জীবন বাজি রেখে জীবিকার খোঁজ! গ্রাম উজাড় করে ফের শহরে শ্রমিকরা

জীবন বাজি রেখে জীবিকার খোঁজ! গ্রাম উজাড় করে ফের শহরে শ্রমিকরা

203635a97d47223ff94b975976f9c937

ভোপাল: পেটের দায়ে গ্রাম ছেড়ে বড় শহরের দিকে রওনা দিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ৷ করোনা আতঙ্ক সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা কাজের খোঁজে শহরের দিকে চলেছেন৷ তবে গ্রাম ছাড়া শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সংখ্যা তাঁদের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার৷

রিপোর্ট অনুযায়ী, দিওয়ালির পরবর্তী সময়ে এই পরিযান আরও বেড়েছে। এর প্রধানত তিনটি কারণ হতে পারে। প্রথমত, কর্মসংস্থানের সুযোগের চাহিদা বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত, গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে কম বৃষ্টি হওয়ার ফলে খারিফ শস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। তৃতীয়ত, ভালো রবি ফসল উৎপাদনের কোনও আশা না থাকা। সমাজকর্মীদের মতে, লকডাউনে শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসা শ্রমিকদের প্রায় ৪০ শতাংশ আবার ফিরে গিয়েছে দিল্লি, আগ্রা, ইন্দোর, গাজিয়াবাদ, চন্ডীগড়ের মতো শহরগুলিতে। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয়, এসব বড় শহরগুলিতে প্রত্যেকদিন বাড়তে থাকা করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও শ্রমিকদের শহরে ফেরা থামাতে পারছে না।

বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও গ্রাম যেমন, উদয়পুরা, বিহারীখেড়া, তিকমগড়, ছতড়পুর, পান্না, নিওয়ারি, গত কয়েক মাসে সাক্ষী থেকেছে গ্রামের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ শ্রমিকের পরিযানের। বিহারীখেড়া গ্রামের বাসিন্দা, ৮৩ বছর বয়সী সতু আহিরওয়াড় জানিয়েছেন, ‘‘আমার তিন ছেলে। তিনজনেই ইন্দোরের উদ্দ্যেশে তাদের পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়েছে দিওয়ালির ঠিক পরেই। এই গ্রামে বিনা চাকরি আর বিনা রোজগারে একদম সংসার চলছে না। মা কিছু সঞ্চয় ছিল তাও খরচ হয়ে গিয়েছে।’’ উদয়পুরা গ্রামের বাসিন্দা, কালু আহিড়ওয়ার জানিয়েছেন, ‘‘আমার ছেলে ঝলকান এখানে প্রায় ৪ মাস ছিল। তারপর দিওয়ালির পরেই ও দিল্লি চলে গিয়েছে‌৷ সেখানে কাজের অসুবিধা হলে ও গুরুগ্রামে চলে যাবে বলে ফোনে জানিয়েছে ঝলকান৷’’

উদয়পুরা গ্রামের প্রাক্তন গ্রামপ্রধান বিনোদ যাদব জানিয়েছেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্রামেই রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য এমএনআরইজিএ রয়েছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। বড় শহরে যেখানে শ্রমিকরা প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করতে পারে, এখানে তারা পায় দিনে মাত্র ১৯০ টাকা। তাও সবসময় কাজ থাকে না।” তিনি আরো বলেছেন, “আমাদের গ্রামের নদী শীতকালে শুকিয়ে যায়। এই নদীতে যদি বাঁধ নির্মাণ করা যায়, তাহলে কৃষিকাজ অনেক শ্রমিককে কর্মসংস্থান জোগাতে পারবে।’’

খাজুরাহো রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মান সিং মীনা জানিয়েছেন, ‘‘দিওয়ালির পর থেকে খাজুরাহো-দিল্লি-কুরুক্ষেত্র এক্সপ্রেস বুন্দেলখণ্ড থেকে শুধুই শ্রমিকদের নিয়ে শহরে আসছে। ৯৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে শ্রমিকদের জন্যই। এই ট্রেনের জন্য দিনে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টিকিট বিক্রি হচ্ছে।’’ সমাজকর্মী জ্ঞ্যানেন্দ্র তিওয়ারি জানিয়েছেন, ‘‘সরকার থেকে প্রত্যেক বছরই বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে শ্রমিকদের শহরে চলে যাওয়াটা বুন্দেলখণ্ডের একটা বড় সমস্যা। ইতিমধ্যেই গোটা অঞ্চলের ৫০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক শহরে চলে গিয়েছে। আর সংখ্যাটা প্রত্যেক দিন বেড়েই চলেছে।’’ সাগর জেলার ডিভিশানাল কমিশনার মুকেশ কুমার জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে পরিযায়ী শ্রমিকদের চাকরি দেওয়ার জন্য। এমএনআরইজিএ এবং অন্যান্য সরকারি পরিকল্পনার আওতায় কাজ দেওয়া হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব এই বিষয়ে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *