বা পোষিত স্কুলের সংখ‍্যা এই রাজ‍্যে এক শতাংশ হবে কিনা সন্দেহ।ডেস্কবেঞ্চের অভাবে ক্লাসে লিখতে দিলে পড়ুয়ারা অপরিস্কার মেঝেতেই নামিয়ে রাখে স্কুল ব‍্যাগ।

তার‌ওপর ঠাসাঠাসি করে একটি একটি বেঞ্চে বসা।পরপর দুটি বেঞ্চের মধ‍্যে ফাঁক‌ই রাখা যায়না সবাইকে ঠাঁই দিতে।ফলে লকডাউনের পর স্কুল খুললেও ঠাসাঠাসি ক্লাসরুম ,ডেস্কবেঞ্চের অভাব সংক্রমণ বিস্তারে সহায়ক হতেই পারে।সর্বশিক্ষা মিশন পরবর্তী সময়ে নানা প্রকল্পে স্কুলগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ বেশ বেড়ে যাওয়ায় ক্লাসরুম বেঞ্চ ইত‍্যাদি সংখ‍্যায় বাড়লেও  অপরিকল্পিত নির্মাণে তার সদ্ব্যবহার সবক্ষেত্রে হচ্ছে না।শিক্ষা কর্তাদের ভাবনা আর স্কুল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাব‌ই এর নেপথ‍্যে।ব‍্যক্তি অভিজ্ঞতা ও রাজ‍্যের বিভিন্ন জেলার পরিচিত শিক্ষক সমাজের দেওয়া তথ‍্যে এই রাজ‍্যের স্কুলগুলোর শৌচালয় ও পানীয় জলের ব‍্যবস্থাও ভালো নয়।পশ্চিম দিকের জেলাগুলির বেশিরভাগ ব্লকে গ্রীষ্মের সময় জলসংকট এতোটাই থাকে যে ,রানিং ওয়াটার বিষয়টা সেইসব জায়গায় সোনার পাথরবাটি।ফলে বারবার সাবান দিয়ে জলে হাত ধো‌ওয়ার নিয়ম স্কুল খুললে কতোটা সম্ভব হবে প্রশ্ন থাকছেই।আজও এই রাজ‍্যের স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও স্থায়ী সাফাইকর্মী নেই।অস্থায়ী ভিত্তিতে বড়ো স্কুলগুলো তার নানা ধরনের ফাণ্ড থেকে সাফাইকর্মীর খরচ বহন করতে পারে,কিন্তু ছাত্রসংখ‍্যা কম এমন বিদ‍্যালয়গুলি সে ব‍্যবস্থা কদাচিৎ খুব কষ্টে করে থাকে‌।অথচ প্রতিদিন এক একটি বিদ‍্যালয়ে শত শত-হাজার হাজার পড়ুয়া ,সব শিক্ষক শৌচালয়(প্রসাবাগার,পায়খানা) ব‍্যবহার করেন সারাদিনের বেশ কিছু সময়।ফলে অতি দ্রুত অপরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠে শৌচালয়।কিন্তু স্থায়ী পর্যাপ্ত সাফাইকর্মীর অভাবে ওই নোংরা হয়ে থাকা শৌচালয়‌ই বারেবারে ব‍্যবহার করতে বাধ‍্য হন ছাত্র থেকে পড়ুয়া।শিক্ষার অধিকার আইনে  পরিচ্ছন্ন শৌচালয় কিংবা নিরাপদ  পরিশ্রুত পানীয় জলের ব‍্যবহার সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, কিছু ব‍্যয় বরাদ্দের ফলে সারা দেশের সঙ্গে এই রাজ‍্যেও এই দুটি ক্ষেত্রে কিছু কাজ হয়েছে,অন্তত ভারতের পি আই বি-এর ওয়েবসাইট সে কথাই জোরের সঙ্গে বলছে।কিন্তু বাস্তবে দেখেছি, স্বচ্ছ ভারত অথবা নির্মল বাংলা প্রকল্পে প্রতিবছর স্কুলগুলো  এই বিষয়ে ইতিবাচক তথ‍্য‌ দিলেও অপরিচ্ছন্ন শৌচালয়, অপেয় পানীয় জলের পরিকাঠামো এক‌ইরকম থাকে।অনেক স্কুলে মেয়েদের শৌচালয়গুলি কল্পিত নরকের চেহারাকেও হার মানাবে।
 

বহু স্কুলে ডাস্টবিন নেই,থাকলেও তার যথাযথ ব‍্যবহারে ছাত্র-শিক্ষক উভয়েরই অনীহা।বিভিন্ন প্রকল্পের কারণে স্কুলে আলাদা রান্নাঘর তৈরি হলেও তার নির্মাণ নকশায় ত্রুটিতে স্কুল চত্বরে রান্নার সময় রান্নার ধোঁয়ায় পঠনপাঠন দুষ্কর হয়ে ওঠে।রন্ধন কর্মীদের মধ‍্যেও সচেতনতার অভাবে রান্না করা-পরিবেশন করার ক্ষেত্রে সংক্রমণ সম্ভাবনা থেকেই যায়।আজও অধিকাংশ স্কুলগুলোতে মিড ডে মিল খাওয়ার আলাদা ঘর নেই।কোথাও ঘর থাকলেও  অপরিচ্ছন্ন মেঝেতেই খাওয়া চলে।টিফিনের সময় দুপুরের খাবার খাওয়ার আগে সব  শিক্ষার্থীদের সাবানে হাত ধোওয়ার আবশ‍্যিক ব‍্যবস্থাটুকু সরকার চাইলেও আজও দেশের বা রাজ‍্যের বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ সুনিশ্চিত করতে পারেনি।কোথাও ব‍্যবস্থা থাকলেও তদারকি নেই।এতোক্ষণ ধরে আলোচিত ত্রুটি-বিচ‍্যুতির  ব‍্যতিক্রম অবশ‍্য‌ই আছে।বেশকিছু সরকারি বা পোষিত বিদ‍্যালয়ের শিক্ষার সার্বিক পরিকাঠামো পরিবেশ কাঙ্খিত মানের থেকেও ভাল।কিন্তু বাকিদের অব‍্যবস্থার ক্রম বজায় আছে বলেই তাদের উন্নত পরিকাঠামো ব‍্যতিক্রম বলে চিহ্নিত।

দেশের বিদ‍্যালয় শিক্ষা ব‍্যবস্থা আজও মূলত বিদ‍্যালয়কেন্দ্রিক ও সরকারি সাহায‍্যপুষ্ট।আর এই বিদ‍্যালয়গুলিতেই পড়াশুনা করছে আমাদের দেশের আগামী প্রজন্ম। কিন্তু আজকের দিন পর্যন্ত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার বা পরিকাঠামো পরিবর্তনে কোনও ব‍্যয়বরাদ্দের ঘোষণা করতে বা পরিকল্পনার কথা বলতে কোথাও কাউকে দেখলাম না,শুধু অনলাইন শিক্ষা নিয়ে কিছু কর্মকাণ্ডের কথা বলা ছাড়া।

লকডাউনের মেয়াদ পেরিয়ে এসেছি অনেকদিন। এ দেশের কোথাও কোথাও স্কুল-কলেজ কমবেশি খুলেছে। আজ অথবা আগামীতে দেশের সব স্কুল‌ই পুরোপুরি খুলবে।হয়তো করোনা আবহে থার্মাল গান,মাস্ক ব‍্যবহারের নির্দেশ থাকবে। কম সংখ‍্যক পড়ুয়া নিয়েও স্কুল খোলার কথাও বলা হতে পারে।কিন্তু এমনিতেই প্রায় বছর ঘুরতে চলল স্কুল বন্ধ।অনলাইনের পড়াশুনা সরকারি স্কুলগুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের কতোটা সাহায‍্য করল,স্কুল খোলার পর বোঝা যাবে।যদিও টিভির ক্লাসরুম এবং কম্পিউটার,মোবাইল  পর্দায় ভিডিও ইন্টার‌অ্যাকটিভ ক্লাসরুমের মধ্যে বেশ কিছু তফাৎ আছে।ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে অনলাইন শিক্ষা ব‍্যবস্থা হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বেশি করে কার্যকর করা হবে,সংস্কার-প্রগতি – আধুনিক – যুগোপযোগী এই সব শব্দবন্ধ ব‍্যবহার করে।বছর দুয়েক আগে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর‌‌ও তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।এই লকডাউনের দিনে অনলাইন পড়াশুনার মতো আপাতত বিকল্প ব‍্যবস্থাটি প্রয়োগের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আগামীর  পরিকল্পনা ত্রুটিমুক্ত করতে সহায়ক হবে।

তবে এই মুহূর্তে স্কুল খুললে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রচলিত ব‍্যবস্থা মাস্ক,সামাজিক বা দৈহিক দূরত্ব ইত‍্যাদি বিধি যেমন মেনে চলতে হবে,শিক্ষক সমাজের যেমন সচেতন হতে হবে।তেমনই নজর দেওয়া দরকার প্রতিটা স্কুলে পড়ুয়াদের বসার ব‍্যবস্থা,ডেস্ক সুবিধাযুক্ত বেঞ্চের আবশ‍্যিক ব‍্যবহার,হাত ধোয়ার সাবান,পরিশুদ্ধ জলের নিশ্চয়তা বা সরকারি ব‍্যবস্থায় স‍্যানিটাইজার বা হ‍্যান্ড রাব পর্যাপ্ত পরিমাণে স্কুলগুলোতে পৌঁছে দেওয়া।পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের পাশাপাশি প্রত‍্যেক বিদ‍্যালয়ে পূর্ণ সময়ের (স্থায়ী/চুক্তিভিত্তিক) সাফাইকর্মীর বন্দোবস্ত সরকারি অথবা স্থানীয় প্রশাসনের উদ‍্যোগে  সুনিশ্চিত করা।মিড ডে মিলে রান্না করা খাবার দিতে হলে তার‌ও সুবন্দোবস্ত  সরকারকেই  করতে হবে।সব ছাত্রকে নিয়ে স্কুল করতে হলে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে সাময়িক ভিত্তিতে চুক্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করা যেতে পারে ।শ্রেণিকক্ষ কম থাকলে বিদ‍্যালয় চত্বরের আশেপাশে ভাড়ায় ঘর নিয়ে কিছুদিন ক্লাস চালানো যেতে পারে।

এদেশের সরকারি শিক্ষায় পরিকাঠামোর উন্নয়নের গ্রাফচিত্র ধীরগতির হলেও  এতোদিনের এই প্রয়োজনগুলো সেইসময়  প্রতীক্ষা শব্দের আশ্রয়ে থাকায় তা  সার্বিক সংকট বলে চিহ্নিত হয়নি।কিন্তু করোনার মতো সংকট মোকাবিলায় রোজকার স্কুল চালাতে গেলে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন আশু দরকার।এক্ষেত্রে প্রয়োজন অর্থ বরাদ্দেরও।

কোথা থেকে সে অর্থ আসবে কিভাবে বরাদ্দ হবে সে ভাবনাটুকু অর্থশাস্ত্রীরা ভাববেন।লেখার শুরুতে বিদেশের একটা স্কুলের কথা লিখেছিলাম।আমাদের দেশে অতোসব আশা করাটা হয়তো বাড়াবাড়ি কিন্তু পরিকাঠামোগত এইসব চাহিদার কথা  প্লাসিবো এফেক্টের ভরসায়,হার্ড ইমিউনিটির তত্ত্ব টেনে এনে কিম্বা  কবির লেখা ‘মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারী নিয়ে ঘর করি’ বলে দেশের নেতা – মন্ত্রী আমলারা এড়িয়ে যেতে পারেন ঠিক‌ই।কিন্তু সংক্রমণ ছড়ানোর প্রেক্ষাপট তাতে বিস্তৃত হবে।দেশের আগামী প্রজন্মের সুরক্ষার জন‍্য বিদ্যালয় শিক্ষাক্ষেত্রে যথাযথ পরিকাঠামো প্রস্তুত ও সংক্রমণ এড়াতে  সার্বিক ব‍্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশের ভবিষ‍্যতের জন‍্য তা ভয়ানক হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 3 =