কলকাতা: সাতাত্তর বছরের এক বৃদ্ধ। অশক্ত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বলেছেন, নন্দীগ্রামে শ্মশানের নীরবতা। দশ বছরে বাংলায় কোনও শিল্প আসেনি। বুদ্ধদেবের কথা একশো শতাংশ সত্য। ২০১১ সাল থেকেই বাংলা নৈরাজ্যের অন্ধকারে ডুবে যায়। তার সরকার চিন্তা করেছিল, ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত।’ কিন্তু সে ভবিষ্যতের আলো দেখেনি রাজ্যবাসী। ক্ষমতা হারানোর ১০ বছর পর বাম রাজনীতি যখন অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছে, তাতে আবার প্রাণ ফেরাতে অশক্ত শরীরেও রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেছেন বুদ্ধদেব। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, কেন বামফ্রন্টের নতুন মুখ প্রচারে আলো ছড়াতে পারছে না। ব্রিগেড থেকে নির্বাচন – কেন বুদ্ধদেবকে হাজির করতে হয়।
আরও পড়ুন- এখনও অধীর অপেক্ষা, অঙ্ক কষেই কি ‘খেলা’য় নেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ড!
প্রশ্নের মুখে বামফ্রন্টের গত ১০ বছরের রাজনীতিও। একটা সময় শুনতে পাওয়া গিয়েছিল – বিরোধী বামফ্রন্ট কিন্তু ভয়ঙ্কর। কিন্তু তা চোখে দেখা যায়নি। ২০১১ – ২০১৬ ইস্যুভিত্তিক বিরোধীতা ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিন্তায় ফেলতে পারেনি বামেরা। রাস্তায় নেমে তেমন অন্দোলন বা সরকার টলিয়ে দেওয়ার মত আন্দোলন তেমন দেখা যায়নি। প্রথম সারির নেতাদেরও চুপচাপ হয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। বিশেষত, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত বা সিনিয়ার বামমন্ত্রীরা রাস্তায় নেমে আসেননি। তারা হয়তো হারের আকষ্মিকতা থেকে তখনও বেরিয়ে আসতে পারেননি। ২০১৬ পর থেকে মমতা বিরোধী বাম আন্দোলন কিছুটা বাড়ে। কিন্তু সংখ্যায় বাড়লেও তার তীব্রতা তেমন ছিল না। ততদিন বেশি কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বামফ্রন্ট একা নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল। কংগ্রেসের সঙ্গে বিভিন্ন নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়েও পার্টির অভ্যন্তরে আবং শরিকদের সঙ্গে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, বাম আন্দোলন তীব্রতর হয়েছে। নবান্ন অভিযান থেকে করোনাকালে কমিউনিটি কিচেন জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আরও পড়ুন- উন্নয়ন বনাম ধর্মীয় বিভাজন! নন্দীগ্রামে পাল্লা কোন দিকে ভারি?
কিন্তু কোথাও যেন জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মত নেতৃত্বের অভাব প্রকট হয়ছে। বাংলার রাজনীতিতে মুখ কেন এত প্রাসঙ্গিক ? প্রশ্ন উঠতে পারে। উত্তরটি শুধু বাংলার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। কারণ, মুখ বিহীন ভারতীয় রাজনীতি সম্ভব নয়। কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শের গতিধারা হয়ে ভারতীয় জনতা তথা ভোটার সরকার নির্বাচিত করেছে, তা আংশিক ভাবে সত্য। কোনও উচ্চ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর ভরসা করেই ভোটবাক্সে সুনামি উঠেছে, তা-ই বরং বৃহৎ সত্য। ইন্দিরা থেকে নরেন্দ্র মোদি – এই ঐতিহ্য চলছেই। বাংলার রাজনীতি তার থেকে পৃথক নয়। ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সব থেকে বড় পরিবর্তন আসে। বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেন জ্যোতি বসু। বামফ্রন্ট যতই যুক্তি দিক যে, বঙ্গবাসী কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী হয়েই বারবার বাম সরকারকে ফিরিয়ে এনেছে এবং এতে কোনও ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নেই – তা অনেকাংশেই বাস্তব চিত্র নয়। জ্যোতিবাবুর দিকে তাকিয়ে মানুষ বামফ্রন্টকে ভোট দিয়েছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়ার ১০ বছরের মধ্যেই বামফ্রন্টকে রাইটার্স ছাড়তে হয়েছে। সেক্ষেত্রে গত দশ বছর বুদ্ধ ভট্টাচার্যের বিকল্প মুখ তৈরি করতে পারেনি বামফ্রন্ট , তা আবার প্রমাণ হল।
আরও পড়ুন- দেশ ‘বিরোধীশূন্য’ করতেই কি মমতাকে পরাস্ত করার জেদ বিজেপির?