কলকাতা: প্রবল আর্থিক চাপ নিয়েও সারদার সমস্ত টাকা ফেরালেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে একটি পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘শুধু বেতন নয়, বেনজিরভাবে সারদার বিজ্ঞাপনের টাকাও স্বেচ্ছায় ফেরাচ্ছি।’’ তিনি এদিন অন্যান্য সমস্ত মিডিয়া যারা চিটফান্ডের খবর করে তাদেরও চিটফান্ড থেকে আসা সব টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করেছেন৷ পাশাপাশি সারদার ফেরত দেওয়া টাকা নিয়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ‘মহাগুরু’ মিঠুন চক্রবর্তীকেও কটাক্ষ করেছেন কুণাল৷
গত দু’সপ্তাহের মধ্যে দু’বার তাঁকে সারদাকাণ্ডে জেরার জন্য তলব করে ইডি৷ তারপরেই তিনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে সারদার থেকে নেওয়া বেতন ও বিজ্ঞাপনের টাকাও তুলে দেন৷ বুধবার কুণাল মোট ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছেন ইডিকে৷ তবে তিনি শেষ পর্যন্ত সারদা থেকে তাঁর আয়ের প্রতিটি টাকাকে বৈধ বলে দাবি করে গিয়েছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘সারদা থেকে আমার আয়ের প্রতিটি টাকাই বৈধ৷ নিয়োগপত্র, ব্যাঙ্ক ও আয়করে প্রতিষ্ঠিত৷ রীতিমতো পেশাদারী কাজ করে পাওয়া৷’’ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ আরও জানিয়েছেন, ‘‘সারদার এই টাকা ফেরতের কোনও দায় আমার ছিল না৷ তদন্তকারী সংস্থা অনেকের সম্পত্তি নিলেও আমার কোনও সম্পত্তির দখল করেনি৷ তদন্তের রুটিন নিয়ম অনুযায়ী সারদার চেক ঢোকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নো ডেবিট করে রেখেছে শুধু৷’’
কুণাল জানিয়েছেন, ‘‘২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি কোম্পানিকে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ দিয়েছিলাম৷ কোম্পানি আর্থিক সংকটে রয়েছে দেখে একজন সিনিয়র কর্মচারী হিসেবে আমি এই কাজ করেছিলাম৷ তখনও সারদার বিষয়টি সামনে আসেনি।’’ তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি সারদাকে বিজ্ঞাপন এনে দেওয়ার জন্য নেওয়া টাকা ইডিকে ফেরত দিচ্ছেন, এমনটাই দাবি করেছেন কুণাল৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘কেউ এত টাকার বিজ্ঞাপন ফেরত দেয়নি৷ হয়ত দেওয়ার কথাও নয়৷ কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত ছিল দেব৷ এক কণাও রাখব না৷ সারদার বিতর্কিত একটি পয়সাও নিয়ে চলব না৷’’
তবে দিয়ে দেওয়া বললেই তো আর দিয়ে দেওয়া নয়। দীর্ঘদিন জেলে বন্দী থাকার ফলে সঠিক পথে টাকা জোগাড় করতে পারেননি কুনাল। দাবি করেছেন, শেষ পর্যন্ত পারিবারিক বসতবাটি বন্ধক রেখে, মায়ের চুড়ি বিক্রি করে এবং শুভানুধ্যায়ী থেকে ঋণ নিয়ে সারদার টাকা ফিরিয়েছেন তিনি। সারদার এত বড় অঙ্কের টাকা ফিরিয়ে দিয়ে কি চাপ মুক্ত হলেন কুনাল? বললেন, “আমি সারদায় দায়মুক্ত জীবনের আগেও ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব। শুধুমাত্র এই বিতর্কটা মেটাতে চেয়েছিলাম।”
এদিকে সারদার টাকা ফিরিয়েছেন সদ্য বিজেপিতে নাম লেখানো বাঙালির মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তীও। কিন্তু ‘মিঠুনদা’কে প্রবল কটাক্ষ করে কুণাল বলেছেন, ‘‘আমি ২০১৩ সালে মিডিয়া সংকটের সময় থেকে সারদাকে টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছি৷ কিন্তু মিঠুনদা তখন কোথায়? তখন দিলে কোনও মিডিয়াকে হয়ত বাঁচানো যেত। যখন রাজ্য সরকারের তদন্ত চলছিল, তখন তৃণমূলের সাংসদ মিঠুনদা কোথায়? যখন মামলায় ইডি, সিবিআই-এর চাপ বাড়ল তখন সারদার টাকা ফেরানোর কথা মনে হল মিঠুনদার? আর সব টাকাই কি ফিরিয়ে দিয়েছেন মিঠুনদা? আমি ঠিক জানি না৷’’