করোনাকালেই কেন দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট বামেদের

করোনাকালেই কেন দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট বামেদের

তপন মল্লিক চৌধুরী : করোনা সংক্রমণযে রোধ করা গিয়েছে এমনটা নয়। করোনা সংকটে দেশজুড়েমানুষ এখনও জেরবার হচ্ছেন। বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেসাধারন মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আরও একটা বনধ। স্বভাবতই এই বনধকে ঘিরে প্রশ্নও তুলেছেনঅনেক মানুষ। কারণ বনধ মানে একটি কর্মনাশা দিন। বনধের জেরে জনজীবনের স্বাভাবিকছন্দই যে কেবলতাল হারাবে তা নয়, সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে খেটে খাওয়া মানুষ। যারা দিন আনে দিন খায়। কারণ একদিন কাজ বন্ধ মানে সেদিনের মজুরি মিলবে না। সব জেনে বুঝেও কেন তাহলে বামেরা এই বনধের ডাক দিয়েছে?

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম প্রায় প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। তাছাড়া কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারেরনীতি হয়ে উঠেছে জনবিরোধী। তারইপ্রতিবাদে এদিন সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বামেরা। রাজনইতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বামেরা যে মেহনতী মানুষের দল, সাধারণ মানুষের সামনে আরও একবার তার প্রমান তুলে ধরতেই তারাএকইসঙ্গে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের নীতির বিরুদ্ধে এই বনধের ডাক দিয়েছে। তবে কই তারা নতুন করে ধর্মঘটের রাজনীতিতে পা বাড়াতে চলেছে, নাকি তাদের লড়াই যে জারি আছে তার প্রমান রাখতে চাইছে?

দেশজুড়ে বামেদের ডাকা এই সাধারণ এই ধর্মঘটে রাজ্যের হোসিয়ারি শ্রমিকের মতো অনেকেই সামিল ছিল। তার থেকে মনে হতেই পারে, খুব ছোট আকারে হলেও একটা জনমত বনধে সমর্থন দিয়েছে। তবে তা স্পষ্ট নয়। সে কারনে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এও মনে করছেন, জাতীয় বা রাজ্য রাজনীতিতে বামেদের অস্তিত্ব এখনও যে রয়েছে তা জানান দেওয়ার একটা সহজ পথ হিসাবেই বনধকে বেছে নিয়েছে বামেরা। তাছাড়া বাম রাজনীতির প্রেক্ষিত বুঝলেও দেখা বনধ চিরকালই বামেদের আন্দোলনের একটা বড় হাতিয়ার ছিল। কারণ বনধের মধ্যে দিয়েই সাধারণ মানুষের কাছে সহজে নিজেদের লড়াই আন্দোলনের বার্তাকে পৌছে দেওয়া যায়। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে হয়ত সে কারণেই গত কয়েক বছরে অধিকাংশ জায়গা থেকে বামেদের ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর থেকে বামেরা তাদের অস্তিত্ব জানান দিতেই বছরে অন্তত দু-একটা বনধের ডাক দিয়ে আসছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা একটাবড়ধরণেরসফলতালাভকরেছে।তাদেরসেই সাফল্য দেশজুড়ে তাদের শক্তি বা ক্ষমতাকে নতুন করে প্রমানের একটা তাগিদ জুগিয়েছে। এরপর যে তারা আবার নতুন করে গাঝাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে এটাই সবাভাবিক। মানুষের জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামবৃদ্ধিকে ইস্যু করার অর্থ সাধারণ মানুষের মন জয় করা। এ ধরণের বিষয় নিয়ে ডাকা বনধে সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকবেই সে কথা বামেরা ভালই জানেন।তাছাড়া যে ইস্যুকে সামনে রেখে বামেরাবনধ ডেকেছিল সেই ইস্যুকে সাধারণভাবে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলও পুরোপুরি বিরোধিতা যে করতে পারবে না তাও ভাল জানেন বামেরা। ফলে করোনাকালে বনছ ডেকেও সহজে নিজেদের লড়াই ও আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটা সুযোগ নিতে চেয়েছিল বামেরা। পাশাপাশি বামেদের লড়াই বা আন্দোলন যে মানুষের পাশে থাকার সেই কথাটাও বামেরা রাজনৈতিকভাবে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে।

এ রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বনধ সেদিক থেকে সাংগঠনিক দিক থেকে বামেদের শক্তি পরীক্ষা। ইতিমধ্যে তারা কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের বেসরকারিকরণ পদক্ষেপের বিরেধিতায় খনি ও পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রে হরতাল করে সফল হয়েছিল। সেখানেও তাদের সঙ্গ দিয়েছিলকংগ্রেস। যদিও সাধারণ বনধ সম্পূর্নতই একটি অন্য লড়াই বা আন্দোলন।তার প্রকৃতি পরিস্থিতিও আলাদা। তবে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অসম ও তামিলনাডুর বিধানসভা ভোটের আগে বামেদের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট নিজেদের শক্তি প্রমান করার একটা পথ।

গোঁড়া থেকেই বামেদের ডাকা বনধের বিরোধিতা করা শাসক দল তৃণমূল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে বনধ করা যাবে না। কেন্দ্রের জনবিরোধী ইস্যুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে তারা সমর্থন করলেও বনধকে তারা সমর্থন জানায় নি। যে কারণে আজকের বনধ রুখতে রাজ্য সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছিল। অন্যদিকে সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বনধ সফল করতে পথে নামে বামেরা। পাশাপাশি বামেদের বনধের দিনই ছিল মাঝেরহাট সেতু দ্রুত চালু করার দাবিতে তারাতলা মোড় থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত বিজেপিরছিলমিছিল। বিজেপির সেই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় তারাতলায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − 2 =